নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২২ মার্চ, ২০১৯
বিএনপির রাজনীতিতে এই মুহর্তে ক্লিন ইমেজের ব্যাক্তিটির নাম হলো গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি যে বক্তব্য রাখছেন বা কথাবার্তা বলছেন,সেগুলোই বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীর বক্তব্য বলে কর্মীদের একটি বড় অংশ মনে করছে। তিনি মূলত এখন বিএনপির তৃনমূলের কন্ঠস্বরে পরিণত হয়েছেন। তিনি ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে যাওয়ার বিরোধী ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া বিএনপির কোন নির্বাচনে যাওয়া উচিত নয়। তিনি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের কথা বলেছিলেন। তিনিই প্রথম বলেছিলেন, আইনি লড়াই করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারবে না। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ই সিনিয়র নেতাদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি যিনি বরেছিলেন বিএনপিকে ঢেলে সাজাতে হবে। বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিরোধিতা করেছিলেন। যখন শেষ পর্যন্ত ঐক্য হয় তখন তিনি বলেছিলেন, প্রয়োজনে শয়তানের সঙ্গেও ঐক্য করবো। রাজনীতিতে স্পষ্টবাদী হিসেবে পরিচিত গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তার রাজনৈতিক জীবনে কখনো পদস্ফলন ঘটাননি। তিনি শুরু থেকেই বিএনপির রাজনীতি করতেন। জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে বিএনপির রাজনীতির সূচন করেন। তিনি বিএনপির অঙ্গ সংগঠন, জাতীয়তাবাদী যুব দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এখন তিনি স্থায়ী কমিটির সদস্য। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া দুজনকেই গয়েশ্বর রায়কে অত্যন্ত পছন্দ করেন। তাকে আস্থাভাজন মনে করেন। তার বিরুদ্ধে কখনো দলের নীতি আদর্শ নিয়ে আপোস করা, নিজের স্বার্থের জন্য দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার রেকর্ড নেই। এমনকি ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর যখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে নানারকম কথাবার্তা বাজারে প্রচলিত রয়েছে। সরকারের সঙ্গে তার গোপন আঁতাতের খবরও প্রকাশিত হচ্ছে। ঠিক সেই সময় শুধুমাত্র গয়েশ্বর চন্দ্র রায় একজন বিএনপির বিরল রাজনৈতিক, যাকে নিয়ে কোনরকম সরকারের সঙ্গে দেনদরবার, আপোসরফা বা গোপন আতাতের কোন অভিযোগ নাই। এজন্য ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। অনেকেই মনে করেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কেই মহাসচিব করা উচিত। এটা নিয়ে বিএনপির মধ্যে যে আলোচনা হয়নি তা নয়। ভারতসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও মনে করে, বিএনপির এই চরম হতাশজনক দুর্দিনে এমন একজন মহাসচিব দরকার যিনি দলকে সংগঠিত করতে পারবেন এবং দলের নেতাকর্মীদের আস্থাভাজন হিসেবে কাজ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সবার থেকে এগিয়ে। এনিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মনে কনো সন্দেহ নেই। প্রশ্ন উঠে, কেন তাহলে দলের মহাসচিব পদে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আলোচিত নন? কেন তাকে মহাসচিব করার চিন্তাভাবনা বিএনপর নীতিনির্ধারকদের নেই? তার কারণ কি তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন এইজন্যই?
বিএনপি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই স্বাধীনতা বিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর প্রতি বেশি নির্ভরশীল। বিএনপির নেতৃত্বে সবসময়ই দেখা গেছে, যারা স্বাধীনতা বিরোধী, যারা উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী তাদের সঙ্গেই বিএনপির সখ্যতাটা একটু বেশি। তারাই বিএনপির দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হন। জিয়াউর রহমান যেমন তাদেরকে দলের শীর্ষ পদগুলোতে নিয়ে এসেছেন। ঠিক তেমনিভাবে খালেদা জিয়াও সেই ধারা অব্যাহত রেখেছেন। তার মধ্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মত একজন নেতার স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ পাওয়া বিরল ঘটনা। অনেকেই মনে করে, বি জিয়াউর রহমানের আমল থেকে বিএনপি নিজেদের একটা সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে বিকশিত করেছে। দক্ষিনপন্থীদের সঙ্গে মাখামাখি করতে তারা স্বস্তিবোধ করে। সেই প্রক্রিয়ায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়াও একটা বড় ব্যপার।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কী তাহলে শুধু ধর্মীয় কারণে দলের মহাসচিব পদের জন্য অযোগ্য? এই প্রশ্নটি উঠেছে বিভিন্ন মহলে। মনে করা হচ্ছে যে, দক্ষিণপন্থী এবং উগ্র ডানপন্থীদের সঙ্গে যেমন বিএনপির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। সেইজন্যই গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দলের বিবেচনায় নেই। দলের একজন সিনিয়র নেতাও বলেছেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় একজন ভালো নেতা। দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। নেতাকর্মীদের মধ্যে তিনি স্পষ্টবাদী এবং সৃজনশীল নেতা হিসেবে পরিচিত। তবে তাকে মহাসচিব করার ক্ষেত্রে একটা কিন্তু আছে। এই কিন্তুটি কি জানতে চাওয়া হলে বিএনপির একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন, তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক। এজন্য বিএনপির মতো একটা সংগঠন তাকে মহাসচিব হিসেবে বিবেচনা করতে ভয় পায়। কারণ ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি বিভিন্ন সময়ে রাজনীতি করেছে। কাজেই একজন সংখ্যালেঘুকে মহাসচিব করার মত ঝুঁকি বিএনপি নিতে চায় না। সম্ভাবত এ কারণেই স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েই গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে খুশি থাকতে হচ্ছে। তবে একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছে যে, জামাতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নিয়ে যখন নানা রকম কথাবার্তা চলছে এবং বিএনপিকে যখন উগ্র মৌলবাদী এবং দক্ষিনপন্থী ইসলাম পছন্দ দলগুলোর আস্থাভাজন দল হিসেবে মনে করা হচ্ছে, ঠিক তখন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে মহাসচিব করে বিএনপি তার সেক্যুলার চেতনাটাকে উর্ধে তুলে ধরতে পারে। কিন্তু সেটা করার মতো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং অবস্থান বিএনপির আছে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।