নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১৯ মার্চ, ২০১৯
খালেদার মুক্তির দাবিতে স্বেচ্ছায় কারাবরণ কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ শীর্ষস্থানীয় নেতা এই প্রস্তাবকে উদ্ভট এবং বাস্তবসম্মত নয় বলে নাকচ করে দিয়েছেন। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে এখন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাভোগ করছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, বিএনপির সবপক্ষই একমত যে আন্দোলন সংগ্রামের চেয়ে এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সুচিকিৎসাই হওয়া উচিৎ বিএনপির প্রথম লক্ষ্য এবং কর্মসূচি। এই কর্মসূচি কী ধরনের হওয়া উচিৎ তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক চলছে। বিএনপির মধ্যে এই নিয়ে ৩টি মতামত রয়েছে।
প্রথমত, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি অংশ মনে করছে, আন্দোলন এবং আইনী প্রক্রিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি অবাস্তব এবং অসম্ভব ব্যাপার। এজন্য সরকারের সঙ্গে একটা আপোস রফার মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আনতে হবে। সেখানে সরকারের সঙ্গে একটা সমঝোতায় আসার জন্য সরকার আর বিএনপির শর্তগুলো নিয়ে পর্দার আড়ালে আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধানে আসা যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, একটি অংশ মনে করছে যে, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আইনী প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা উচিৎ এবং প্রক্রিয়াটি জোরদার করা উচিৎ। ব্যারিস্টার নওশাদ জামিরসহ তরুণ আইনজীবীরা এখনো বিশ্বাস করেন যে আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব। এজন্য তারা আইনী প্রক্রিয়াকে জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। যদিও বিএনপির সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ অন্যান্যরা মনে করছেন যে আইনী প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি এখন সুদূর পরাহত।
তৃতীয়ত, যারা অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং তৃণমূল, তারা মনে করছেন যে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির একটাই পথ আছে, সেটা হলো রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা। অথবা এমন কোন কর্মসূচি গড়ে তোলা যাতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ হয় এবং সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এই কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে নানা রকম আলাপ আলোচনা চলছে।
খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে গত পরশু তারেক জিয়া এক ফর্মুলা দিয়েছেন। সে ফর্মুলায় তারেক জিয়া বলেছেন, বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য ভিন্ন রকমের কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। ভিন্ন রকমের কর্মসূচি হিসেবে তিনি বলেছেন স্বেচ্ছায় কারাবরণ কর্মসূচি। তিনি সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীকে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে স্বেচ্ছায় কারাবরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এই ফর্মুলা দলের তৃণমূলের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেও দলের সিনিয়র নেতারা মনে করছেন এই কর্মসূচি হলো আত্মঘাতী ও বাস্তবতাবিবর্জিত। এটার ফলে বিএনপির যেটুকু শক্তি অবশিষ্ট আছে সেটুকুও শেষ হয়ে যাবে। বিএনপির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি নেতার উপর শতাধিক মামলা রয়েছে। এই বাস্তবতায় স্বেচ্ছায় কারাবরণ কর্মসূচিতে তারা যদি প্রকাশ্যে আসে এবং তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হলে সরকারের উপর কোন চাপ সৃষ্টি হবে না। এ পর্যন্ত বিএনপির যত নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে তাতে সরকারের উপর ন্যূনতম চাপ সৃষ্টি হয়নি, সরকার কোন প্রতিক্রিয়াও দেখায়নি। তাই, বিএনপি নেতাকর্মীরা যদি স্বেচ্ছায় কারাবরণ করে তাতে বিএনপি সরকারের উপর কোন চাপ সৃষ্টি করতে পারবে না এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও এর কোন প্রভাব পড়বে না। কাজেই বাস্তবতার নিরিখে এ ধরনের কর্মসূচিতে না যাওয়ার জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা তারেক জিয়াকে অনুরোধ করেছেন।
কিন্তু তারেক জিয়া এখন পর্যন্ত তার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন। তার এই কর্মসূচি যেন গৃহীত হয় সেজন্য তিনি তৃণমূল দিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা মধ্যবর্তী জায়গায় গিয়ে গণঅনশন, মানববন্ধনের মতো কর্মসূচিগুলোকে জোরদার করা এবং গণ-মানুষের নিত্যদিনের দাবি দাওয়া যেমন গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিরাপদ সড়ক, ইত্যাদি বিষয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলনের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। কিন্তু চূড়ান্তভাবে বিএনপি কোন ধরনের আন্দোলনে যাবে, কিংবা আদৈ তারা আন্দোলনে যাবে কি না বা সেরকম শক্তি তাদের আছে কি না সেটি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। বিএনপিতে এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে তারেক জিয়ার কথাই ছিলো শেষ কথা। তার সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া কঠিন ছিলো এবং তার সিদ্ধান্তের কেউ প্রতিবাদ করতে পারতো না। কিন্তু এখন সময় পাল্টে গেছে। এখন তারেক জিয়ার প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে, সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছে এবং সিদ্ধান্তগুলো প্রত্যাখাত হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপি আন্দোলন করতে পারুক না পারুক বিএনপিতে যে তারেক জিয়ার রাজত্বে অবসান ঘটতে যাচ্ছে সেটি স্পষ্ট।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।