নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২৩ মার্চ, ২০১৯
বাইরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের জন্য সমবেদনা জানানো হচ্ছে। তাঁর আরোগ্য লাভের জন্য প্রার্থনারও কমতি নেই। কিন্তু ভিতরে ভিতরে আওয়ামী লীগেরই একটি মহল চাইছে ওবায়দুল কাদের যেন ফিরে এসে সাধারণ সম্পাদক পদে না থাকেন। এর পেছনে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এখনো কার্যকরী হয়নি এবং তৃতীয় যুক্তি হিসেবে দেখানো হচ্ছে ওবায়দুল কাদের বাইপাসের পরে আগের মতো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। কাজেই, এখন একই সঙ্গে মহাসচিব এবং মন্ত্রীর দায়িত্ব যেন পালন করা তার জন্য কষ্টদায়ক এবং প্রায় অসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাড়াবে। ওবায়দুল কাদের যেন সাধারণ সম্পাদক না হয়, তার একটা পরোক্ষ ইংগিত পাওয়া গেছে এই পদের অন্যতম দাবিদার যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের একটি উক্তি থেকে। সম্প্রতি মাহবুবুল আলম হানিফ নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এক বক্তব্যে, সড়ক পরিবহন এবং সেতু মন্ত্রণালয়ের তীব্র সমলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, সড়ক পরিবহনের দায় আওয়ামী লীগ নিবে না। প্রধানমন্ত্রী নিরাপদ সড়কের জন্য বেশকিছু অনুশাসন দিয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের। তারা কি করেছে, সেটা জনগন জানতে চায় এবং এর দায় দায়িত্ব আওয়ামী লীগ গ্রহণ করবে না। স্পষ্টতই ওবায়দুল কাদের যখন অসুস্থ সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে চিকিৎসারত, তখন তার সহকর্মীর মুখে এ ধরণের বক্তব্য অনভিপ্রেত। এটা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। যদিও মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে এই কথাটি তিনি বলেননি। তিনি বলেছেন, সড়ক পরিবহন ক্ষেত্রে কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর জন্য নিরাপদ সড়ক সুদূর পরাহত হচ্ছে। বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন যে, এখানে ওবায়দুল কাদেরের বিষয়টি অবান্তর। কারণ তিনি বলেছেন যে, বিআরটিএসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান যেগুলো নিরাপদ সড়ক দেখভালের দায়িত্ব। সেগুলোর সমলোচনা করেছি। অবশ্যই সেই সমস্ত অনিয়ম বন্ধ করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বারংবার নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি বলেন যে, আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই নির্দেশনাগুলো প্রতিফলিত হচ্ছে না কেন? এখানে মন্ত্রীর কোন বিষয় নেই। মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে আমি এ ধরনের কোন মন্তব্য করিনি।’
তিনি যার উদ্দেশ্যেই করুক না কেন, তার এই বক্তব্য আওয়ামী লীগের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই বলছেন, মাহবুবুল আলম হানিফ হলেন সাধারণ সম্পাদকের অন্যতম দাবিদার। ওবায়দুল কাদের ৩ মার্চ অসুস্থ হওয়ার তিনদিন পর থেকে তিনি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের অনেক সিদ্ধান্তই পরিবর্তন করেছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিশেষ করে তৃনমূলের প্রতি নির্দেশনা, তৃনমূলের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং তৃনমূলের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের যে নীতি এবং কৌশল ব্যবহার করতেন তা থেকে মাহবুবুল আলম হানিফ আলাদা অবস্থান নিয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
মাহবুবুল আলম হানিফসহ আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ চাইছে যে একজন পূর্ণকালীন সাধারণ সম্পাদক দলে থাকুক। যিনি কোনো মন্ত্রী হবেন না, শুধু দলের দেখভাল করবেন। ইতিমধ্যেই দলের সভাপতিকে জানানো হয়েছে যে, একই সঙ্গে মন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দুটো দায়িত্বের কোনোটাই সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হয় না। এর উদাহরণ হিসেবে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের দাবিতে আন্দোলন এবং দলের বর্তমান পরিস্থিতি উপস্থাপন করা হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা হচ্ছে যে, উপজেলা নির্বাচনে যেমন আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। সেখানে মারামারি এমনকি খুনোখুনিও হয়েছে। একটি বড় অংশ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের বিভক্তিকে উস্কে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, এই কোন্দল এবং বিভক্তি ভবিশ্যতে দলের জন্য উদ্বেগজনক হবে। সেজন্য এখনই দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার প্রস্তাবও দেওয়া হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের একটি মহল মনে করছে যে, এও সমস্ত কথা বার্তা এখন বলা হচ্ছে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে। এখন ওবায়দুল কাদের অসুস্থ এবং তার সফল বাইপাস সার্জারি হয়েছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে তার দেশে ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে ফেরার পর তিনি যেন দুটো দায়িত্ব একসঙ্গে পালন করতে না পারেন সেজন্যেই আওয়ামী লীগের একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে বলে জানা গেছে।
তবে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে যে, দলের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে ওবায়দুল কাদেরকে মন্ত্রিত্ব কিংবা সাধারণ সম্পাদক কোনো পদ থেকেই সরাবেন না। ওবায়দুল কাদের অসুস্থ অবস্থায় যতটুকু পারেন সেভাবেই আস্তে আস্তে দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী কাউন্সিলের আগে পর্যন্ত ও ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। যারা ওবায়দুল কাদেরকে সরাতে চেয়েছেন তারাও মনে করছেন যে কাউন্সিলের আগে এটা কিছুতেই সম্ভব না। এখন থেকে যদি সেই পরিস্থিতি তৈরি করা যায়, তাহলে কাউন্সিলে হয়তো একজন নতুন সাধারণ সম্পাদক আসলেও আসতে পারে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মধ্যে সবচেয়ে বড় দাবি হচ্ছে যে, যিনি দলের সাধারন সম্পাদক হবেন তিনি কোনো মন্ত্রী থাকতে পারবেন না। তাকে পূর্ণকালীনভাবে দলের সাধারণ সম্পাদক হতে হবে।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।