নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৪ মার্চ, ২০১৯
আগামী ১১ এপ্রিল থেকে ভারতের লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ কম নয়। রাজনীতি মহলে একটা কথা প্রচলিত আছে যে, ভারতে যে সরকার ক্ষমতায় আছে তাঁর মনোভাবের উপর বাংলাদেশের রাজনীতির স্থিতিশীলতা, গতি প্রবাহ অনেকটাই নির্ভর করে। তবে ভারতের থিঙ্ক ট্যাংকরা মনে করে যে, যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেনো ভারতের পররাষ্ট্র নীতিতে মৌলিক কোনো পরিবর্তন হয়না। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র নীতির যে ভিত্তি তাঁর মৌলিক দিকটি হলো জঙ্গিবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যে সরকার মদদ দিবে না, আশ্রয় প্রশ্রয় দিবে না তাঁদের প্রতিই ভারত সহানুভূতিশীল। বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার কংগ্রেস এবং বিজেপি দুটি সরকারকেই পার করে এসেছে। কাজেই সেই বিচারে অনেকেই মনে করেন যে, ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতায় যেই আসুক না কেনো ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বা আরও নির্দিষ্ট করে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের কোনো টানাপোড়েন হবে না বা কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। কিন্তু সম্প্রতি কংগ্রেসের বিভিন্ন থিংক ট্যাংক এবং উচ্চ পর্যায়ের নেতারা এবং কংগ্রেস যে বাম ফ্রন্ট ও তৃণমুলের সঙ্গে যে জোট করেছে, সেই জোটের শরীকরা বাংলাদেশের ক্ষমতাসীণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিজেপির অতিরিক্ত মাখামাখিতে বিরক্তি প্রকাশ করছেন। সম্প্রতি ভারতের লোকসবা নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন পর্যালোচনা বৈঠকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিজেপির মাখামাখি নিয়ে কথা উঠেছে। ভারতের নির্বাচনে এবার মোদিকে পরাজিত করার জন্য কংগ্রেস, বামফ্রন্ট এবং তৃণমূল জোট বেধেছে। পশ্চিম বাংলায় মমতা ব্যানার্জীর নেতৃত্বে তৃণমূল অত্যন্ত শক্তিশালী। মমতা ব্যানার্জী তাঁদের দলের এক কর্মীসভায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিজেপির অতিরিক্ত মাখামাখিতে উষ্মা প্রকাশ করেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
কয়েকদিন আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ তিস্তার পানি চুক্তির জন্য বিজেপির সঙ্গে এখনও দেনদরবার অব্যাহত রেখেছে এবং বিজেপি থেকে বলেছে যে, তারা ফের নির্বাচিত হলে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তিস্তার পানিচুক্তি করবে। ২০১৪ তে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেকে মনে করেছিল যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরী হবে এবং বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ট হবে। কিন্তু বিজিপি ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ট হয়ে যায়। অনেকগুলো ঐতিহাসিক চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। দুইদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। এই বিষয়টিকে বামফ্রন্ট, তৃণমূল এবং কংগ্রেস নির্বাচনের আগে ভালোভাবে দেখছে না। যদিও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রগুলো বলছে যে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোনো ভূমিকা নেই এবং যারা সরকারে থাকবে তাঁদের সঙ্গেই সম্পর্ক রাখাটা আওয়ামী লীগের নীতিগত অবস্থান। যারাই ক্ষমতাই আসুক না আওয়ামী লীগ কখনও ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সন্ত্রাসীদের আশ্রয় বাংলাদেশে প্রশ্রয় দিবে না।
কিন্তু ভারতের কংগ্রেস তৃনমূল এবং বামফ্রন্টরা মনে করছেন, যে মোদীর কিছু কিছু ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা স্পষ্ট হওয়া উচিত। যেমন নাগরিকত্ব বিল, যে বিলের মাধ্যমে প্রচুর মুসলমানের ভারতীয় নাগরিকত্ব হারানোর শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল। সেই বিলের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য স্পষ্ট নয়। ভারতে যে ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা, সেই চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিজিপির অনেক নীতির ব্যাপারেও বাংলাদেশ সরকার নীরব। এইসব ব্যাপারে নির্বাচনে যদি বাংলাদেশের সুধী সমাজ, সুশীল সমাজ এবং রাজনৈতিক পক্ষগুলো জোড়ালো বক্তব্য রাখে সেটা ভারতের নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। এমনকি বাংলাদেশ আসামে যে ‘বাঙালি খেদাও’ অভিযান শুরু হয়েছে, সেটার ব্যাপারেও নীরব ভূমিকা পালন করেছে। এমনকি রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত যে বাংলাদেশকে সরাসরি সমর্থন দিচ্ছে না সে ব্যাপারেও বামফ্রন্ট এবং তৃনমূল বাংলাদেশের সুষ্পষ্ট অবস্থান চায়। এই বিষয়গুলো নিয়ে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের মিত্র বামফ্রন্ট তৃনমূল এবং কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা যারা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন, তারা বলেছেন,‘এই বিষয়গুলো মোটেও দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব তৈরী করবে না।’ আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, ভারতের কোন বিশেষ রাজনৈতিক দল নয়। পুরো ভারতের সঙ্গেই আওয়ামী লীগের একটা ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং এই সম্পর্ক রক্ত ঋণে বাধা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই এই সম্পর্কের পটভূমি রচিত হয়েছিল। কাজেই যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের সঙ্গেই আওয়ামী লীগ সুসম্পর্ক রাখবে এবং আওয়ামী লীগ মনে করে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা দেশের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি এবং এই লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত দশ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলেছেন, ভারতের নির্বাচন একান্তই দেশটির নিজস্ব ব্যাপার। এই নির্বাচনে বাংলাদেশের কোন ভূমিকা নেই। বাংলাদেশ কারো পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নেই। বাংলাদেশ ভারতের নির্বাচনে যারা জয়ী হবে তাদের সঙ্গে যে সম্পর্কের নতুন উত্তরণ হয়েছে, সেই উত্তরণকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। এই বিষয়টি নিয়ে কোন দেশের মধ্যেই কোন মতবিরোধ নেই বলে তারা মনে করেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেছেন যে, ‘ভারত একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ। এই দেশে নির্বাচন নি:সন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই নির্বাচনে তাদের অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক মৌলিক বিষয়ে কোন পরিবর্তন হয়নি। বাংলাদেশ ভারতের কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক করে না। বরং সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক করে।’ তবে ভারতীয় তৃনমুল সমর্থিত কয়েকটি দৈনিকে এ খবর প্রকাশ পেয়েছে যে, তৃনমূল এবং পশ্চিম বাংলার ভোটব্যাংক দখল করতে বাংলাদেশ ইস্যুকে কাজে লাগাতে চায় তৃনমুল। সে ব্যাপারে তারা আওয়ামী লীগের সমর্থন চাওয়ার জন্য যোগাযোগ করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ভারতের নির্বাচনের ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করছে। এরফলে কি বাংলাদেশে ভবিষ্যতে তিস্তার পানি চুক্তি বা বিজেপি বিরোধী জোট ক্ষমতায় এলে সম্পর্কের অবনতি হবে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও ড. গওহর রিজভী মনে করেন, এক্ষেত্রে সম্পর্ক অবনতি হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। কারণ, দুই দেশের সম্পর্ক এবং পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা এবং কূটনৈতিক পেশাদারিত্বের মধ্য দিয়ে গাঁথা। কাজেই এক্ষেত্রে সম্পর্ক অবনতির প্রশ্নই উঠে না।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়া বিএনপি ব্রিটিশ দূতাবাস সারা কুক
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ড. আব্দুর রাজ্জাক শাহজাহান খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া
হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত
নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান
প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে
আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক
স্থগিত হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন,
‘স্বজন’ প্রশ্নে দলের সিদ্ধান্ত না মানলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও দলীয় এমপির বিরুদ্ধে
সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কেড়ে নেওয়া হতে পারে তাদের দলীয় পদ-পদবি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের মনোনয়নও অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। সব মিলিয়ে
এ ইস্যুতে দলীয়ভাবে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে স্বজনকে
প্রার্থী করা নিয়ে দলের মন্ত্রী ও এমপিদের এরই মধ্যে কড়া ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক
অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো নিকটাত্মীয়
অংশ নিতে পারবেন না। এ বিষয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয়
নির্দেশনা দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে
আনার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদেরও তাগিদ দেন।
এরপর সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠক থেকেই নিকটাত্মীয়দের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ও শাজাহান
খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ টাঙ্গাইলের
ধনবাড়ীতে এবং শাজাহান খান এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান মাদারীপুর সদর উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন।
এ ছাড়া নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরীর সঙ্গেও কথা বলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার
ইশরাক সাবাব চৌধুরী সুবর্ণচরে প্রার্থী হয়েছেন।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরী বলেন, উপজেলা নির্বাচন থেকে তার ছেলেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দলের সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কথা বলেছেন। তিনি তাকে ঢাকায় ডেকেছেন।
তবে তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
নৌকা প্রতীক পাওয়ার পরও প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করেছিলেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের
সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম। এ বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হলেও তিনি সুবিচার
পাননি। এ জন্যই তার ছেলে প্রার্থী হয়েছেন।
গতকাল দলের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে চার
বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, এস এম কামাল হোসেন এমপি,
মির্জা আজম এমপি, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এবং দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া
উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকজন মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে প্রার্থী
করানোর বিষয় নিয়ে অল্পবিস্তর আলোচনা হয়। সেই সঙ্গে দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে নিকটাত্মীয়দের
প্রার্থী করানোর বিষয় নিয়ে নেতারা বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিভিন্ন উপজেলায় সাংগঠনিকভাবে
অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেন নেতারা।
বৈঠকে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রংপুর,
চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের তৃণমূল নেতাদের বৈঠকে সাংগঠনিক বিরোধ নিষ্পত্তির তাগিদ দেওয়া
হলেও কার্যত তা হয়নি। উল্টো উপজেলা নির্বাচন নিয়ে গৃহদাহ পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়েছে।
তৃণমূল নেতাকর্মী দ্বন্দ্ব-বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। এ জন্য কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেন কেন্দ্রীয়
নেতারা। ওই সময়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের
পূর্বনির্ধারিত সাংগঠনিক বৈঠক স্থগিত করার তথ্য জানান। সিলেট ও বরিশাল বিভাগের বৈঠকের
দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ হয়নি।
দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব
বড়ুয়া জানিয়েছেন, ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয়
কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হওয়ার কথা। এ জন্য ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক
স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার রাজশাহী এবং ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক হওয়ার
কথা ছিল। ঢাকা বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল দুই দিনে। প্রথম দিন ২৭ এপ্রিল এবং শেষ দিন
৪ মে।
এদিকে গতকালের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ
নেওয়া তিন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন থেকে
আত্মীয়স্বজনকে সরিয়ে নিতে মন্ত্রী ও দলের এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর
নির্দেশের কথা তাদের জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। এর পর থেকে তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী
ও এমপির সঙ্গে কথা বলছেন। যেসব উপজেলায় মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে
দেওয়া হবে।
আগামী ৮ মে অনুষ্ঠেয় প্রথম পর্বের ১৫০
উপজেলা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মন্ত্রী ও দলীয় এমপির আত্মীয়স্বজন চেয়ারম্যান পদে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে নতুন করে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে।
নাটোরের সিংড়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে
প্রথমে মারধর ও পরে অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় সন্দেহ করা হচ্ছে ডাক, টেলিযোগাযোগ
ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল
হাবীব রুবেলকে।
এদিকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা
জানিয়েছেন, এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনায় খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের
নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, আগামী ২ মে সংসদের অধিবেশন
শুরু হবে। ওই অধিবেশন চলাকালে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক থেকে উপজেলা নির্বাচন
নিয়ে এমপিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, নির্বাচনী এলাকায় প্রভাব
বাড়াতে কয়েকজন মন্ত্রী ও দলের এমপি নিকটাত্মীয় ছাড়াও নিজস্ব লোক তৈরির জন্য পছন্দের
প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। তাই শুধু সন্তান, পরিবার কিংবা আত্মীয়স্বজন
নয়; মন্ত্রী এবং দলের এমপিদের প্রকাশ্যে বা গোপনে উপজেলা নির্বাচনে সম্পৃক্ত না হওয়ার
কড়া নির্দেশনা দেওয়া হবে।
তবে দলীয়ভাবে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও
মন্ত্রী ও দলীয় এমপির অনেকে তা মানবেন না বলে আভাস মিলেছে। এরই মধ্যে অনেক উপজেলায়
মন্ত্রী ও দলের এমপির নিকটাত্মীয়রা প্রার্থী হয়েছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে লড়ছেন
মাজহারুল ইসলাম সুজন এমপির দুই চাচা মোহাম্মদ আলী ও সফিকুল ইসলাম
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন সাহাদারা মান্নান এমপির ছেলে শাখাওয়াত হোসেন সজল। একই জেলায় সোনাতলায় এমপির ভাই
মিনহাদুজ্জামান লিটন
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় নির্বাচন করছেন
আলী আজগার টগর এমপির ভাই আলী মুনসুর
নরসিংদীর পলাশে লড়ছেন ডা. আনোয়ারুল
আশরাফ খান দিলীপ এমপির শ্যালক শরীফুল হক
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রার্থী হয়েছেন
শাহাব উদ্দিন এমপির ভাগনে সোয়েব আহমদ
নোয়াখালীর হাতিয়ায় লড়ছেন মোহাম্মদ আলী
এমপির স্ত্রী ও দুইবারের সাবেক এমপি আয়েশা ফেরদাউস ও ছেলে আশিক আলী।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ড. আব্দুর রাজ্জাক
এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ
মাদারীপুর সদর উপজেলায় শাজাহান খান
এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান প্রার্থী হয়েছেন
এ ছাড়া ধাপে ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে অনেক মন্ত্রী-এমপির নিকটাত্মীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক
লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আগামীকাল আজ শুক্রবার।
১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল আজকের এদিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কৃষক লীগের ৫২ বছর পূর্তি
উপলক্ষে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধু কৃষক নেতা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতকে
কৃষক লীগের কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেন। বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনায় ব্যারিস্টার বাদল রশিদকে
সভাপতি ও আব্দুর রউফকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠিত হয়।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কৃষক
লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলে কৃষিবিদ সমীর চন্দকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম
স্মৃতিকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
কৃষক লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের সভাপতি কৃষিবিদ
সমীর চন্দ দলের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান।
এসময় তিনি বলেছেন, দেশের কৃষির উন্নয়ন এবং কৃষকের স্বার্থ রক্ষার
জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ কৃষক
লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে কৃষক লীগ কৃষকদের সংগঠিত করা, তাদের দাবি আদায়
এবং দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে আসছে।
আজ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৬টায় সংগঠনটির ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
উপলক্ষে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা এবং দলীয়
পতাকা উত্তোলন। এছাড়াও সকাল ৭টায় মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে ধানমন্ডির ৩২ পর্যন্ত শোভাযাত্রা।
সকাল সাড়ে ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ
হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর কর্মসূচি রয়েছে।
এদিন বিকাল ৩টায় কৃষি ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্রের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী। আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করবেন কৃষক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু।
কৃষক লীগ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
গতকাল ঢাকাস্থ ব্রিটিশ দূতাবাসে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল ব্রিটিশ দূতাবাসে। সেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক এক ঘণ্টার বেশি সময় তাদের সাথে বৈঠক করেন। এসময় ব্রিটিশ দূতাবাসে অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক স্থগিত হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। আজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনাটি জারি করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্য স্বজনরা প্রার্থী হতে পারবেন না। এটি আওয়ামী লীগ সভাপতির একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল পর্যন্ত যে পরিবারতন্ত্র ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল এবং বিভিন্ন জায়গায় যে জমিদারি প্রথা তৈরির শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল সেটা প্রতিরোধের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতির এই উদ্যোগ তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।