নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৩ মার্চ, ২০১৯
ডাকসু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং বিতর্কিত করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দুষছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, নীল প্যানেলের কিছু অত্যুৎসাহী শিক্ষকরাই এই পরিস্থিতি বিতর্কিত ও উত্তপ্ত করেছে এবং নির্বাচনকে বিতর্কিত করেছে। সরকারকে খুশির করতে গিয়ে তারা উল্টো সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে।
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন, ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। ভোটের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ উদ্দীপনা ফুটে উঠেছে। কিছু শিক্ষকের অদক্ষতা ও অযাচিত কিছু পদক্ষেপের কারণে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঢাবি প্রশাসন পরিস্থিতি সঠিকভাবে হ্যান্ডেল করতে পারেনি।
আওয়ামী লীগের আরেক নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক অতি উৎসাহী হয়েছেন। তারা অতি আওয়ামী লীগার হয়ে নির্বাচনকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, They were more catholic than the Pope. এই নির্বাচনে ছাত্রলীগের যে অবস্থান তাতে ছাত্রলীগ এমনিই নির্বাচনে জিততো। কিন্তু শিক্ষকরা নির্বাচন পরিচালনায় তাদের যোগ্যতা সঠিকভাবে প্রমাণ করতে পারেননি।
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় আরেক নেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের অনেকগুলো ভুল-ভ্রান্তি ছিল। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, কুয়েত মৈত্রী হলে টিক চিহ্ন দেয়া যে ব্যালট পেপার ছিল সেগুলো ছিল বাস্তবে ভুয়া। কিন্তু সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেখানে গিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যালট পেপারগুলো যে ভুয়া, সেটি তারা তাৎক্ষনিকভাবে বলতে পারেনি। কোনটা আসল আর কোনটা ভুয়া ব্যালট পেপার ছিলো সেটা নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বোঝা উচিৎ ছিলো। তারা যদি গণমাধ্যমকে বলতো যে, ব্যালটপেপারগুলো আসল নয়। তাহলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতো। সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে প্রভোস্টকে অব্যাহতি দেয়ায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু পরিস্থিতি আরও ঠাণ্ডা মাথায় মোকাবিলা করা যেতো বলে তিনি বলেন।
আওয়ামী লীগের আরেক সিনিয়র নেতা মোহাম্মদ নাসিম মনে করছেন, ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের কিছু অনভিজ্ঞতা ও অতি উৎসাহের কারণে নির্বাচন নিয়ে কিছু কিছু প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা এটা না করলেও পারতেন। এটা করার ফলে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের কোন উপকার হয়নি। বরং ক্ষতি হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও শিক্ষকদের এসব তৎপরতায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করছেন, যেভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা উচিৎ ছিল শিক্ষকরা সেভাবে পরিচালনা করতে পারেননি। শুধু আওয়ামী লীগই নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী পন্থী নীল দলের অনেক শিক্ষক ও সাবেক উপাচার্যরা মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অপরিপক্কতা, অতি উৎসাহ এবং অন্ধ দলীয় মনোভাব এই নির্বাচনকে শুধু প্রশ্নবিদ্ধ করেনি বরং শিক্ষকদের ভাবমূর্তিও নষ্ট করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এ কে আজাদ চৌধুরী বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যদি নিরপেক্ষভাবে প্রকৃত অভিভাবকের মতো সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতো তাহলে নির্বাচনের ফলাফল বিতর্কিত হতো না। শিক্ষকদের ভাবমূর্তিও রক্ষা পেতো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেছে তাতে শিক্ষকদের ভূমিকা এখন কাঠগড়ায়। শিক্ষকদের সততা, নৈতিকতা শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তিনি মনে করেন, এর ফলে ঢাবির ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হবে। শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সঠিকভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারেনি। প্রশাসন যেটা করেছে তাতে তিনি হতাশ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে শিক্ষকদের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। যে আস্থাহীনতার মূল্য ভবিষ্যতে দিতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষকরাই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত অভিভাবক। সেই অভিভাবকদের প্রতি যদি অনাস্থা তৈরি হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদের অধিকাংশই নীল দলের। তারা যেকোন ভাবে ছাত্রলীগকে বিজয়ী করার একটা মিশন নিয়ে নেমেছিলেন। যেটা ছিল অনুচিৎ। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পরিবেশ ও ছাত্রলীগের যে অবস্থান ছিলো তাতে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে হলেও ছাত্রলীগ ভালভাবেই জিততো। কিন্তু শিক্ষকদের অন্ধ দলীয় মনোভাবের কারণে এই নির্বাচন বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, যেটা সরকারকে নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়েছে।
বাংলা ইনসাইডার/এমআর
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।