নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২০ মার্চ, ২০১৯
নির্বাচনের পরে বিএনপিতে যে গৃহবিবাদ শুরু হয়েছে, সেই গৃহবিবাদের ঢেউ জিয়া পরিবারের উপরও আঁচড়ে পড়েছে। বিএনপিতে জিয়া পরিবারের দুই সদস্য তারেক জিয়া এবং জোবায়দা রহমানের মধ্যে বিএনপির রাজনীতি এবং ভবিষ্যত করণীয় নিয়ে বিরোধ সৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। এনিয়ে দুজন দ্বিমুখী বক্তব্য রাখছেন। তাঁরা পরস্পরকে দোষারোপ করছেন। এনিয়ে তারেক জিয়ার পরিবারের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে বলেও লন্ডন থেকে প্রাপ্ত একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে থেকেই তারেক জিয়াকে রাজনীতি থেকে সাময়িকভাবে অবসর গ্রহণ করা এবং বিএনপির যোগ্য কারও হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল। একই সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া যেন আপাতত রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে তিনি শুধু তার চিকিৎসার ব্যাপারে মনোনিবেশ করেন সেই পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারেক জিয়া দুটি প্রস্তাবের একটিও গ্রহণ করেননি এবং তিনি ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। তিনি শুধু দলকেই বিতর্কিত করেননি, বিএনপির অস্তীত্বকেও বিতর্কিত করেছেন। নির্বাচনের পরও তার সেই তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল এবং বিদেশী দাতা দেশ স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারেক জিয়ার নেতৃত্ব যতক্ষণ বিএনপিতে থাকবে ততক্ষণ বিএনপিকে কোনমতে রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি বা সমর্থন দিবে না। এই প্রেক্ষিতে তারেক জিয়াকে রাজনীতি থেকে আপাতত অবসরের দাবি বিএনপির মধ্যে জোড়ালো হয়ে উঠেছে। তারেক জিয়ার স্ত্রী ডা: জোবায়দাও চান তারেক জিয়া সাময়িকভাবে রাজনীতি থেকে অবসর নিক এবং নতুন করো হাতে নেতৃত্ব তুলে দিক। এনিয়ে তিনি বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন যে তিনি এবিষয়টা তারেককে বুঝাবেন এবং তারেক যেন আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতি থেকে সরে যান, অবসরের ঘোষণা দেন সে ব্যাপারে একটা প্রস্তাবনা তিনি প্রকাশ্যে উপস্থাপনার জন্য কাজ করবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই যে, তারেক তার স্ত্রীকেও এ ব্যপারে পাত্তা দেননি। তিনি কোন অবস্থাতেই বিএনপির দায়িত্ব থেকে সরে যেতে রাজি নন। এটা ডা: জোবায়দাকেও ক্ষুব্ধ করেছে। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, দীর্ঘদিন ধরেই ডা: জোবায়দা এবং তারেক জিয়ার নানা বিষয়ে মনোমালিন্য ছিলে এবং এই মনোমালিন্য এখন চরম অকার ধারণ করেছে। ডা: জোবায়দা নিজেই তারেক জিয়ার বিভিন্ন কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জোবায়দা তারেক জিয়ার কর্মকান্ডে অত্যন্ত বিরক্ত বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এই কারণে ডা: জোবায়দা একবারও বেগম খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর দেশে আসেননি। তবে ৩০ শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর তিনি একটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে শুধুমাত্র মানবিক কারণে চিকিৎসার জন্য যেন মুক্তি দেয়া হয়। এইজন্য তিনি সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন। কিন্তু তারেক জিয়ার হস্তক্ষেপের কারণে এবং তারেক জিয়ার বাধার কারণে সেই উদ্যোগও ভেস্তে যায়। এটা ডা: জোবায়দাকে আরও ক্ষুব্ধ করেছে এবং ডা: জোবায়দা এখন সমস্ত তৎপরতা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।
একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, তিনি কোনো রাজনৈতিক তৎপরতায় জড়িত হবে না এবং এই রাজনৈতিক ব্যাপারে তারেক জিয়ার যে পরিণতি হয় সেই পরিণতি ঠেকাতে তিনি কোনো উদ্যোগ ও পদক্ষেপও নেবেন না। তিনি বিএনপির একাধিক নেতাকে বলেছেন যে, তারেক জিয়ার উশৃংখলতা, বাড়াবাড়ি এবং অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপির এই অবস্থা। এজন্য তারেক জিয়ার অতি মাত্রায় লোভ এবং দুর্নীতিমনস্ক চিন্তাভাবনাই দায়ী বলেও তিনি একাধিক বিএনপি নেতাকে বলেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ এখন বিএনপিতে গোপন বিষয় না, ছড়িয়ে পড়েছে। এই বিরোধ যদি বাড়তে থাকে তাহলে হয়তো ডা: জোবায়দাই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে তারেক জিয়ার বিভিন্ন অপকর্ম এবং অপকীর্তি সম্পর্কে জনগনকে অবহিত করবেন। ডা: জোবায়দা বিএনপির একাধিক নেতাকে বলেছেন যে, তারেক জিয়াকে শোধরানোর আর কোনো পথ নেই। এখন একটাই পথ সেটা হলো বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা। সেটার জন্য তিনি যা যা করা দরকার তা করবেন বলেও বিএনপির একাধিক নেতাকে বলেছেন। জিয়া পরিবারের এই বিরোধ বিএনপিকে শেষ পর্যন্ত কোথায় নিয়ে যায় সেটাই হলো দেখার বিষয়।
বাংলা ইনসাইডার/এসআর/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।