নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২৬ মার্চ, ২০১৯
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে যোগ দেওয়া একটা মিশেল দল হলো বিএনপি। জামাত-মুসলিম লীগ নেতাদের বিএনপিতে যোগদানকারীর সংখ্যা যেমন কম নয়, তেমনি বিভ্রান্ত বাম থেকেও বিএনপিতে যোগ দিয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী। আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেনে অনেকে। জাতীয় পার্টি থেকেও বিএনপিতে আসা নেতাকর্মীর সংখ্যা কম নয়। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপিতে সাবেক জাপার নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন এবং জাপার চাপে অতিষ্ঠ হয়েছে মূল বিএনপি। বিএনপির মূল নেতারা বলছেন, জাতীয় পার্টি থেকে আগতরা এখন মূল বিএনপির জন্য আপদে পরিণত হয়েছে। এরা দলের মধ্যে হতাশা ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। এরা দলকে বিভক্ত করার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এরাই নানা রকম কথা বলে কর্মীদের বিভ্রান্ত করেছে এমন অভিযোগ বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের। বিএনপিতে জাপা থেকে আসা নেতার সংখ্যা নেহায়তই কম নয়। কিন্তু জাতীয় পার্টি থেকে আসা কয়েকজন নেতা এখন দলের মধ্যে বিঁষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছে বলে বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় একাধিক নেতা বলেছেন। দুদিন আগে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় জাপা থেকে আগত শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বিএনপির মহাসচিবের কঠোর সমলোচনা করেছেন। তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তীব্র সমলোচনা করে বলেছেন যে, এ ধরনের ফ্রন্ট দরকার নেই। ঐ অনুষ্ঠানে তিনি এটাও বলেন যে,আমাদের নেতা খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া ছাড়া অন্য কাউকে নেতৃত্ব দেওয়াটা ঠিক হয়নি। এখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোন দরকার নেই। ঐ অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। মির্জা ফখরুল ঐ অনুষ্ঠানেই শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের সমলোচনার জবাব দেন। তিনি বলেন যে, তিনি যা কিছু করেছেন সবকিছু বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে করেছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা আন্দোলনে যাদেরকে পাই না। তারাই এরকম সমলোচনা করে। কিন্তু এই ব্যাপারটি এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো। এই অনুষ্ঠানের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তীব্রভাবে আক্রমন করেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে। তিনি বলেন,‘দলের মধ্যে আপনারা বিভক্তি সৃষ্টি করেছেন। দলের হতাশা বাড়াচ্ছেন। হাত তালি দেওয়ার জন্য অনেক দামি দামি কথা বলা যায়। কিন্তু কর্মসূচীতে অংশগ্রহণের জন্য লোক পাওয়া যায় না। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন নব্বই পর্যন্ত স্বৈরাচারী এরশাদের অন্যতম আস্থাভাজন ছিলেন এবং অন্যতম চাটুকার ছিলেন। তিনি তার বিভিন্ন বক্তৃতায় বিএনপি এবং আওয়ামী লীগকে তীব্রভাবে সমলোচনা করতেন। দু্ই নেত্রী মিলিত হলে কিছুই উৎপাদিত হয় না এমন অশালীন কথার জন্মদাতা এই শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। তার বক্তব্যকে দুর্ঘন্ধময় বলেও উল্লেখ করতেন রাজনীতিবিদরা। সেই শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন এখন বিএনপিতে এসে দলটির আপদে পরিনত হয়েছে।
৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর বিএনপি থেকে সবচেয়ে প্রথম যিনি দল পুনর্গঠনের কথা বলেন এবং নেতৃত্বের ব্যার্থতার কথা বলেন তিনি হলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। তিনি এরশাদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। জাতীয় পার্টির অন্যতম নীতিনির্ধারক ছিলেন তিনি। নব্বইয়েও এরশাদের ছেড়ে দেওয়া রংপুরের একটা আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে তিনি সংসদে এসেছিলেন। কিন্তু রাজনীতিতে ডিগাবাজিতে যারা বিখ্যাত তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন এই মওদুদ আহমেদ। তিনি বিএনপির এখন অন্যতম নীতি নির্ধারক এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য। এই নেতা ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের শীর্ষ নেতাদের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন। দলকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রায় অনুপস্থিত। কোন কর্মসূচীতে তাকে দেখা যায় না। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ রয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে। তিনি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ফোরামে বিএনপিরই কঠোর সমলোচনা করছেন। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন, এ ধরনের বক্তব্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ যখন বলছেন তখন দলের ভিতর অনৈক্য তৈরী হচ্ছে। ব্যারিস্টার মওদুদের আরেকটা পরিচিতি হলো তিনি খালেদা জিয়ার আইনজীবি ছিলেন এবং নাইকো দুর্নীতি মামলার অন্যতম কুশলী। বিএনপির একাধিক নেতা মনে করেন যে, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা। খালেদা জিয়ার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়া এই সবকিছু হয়েছে মওদুদের কারসাজিতেই। মওদুদকে দলের কেউই যেমন বিশ্বাস করেন না, তেমনি এখন থাকে দলের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য এবং দলের বিভক্তি সৃষ্টির জন্য দায়ী করা হচ্ছে।
বিএনপির আরেক নেতা হলেন নিতাই রায় চৌধুরী। তিনিও হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের ঘনিষ্ঠ নেতা ছিলেন। তিনিও পরে বিএনপিতে যোগদান করেন। যারা দলের মধ্যে বিভক্তি তৈরী করতে চাইছেন এবং দলের বর্তমান নেতাদের সমলোচনা করছেন অথচ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করছেন না তাদের অন্যতম হলেন নিতাই রায় চৌধুরী। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি বিভিন্ন বক্তব্যে সরকারের সমলোচনা করার বদলে বিএনপির সমলোচনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মূল ধারার বিএনপি যারা তারা এক বৈঠকে মিলিত হয়ে জাপা থেকে আগতদের অতিকথনে বিরক্তী প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন যে, এখন দায়িত্ব হলো সরকারের সমলোচনা করা, সরকারের ভুলত্রুটিগুলো জনগনের সামনে তুলে ধরা। আন্দোলন সংগ্রামের জন্য কর্মী নেতাকর্মীদেরকে উজ্জীবিত করা। কিন্তু তা না করে যারা বিএনপির মধ্যেই সমলোচনা করছেন। বিএনপির গীবত গাইছেন, বিএনপিকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছেন। তাদের নিশ্চয়ই অন্যকোন মতলব আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, জাপা থেকে যারা বিএনপিতে এসেছেন বা অন্য দল থেকে যারা বিএনপিতে এসেছেন, তাদেরকে কেনাকাটা করা সহজ। তারা সরকারের ইশারায় এটা করছেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বলেছেন, যারা সরকারের সমলোচনা না করে বিএনপিকে সমলোচনা করছে। বিএনপির মধ্যে হতাশা ছড়াচ্ছে। তাদের নিশ্চয়ই অন্যকোন মতলব আছে। তারা দলের শুভাকাঙ্খি নন। এবং তার এই বক্তব্যের পরই বিএনপিতে জাপা নেতাদের অতিউক্তিতে অস্বস্তি বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে জাপার নেতারা কেন এত বাড়াবাড়ি কথাবার্তা বলছেন, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আজকালের মধ্যেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হবে এবং সে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যদি বিএনপি নিয়ে কোন সমলোচনা থাকে বা বিএনপির জন্য যদি কোন পরামর্শ থাকে তাহলে দলীয় ফোরামে দিতে হবে। প্রকাশ্য সভায় বা সেমিনারে এ ধরনের মুখরোচক বক্তব্য দিয়ে হাততালি নেওয়ার যদিগ চেষ্টা করা হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া
হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত
নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান
প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে
আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক
স্থগিত হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন,
‘স্বজন’ প্রশ্নে দলের সিদ্ধান্ত না মানলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও দলীয় এমপির বিরুদ্ধে
সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কেড়ে নেওয়া হতে পারে তাদের দলীয় পদ-পদবি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের মনোনয়নও অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। সব মিলিয়ে
এ ইস্যুতে দলীয়ভাবে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে স্বজনকে
প্রার্থী করা নিয়ে দলের মন্ত্রী ও এমপিদের এরই মধ্যে কড়া ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক
অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো নিকটাত্মীয়
অংশ নিতে পারবেন না। এ বিষয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয়
নির্দেশনা দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে
আনার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদেরও তাগিদ দেন।
এরপর সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠক থেকেই নিকটাত্মীয়দের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ও শাজাহান
খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ টাঙ্গাইলের
ধনবাড়ীতে এবং শাজাহান খান এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান মাদারীপুর সদর উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন।
এ ছাড়া নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরীর সঙ্গেও কথা বলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার
ইশরাক সাবাব চৌধুরী সুবর্ণচরে প্রার্থী হয়েছেন।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরী বলেন, উপজেলা নির্বাচন থেকে তার ছেলেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দলের সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কথা বলেছেন। তিনি তাকে ঢাকায় ডেকেছেন।
তবে তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
নৌকা প্রতীক পাওয়ার পরও প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করেছিলেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের
সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম। এ বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হলেও তিনি সুবিচার
পাননি। এ জন্যই তার ছেলে প্রার্থী হয়েছেন।
গতকাল দলের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে চার
বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, এস এম কামাল হোসেন এমপি,
মির্জা আজম এমপি, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এবং দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া
উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকজন মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে প্রার্থী
করানোর বিষয় নিয়ে অল্পবিস্তর আলোচনা হয়। সেই সঙ্গে দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে নিকটাত্মীয়দের
প্রার্থী করানোর বিষয় নিয়ে নেতারা বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিভিন্ন উপজেলায় সাংগঠনিকভাবে
অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেন নেতারা।
বৈঠকে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রংপুর,
চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের তৃণমূল নেতাদের বৈঠকে সাংগঠনিক বিরোধ নিষ্পত্তির তাগিদ দেওয়া
হলেও কার্যত তা হয়নি। উল্টো উপজেলা নির্বাচন নিয়ে গৃহদাহ পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়েছে।
তৃণমূল নেতাকর্মী দ্বন্দ্ব-বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। এ জন্য কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেন কেন্দ্রীয়
নেতারা। ওই সময়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের
পূর্বনির্ধারিত সাংগঠনিক বৈঠক স্থগিত করার তথ্য জানান। সিলেট ও বরিশাল বিভাগের বৈঠকের
দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ হয়নি।
দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব
বড়ুয়া জানিয়েছেন, ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয়
কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হওয়ার কথা। এ জন্য ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক
স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার রাজশাহী এবং ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক হওয়ার
কথা ছিল। ঢাকা বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল দুই দিনে। প্রথম দিন ২৭ এপ্রিল এবং শেষ দিন
৪ মে।
এদিকে গতকালের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ
নেওয়া তিন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন থেকে
আত্মীয়স্বজনকে সরিয়ে নিতে মন্ত্রী ও দলের এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর
নির্দেশের কথা তাদের জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। এর পর থেকে তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী
ও এমপির সঙ্গে কথা বলছেন। যেসব উপজেলায় মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে
দেওয়া হবে।
আগামী ৮ মে অনুষ্ঠেয় প্রথম পর্বের ১৫০
উপজেলা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মন্ত্রী ও দলীয় এমপির আত্মীয়স্বজন চেয়ারম্যান পদে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে নতুন করে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে।
নাটোরের সিংড়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে
প্রথমে মারধর ও পরে অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় সন্দেহ করা হচ্ছে ডাক, টেলিযোগাযোগ
ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল
হাবীব রুবেলকে।
এদিকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা
জানিয়েছেন, এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনায় খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের
নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, আগামী ২ মে সংসদের অধিবেশন
শুরু হবে। ওই অধিবেশন চলাকালে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক থেকে উপজেলা নির্বাচন
নিয়ে এমপিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, নির্বাচনী এলাকায় প্রভাব
বাড়াতে কয়েকজন মন্ত্রী ও দলের এমপি নিকটাত্মীয় ছাড়াও নিজস্ব লোক তৈরির জন্য পছন্দের
প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। তাই শুধু সন্তান, পরিবার কিংবা আত্মীয়স্বজন
নয়; মন্ত্রী এবং দলের এমপিদের প্রকাশ্যে বা গোপনে উপজেলা নির্বাচনে সম্পৃক্ত না হওয়ার
কড়া নির্দেশনা দেওয়া হবে।
তবে দলীয়ভাবে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও
মন্ত্রী ও দলীয় এমপির অনেকে তা মানবেন না বলে আভাস মিলেছে। এরই মধ্যে অনেক উপজেলায়
মন্ত্রী ও দলের এমপির নিকটাত্মীয়রা প্রার্থী হয়েছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে লড়ছেন
মাজহারুল ইসলাম সুজন এমপির দুই চাচা মোহাম্মদ আলী ও সফিকুল ইসলাম
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন সাহাদারা মান্নান এমপির ছেলে শাখাওয়াত হোসেন সজল। একই জেলায় সোনাতলায় এমপির ভাই
মিনহাদুজ্জামান লিটন
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় নির্বাচন করছেন
আলী আজগার টগর এমপির ভাই আলী মুনসুর
নরসিংদীর পলাশে লড়ছেন ডা. আনোয়ারুল
আশরাফ খান দিলীপ এমপির শ্যালক শরীফুল হক
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রার্থী হয়েছেন
শাহাব উদ্দিন এমপির ভাগনে সোয়েব আহমদ
নোয়াখালীর হাতিয়ায় লড়ছেন মোহাম্মদ আলী
এমপির স্ত্রী ও দুইবারের সাবেক এমপি আয়েশা ফেরদাউস ও ছেলে আশিক আলী।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ড. আব্দুর রাজ্জাক
এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ
মাদারীপুর সদর উপজেলায় শাজাহান খান
এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান প্রার্থী হয়েছেন
এ ছাড়া ধাপে ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে অনেক মন্ত্রী-এমপির নিকটাত্মীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক
লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আগামীকাল আজ শুক্রবার।
১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল আজকের এদিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কৃষক লীগের ৫২ বছর পূর্তি
উপলক্ষে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধু কৃষক নেতা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতকে
কৃষক লীগের কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেন। বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনায় ব্যারিস্টার বাদল রশিদকে
সভাপতি ও আব্দুর রউফকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠিত হয়।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কৃষক
লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলে কৃষিবিদ সমীর চন্দকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম
স্মৃতিকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
কৃষক লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের সভাপতি কৃষিবিদ
সমীর চন্দ দলের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান।
এসময় তিনি বলেছেন, দেশের কৃষির উন্নয়ন এবং কৃষকের স্বার্থ রক্ষার
জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ কৃষক
লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে কৃষক লীগ কৃষকদের সংগঠিত করা, তাদের দাবি আদায়
এবং দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে আসছে।
আজ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৬টায় সংগঠনটির ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
উপলক্ষে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা এবং দলীয়
পতাকা উত্তোলন। এছাড়াও সকাল ৭টায় মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে ধানমন্ডির ৩২ পর্যন্ত শোভাযাত্রা।
সকাল সাড়ে ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ
হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর কর্মসূচি রয়েছে।
এদিন বিকাল ৩টায় কৃষি ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্রের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী। আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করবেন কৃষক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু।
কৃষক লীগ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ব্রিটিশ হাইকমিশনার বিএনপি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শামা ওবায়েদ সারাহ কুক
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন মন্ত্রী-এমপি আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক স্থগিত হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। আজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনাটি জারি করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্য স্বজনরা প্রার্থী হতে পারবেন না। এটি আওয়ামী লীগ সভাপতির একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল পর্যন্ত যে পরিবারতন্ত্র ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল এবং বিভিন্ন জায়গায় যে জমিদারি প্রথা তৈরির শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল সেটা প্রতিরোধের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতির এই উদ্যোগ তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।