নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২৫ মার্চ, ২০১৯
কথা ছিল জামাত ইসলাম তার নাম পরিবর্তন করবে। নতুন রূপে সাজাবে দলকে। একাত্তরে তারা যে অপকর্ম করেছিল তাদের উত্তরসূরীরা সেই অপকর্মের দায় নিবে না। এমনও কথা ছিল জামাত ইসলাম ২৬শে মার্চের মধ্যে তাদের অতীতের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইবে। কিন্তু জামাত যে কখনো বদলায় না, তার আরেকবার প্রমান হলো। জামাতের এই সবই ছিল দুটি কারণে। প্রথমত, জামাত যে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি সেখান থেকে জনগনের দৃষ্টি আড়াল করার জন্য। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনে যে জামাতের ভরাডুবি হয়েছে সেখান থেকে দলের নেতাকর্মীদের যে হতাশা তা থেকে চাঙ্গা করার জন্য। সেই হতাশা থেকে দলকে আলগা করার জন্য। এরকম কথাবার্তা দলের মধ্যে শুরু হয়েছিল। কিন্তু জামাত যে আসলে বদলাবার নয়, সেটা আরেকবার প্রমান হলো।
গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের জামাত ২২টি আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিল। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত অধিকাংশ নেতারা দণ্ডিত হয়েছেন, তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। এ অবস্থায় দলটি ছিল বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত। এর মধ্যে তাদের এতগুলো আসলে লড়াই ছিল বিস্ময়কর। জামাতকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বিএনপি সহায়তা করেছিল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে। কিন্তু ওই নির্বাচনে জামাতের ভয়াবহ ভরাডুবি হয়। প্রথমবারের মতো জামাতের সবগুলো প্রার্থীর জামানতই বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়। এই প্রেক্ষিতে জামাতের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। জামাতের অপেক্ষাকৃত যারা তরুণ তারা দাবি করেন যে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ এবং স্বাধীনতা বিরোধী ভূমিকার জন্যই সাধারণ মানুষ জামাতের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে জামাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। এই প্রেক্ষিতে লন্ডনে পলাতক জামাতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক পদত্যাগ করেন। তার পথ ধরে জামাতের আরো দু-একজন তরুণ নেতা পদত্যাগ করেন এই ইস্যুতে। এই প্রেক্ষিতে জামাতের ভিতর একটি কমিটি গঠন করা হয়, সেই কমিটি থেকে বলা হয় জামাতের নাম পরিবর্তন করবে এবং একাত্তরের ভূমিকার জন্য তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে। কিন্তু একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, জামাতের মধ্যে এখনো স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠী শক্তিশালী। এই গোষ্ঠীই জামাতকে নিয়ন্ত্রন করে। এজন্য জামাতের নাম পরিবর্তন বা একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কোনটাই জামাত শেষ পর্যন্ত করছেন না। দ্বিতীয়ত, জামাত যদি তার অবস্থান পরিবর্তন করে তাহলে দেশে যে স্বাধীনতা বিরোধী একটি সমর্থক গোষ্ঠী আছে, যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতা বিরোধীতা করেছিল, যাদের সংখ্যা মোটেও কম নয়, সেই গোষ্ঠীটার কোন রাজনৈতিক দল থাকে না। এজন্যই আন্তর্জাতিক মহল যারা জামাতের জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ এবং স্বাধীনতা বিরোধী অবস্থাকে প্রশ্রয় দেয়। তারা চায় জামাত যেন আগের অবস্থানে থাকে। বিএনপিও মনে করে যে, বাংলাদেশে ভারত বিরোধী এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের যে মোর্চাটা তা জামাত যদি না থাকে তাহলে বিএনপি দুর্বল হয়ে পরবে। এজন্য বিএনপিও জামাতকে অক্ষুন্ন রাখার জন্য একটি চাপ সৃষ্টি করেছে। এরফলে জামাত তার আগের অবস্থানে রয়ে গেছে। স্বাধীনতা বিরোধী যে অবস্থানে ছিল, সেই অবস্থানেই রয়ে গেছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, জামাত যেন তার অবস্থান পরিবর্তন না করে সেজন্য জামাতের উপর বিএনপির একটি অংশ যারা বিএনপিতে স্বাধীনতা বিরোধীদের পৃষ্ঠপোষক এবং ধারক বাহক হিসেবে পরিচিত, তারা জামাতের উপর রীতিমতো চাপ সৃষ্টি করেছে যাতে জামাত তাদের অবস্থান থেকে সরে না দাড়ায়। ৩ সদস্যের যে কমিটি জামাতকে সংস্কার এবং নাম পরিবর্তন করে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করার সুপারিশ করেছে। সেই কমিটি সুপারিশ করেছে যে, জামাতের বর্তমান বাস্তবতায় নাম পরিবর্তন করা অনুচিত হবে এবং তাতে জনগনের মধ্যে ভুলবার্তা যাবে। একই সঙ্গে তারা এটাও সুপারিশ করেছে যে, জামাতের যে বিপুল সংখ্যক সমর্থক এবং কর্মী আছেন তাদেরকে পর্যায়ক্রমে সংগঠিত করতে হবে। অর্থাৎ জামাত যেটা প্রমাণ করলো, জামাত যে স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দল ছিল সেই নীতি থেকে তারা এখনো সরে আসেনি। একাত্তরে তারা যে ভূমিকায় ছিল তারা এখনো সেখানেই আছে। বাংলাদেশকে আরেকটি পাকিস্তান করার যে তাদের উদ্দেশ্য সেই অবস্থান তাদের মোটেও পরিবর্তন হয়নি। এরফলে জামাতকে নিষিদ্ধ করার যে দাবি, তা আবার নতুন করে ওঠা উচিত বলে সচেতন মহল মনে করছেন। জামাতের নিষিদ্ধকরণের ইস্যুটিকে দ্রুতই একটি জাতীয় ইস্যুতে পরিনত করা প্রয়োজন বলে স্বাধীনতার পক্ষের লেখক, বুদ্ধিজীবি এবং মুক্তিযোদ্ধারা মনে করছেন।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ব্রিটিশ হাইকমিশনার বিএনপি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শামা ওবায়েদ সারাহ কুক
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন মন্ত্রী-এমপি আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। আজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনাটি জারি করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্য স্বজনরা প্রার্থী হতে পারবেন না। এটি আওয়ামী লীগ সভাপতির একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল পর্যন্ত যে পরিবারতন্ত্র ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল এবং বিভিন্ন জায়গায় যে জমিদারি প্রথা তৈরির শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল সেটা প্রতিরোধের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতির এই উদ্যোগ তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।