নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২৭ মার্চ, ২০১৯
কাজ নেই আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের। কাজের জন্য তারা হা-পিত্যেশ করছেন। কাজের জন্য তারা তাকিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতির দিকে। কিন্তু তাদের ভাগ্যে কোন কাজ ঝুটছে না। পাচ্ছেন না কোন নির্দেশনাও যে কি কাজ করবেন। যার ফলে সিনিয়র নেতারা এটা সেটা করেই সময় কাটাচ্ছেন। একাধিক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, রাজনীতির এই শেষ লগ্নে তারা একটু মর্যাদা চান, তারা একটু গুরুত্ব চান দলের মধ্যে। কিন্তু সেটাও তারা পাচ্ছেন না। এনিয়ে তাদের হতাশা থাকলেও ক্ষোভ নেই। তারা মনে করছেন, নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগ সভাপতি উপযুক্ত সময়ে তাদের কাজে লাগাবেন। আওয়ামী লীগের অন্যতম হেভিওয়েট নেতা উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি পর্দার অন্তরালে। তাকে সর্বশেষ আলোচনায় দেখা গিয়েছিল চকবাজারের চুড়িহাট্টায় আগুন লাগার পর। সেই সময় দীলিপ বড়ুয়া এক বক্তব্যে তাকে আক্রমন করেন এবং তিনি তার পাল্টা জবাব দেন। ব্যাস এই পর্যন্তই। এরপর তার কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান নয়। তিনি নিজের মধ্যেই ডুবে আছেন এবং নিজের পছন্দের লোকজনের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। দলীয় কর্মকাণ্ডে তার উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
আওয়ামী লীগের আরেক হেভিয়েট নেতা তোফায়েল আহমেদ। তিনি অবশ্য অন্যরকম। তিনি আড়ালে যাওয়ার ব্যাক্তি নন। এরমধ্যেই তিনি নিজের কাজ নিজেই খুঁজে নিয়েছেন। প্রচুর লেখালেখি করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং ২৫ মার্চ কালোরাত্রি নিয়ে তিনি ধারাবাহিকভাবে লিখেছেন এবং তার লেখাগুলো যথেষ্ঠ আলোচিত এবং প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সমাবেশ বা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন। কিন্তু আওয়াম লীগের দলবদ্ধভাবে তাকে কোন কাজে লাগানোর খবর পাওয়া যায়নি। এমন কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাও তাকে দেওয়া হয়নি। তোফায়েল আহমেদের মতো একজন নেতাকে কাজে লাগালে আওয়ামী লীগ ভালোই করতেন বলে মনে করেন একাধিক আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা। তবে তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে কোন ক্ষোভ, দু:খ বা হতাশা নেই। তিনি বলেন যে, আমি আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ এটাই আমার সবচেয়ে বড় পরিচয়। সভানেত্রী যখন মনে করবেন, তখন নিশ্চয়ই তিনি কাজে লাগাবেন।
আওয়ামী লীগের আরেক হেভিওয়েট নেতা মোহাম্মদ নাসিম। তিনি আছেন ১৪ দল নিয়ে ব্যস্ত। যদিও ১৪ দলের অবস্থা টালমাতাল। ১৪ দল এখন আধা বিরোধী ও আধা সরকারী দলে পরিনত হয়েছে। সম্প্রতি ১৪ দলের বৈঠকে তিনি কিছু বক্তব্য দিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। সেখানে তিনি প্রশাসনের দাপটের সমালোচনা করেছেন।
আওয়ামী লীগের আরেক হেভিওয়েট নেতা শেখ ফজলুল হক সেলিমকে রাজনৈতিক দৃশ্যপটে একেবারেই দেখা যাচ্ছে না। সংসদের পর থেকে তিনি কোনো কর্মকাণ্ডের মধ্যে নেই। তিনি একরকম প্রাক অবসর ছুটি কাটাচ্ছেন বলেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মীরা মনে করেন। দলের কার্যালয় বা সভাপতির অফিসেও তাঁকে দেখা যায় না।
আওয়ামী লীগের অন্যধারার নেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী। ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি আলোচিত হন যে সংস্কার বিরোধী ও মাইনাস ফর্মুলার বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠস্বর হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতির অত্যন্ত আস্থাভাজন এবং ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন। দুই মেয়াদে তিনি মন্ত্রিত্ব পাওয়ার এবার নাটকীয়ভাবে মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়েন। তারক্ষেত্রে ধারণা করা হয়েছিল যে তাঁকে সংসদ উপনেতা করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংসদ উপনেতা হিসেবে সাজেদা চৌধুরীকে বেছে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। যারফলে মতিয়া চৌধুরীর এখন আকুণ্ঠ অবসর। এই অবসরে তিনি পড়াশুনা করছেন এবনহ লেখালিখি করেই সময় পার করছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন। তবে দলীয় কর্মসূচিগুলোতে তাঁর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। প্রধানমন্ত্রীর যেকোনো অনুষ্ঠানে বা কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা যায়। কিন্তু তারও কোনো সুনির্দিষ্ট কাজ নেই।
প্রশ্ন হলো যে আওয়ামী লীগের এরকম বর্ষীয়ান, সিনিয়র এবং বিচক্ষণ নেতাদেরকে কেনো সাইডলাইনে বসিয়ে দেয়া হয়েছে? যখন ৭ই জানুয়ারি মন্ত্রীসভা গঠন করা হয়েছিল তখন বলা হয়েছিল যে, দলের জন্য কাজ করার জন্যই তাঁদেরকে সাইডলাইনে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্ত দেখা যাচ্ছে যে, দলের কাজের দায়িত্ব তুলে দেয়া হয়েছে অপেক্ষাকৃত তরুণদের হাতেই। ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হওয়ার পর দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মাহাবুব আলম হানিফ। তিনিও দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে খুব একটা আলাপ আলোচনা বা পরামর্শ করছেন বলে জানা যায় না। তাহলে আওয়ামী লীগে কি সিনিয়র নেতাদের বিদায়ঘন্টা বেজে গেছে? তারা কি অবসরের জন্য প্রাক-প্রস্তুতি নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা অবশ্য তা মনে করেন না। তারা মনে করেন যে এখন দেশে রাজনীতি নেই। বিরোধী দলহীন এই রাজনীতির মাঠে তাই তারা অপাংক্তেয়। যখন সময় আসবে তখন তাঁদের ডাক পরবে। ডাক পরলে তখন তারা নিশ্চয়ই তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।