নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ০৫ এপ্রিল, ২০১৯
‘দলের স্বার্থবিরোধী কাজ করলে এমপি, মন্ত্রী বা কেউই ছাড় পাবেন না। সবাইকে মনে রাখতে হবে দলই সবার উপরে’ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মন্তব্য করেছেন। আজ দলের কার্যনিবাহী বৈঠকে তিনি এই বক্তব্য রাখেন বলে দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে যে, গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এবং এমপিরাই অনেক স্থানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন এবং নৌকা প্রতীককে হারানোর জন্য নানা অপকৌশল নেন বলে আওয়ামী লীগের কাছে তথ্য রয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে এরকম ৫৪ জন এমপিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের দলের মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে দাঁড়ানো, বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা, নৌকার প্রার্থীকে হারানোর জন্য তারা কাজ করেছেন। এবারের উপজেলা নির্বাচনে এ পর্যন্ত ৪৫৫ টি উপজেলার নির্বাচনের মধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করা প্রার্থীরা ১৩৪টিতে পরাজিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, এই নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বলে পরিচিত বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলেও এত বিপুল আসনে আওয়ামী লীগের পরাজয়কে নীতি নির্ধারকরা ভালো চোখে দেখছে না। তারা মনে করছেন যে, আওয়ামী লীগের লোকজনই আওয়ামী লীগকে হারাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থিদের পরাজিত করতে ভূমিকা রেখেছে বা যাদের কারণে উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিজয় হয়েছে কিংবা যাদের কারণে আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে তাঁদেরকে চিহ্নিত করা হবে। তবে এখনই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, যারা দলের বিরুদ্ধে কাজ করেছে তাঁদের তালিকা তৈরি করে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ তাঁদের সতর্ক করে দেবেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ব্যবস্থা না নেওয়ার প্রধান কারণ হলো, উপজেলা নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ছিল না এবং আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল বলেই এটুকু প্রতিযোগিতা উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে হয়েছিল। তাই আওয়ামী লীগ মনে করছে এখনি ব্যবস্থা নয়, এখন তাদের সতর্ক করতে হবে। ভবিষ্যতে যেন দলের স্বার্থ বিরোধী কোন কাজ কেউ না করে সে ব্যাপারে এখন থেকেই সতর্ক হওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, আগামী অক্টোবরে যে কাউন্সিল অধিবেশন হবে তার আগে স্থানীয় পর্যায়ে সম্মেলন করে নতুন করে কমিটি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের এই নীতিনির্ধারনী সভায়।
প্রত্যেকটি এলাকায় যেন দলীয় কোন্দল না থাকে এবং দলের মধ্যে যেন একটা শৃঙ্খলার মতো আসে সেজন্য অনতিবিলম্বে দলের নেতৃত্বের সাংগঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ মনে করছে উপজেলা নির্বাচনে যাই হোক না কেন আওয়ামী লীগ যেকোন সময় অটুট ঐক্যের মধ্যেই থাকে। এই ঐক্যবদ্ধতাই আওয়ামী লীগের বড় শক্তি। ঐ সভায় বলা হয়েছে যে, যারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছে। তাদেরকে দলের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে এবং তারা যেন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে সে ব্যাপারেও দৃষ্টি দিতে হবে। এই উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমেই দলের মধ্যে যে বিভক্তি এবং কোন্দল তৈরী হয়েছিল সেটাকে যত দ্রুত সম্ভব মিটিয়ে ফেলতে হবে। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, আওয়ামী লীগের যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। বরং তারা যেন দলের নীতি এবং নির্বাচনের ইশতেহারের আলোকে কাজ করেতে পারেন সেটা নিশ্চিত করা হবে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, স্বতন্ত্রভাবে বিদ্রোহী যারা বিজয়ী হয়েছে তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং তারা মনে করছেন যে, তারা দলের জন্য এবং নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে কাজ করতে প্রস্তুত।
অর্থাৎ স্বাভাবিক বিবেচনায় আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনে বিভক্তি এবং নৌকা প্রতীকে কিছু কিছু এমপি মন্ত্রীদের ভূমিকা এবং দলের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না। কারণ মনে করছে যেহেতু আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আছে এবং নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি তাই এটাকে স্বাভাবিক একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ। তবে দলের শৃঙ্খলা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দলের শৃঙ্খলার জন্য যেন ভবিষ্যতে বিঘ্নিত না হয় সেজন্য এখন থেকেই নেতৃবৃন্দ যেন তৎপর থাকে সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।