নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১৭ এপ্রিল, ২০১৯
বেগম খালেদা জিয়া প্যারোল বা জামিন নিয়ে লন্ডনে যেতে চান এবং সেখানে তিনি দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা নিতে চান। এরকম একটি দরকষাকষি চলছে সরকারের সঙ্গে। কিন্তু সরকার তাঁর ব্যাপারে সুস্পষ্ট কতগুলো নীতি গ্রহণ করেছে।
১. বেগম খালেদা জিয়াকে কোনো অবস্থাতেই জামিনে মুক্তি দেয়া হবে না। খালেদা জিয়া যদি চান তাহলে প্যারোলে যেতে হবে। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বেগম খালেদা জিয়া যে দুটি মামলায় দণ্ডিত হয়েছে সে দুটি মামলায় এখনও তাঁর জামিন হয়নি। এ দুটি মামলায় তাঁর জামিন পাওয়া প্রায় দুঃসাধ্য। কারণ জিয়া এতিমখানা মামলায় হাইকোর্ট তাঁর দন্ড বাড়িয়ে দশ বছর করেছে। কাজেই আপিল বিভাগ ছাড়া তাঁর জামিন পাওয়ার কোনো সম্ভাবণা নেই। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বেগম জিয়ার সাত বছরের দণ্ড হয়েছে। সেই মামলায় খালেদা জিয়া এখনও পর্যন্ত জামিনের আবেদন করেননি। জামিনের আবেদন করলে পরে শুনানি করে বিবেচনা করা হবে। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এ দুটি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি মামলা পক্রিয়াধীন রয়েছে। বিশেষ করে ২০১৪ এবং ১৫ সালে যে অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস, গাড়ি ভাঙচুর ও মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে খালেদা জিয়া জড়িত। হুকুমের আসামী হিসেবে তিনি সবগুলো মামলাতেই আছেন। যখনই মামলার চার্জশীট চূড়ান্ত করা হবে তখনই তিনি এসব মামলায় তালিকাভুক্ত আসামী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন বলে সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। কাজেই সরকার কোনো অবস্থাতেই তাঁকে জামিনে মুক্তি দেয়ার চিন্তা করছে না বলে জানা গেছে। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার পরিবার এবং খালেদা জিয়া নিজে চাইছেন, সরকার যদি জামিনে বিরোধীতা না করে তাহলে জামিন পেয়ে বের হয়ে তিনি উন্নত চিকিৎসা করবেন। এ ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার কোনো মীমাংসা হয়নি।
২. বেগম খালেদা জিয়া চাইছেন জামিন পেয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাবেন। এ ব্যাপারেও সরকারের তীব্র আপত্তি রয়েছে। সরকার কোন অবস্থাতেই তাকে দেশ থেকে বের হতে দিবে না বলে জানা গেছে। কারণ সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে গেলে তিনি সহজেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবেন। দেশ কিংবা রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতায় যুক্ত হতে পারবেন। যেমন তার পুত্র লন্ডন থেকে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এজন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো কোনমতে বিবেচনাতেই নিচ্ছেন না সরকার। বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়ে বিদেশে পাঠালেই সংসদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করবেন। সংসদের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন। এ ব্যাপারে সরকার অনমনীয় কঠোর অবস্থা গ্রহণ করেছে। সরকারের একটি দায়িত্বশীল ব্যক্তি বলেছেন, বিএনপি ছয়জন সদস্য যদি সংসদে নাও আসেন তাতে সরকারের কিছু যায় আসে না। আমরা সংসদকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রাণবন্ত করার জন্যই চেয়েছিলাম বিএনপি সংসদে আসুক। কিন্তু তাই বলে একজন চিহ্নিত এবং উচ্চ আদালতে দণ্ডিত ব্যাক্তির মুক্তি বিনিময়ে বিএনপিকে সংসদে আনার কোন অভিপ্রায় সরকারের নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সরকার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া অন্য ৫ জন নির্বাচিত সদস্যর সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তাদেরকে সংসদে আনার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদে না আসতে পারলেও অন্যরা সংসদে আসবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এই প্রেক্ষাপটে বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোল বা জামিন বা বিদেশ যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পরেছে। যদিও বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়া ২৫ বা ২৬ তারিখে লন্ডনে যাবেন। কারণ ৩০ এপ্রিল বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যদেরকে শপথ গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, বেগম খালেদা জিয়াকে প্যারোলের জন্য আবেদন করতে হবে। সেই আবেদনে তাকে দণ্ড স্বীকার করতে হবে। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশে থাকবেন। মানবিক কারণে তার প্যারোল চাইতে হবে। অন্যথায় সরকার এই প্যারোল কোন অবস্থাতেই বিবেচনা করবে না বলে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। এ অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বা প্যারোল অনিশ্চিত হয়ে পরেছে। কার্যত যে সমঝোতার উদ্যোগ, তা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি ড. মঈন খান
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপি
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বেগম জিয়া আর ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন না, রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন এ রকম একটি বক্তব্য সামনে নিয়ে আসছেন শামীম ইস্কান্দার।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠিত করা এবং বিভেদ-বিভক্তির দূর করার জন্য যে ডাক দেওয়া হয়েছিল তারপর একটু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল বলে বটে। কিন্তু এখন আবার উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে তৃণমূল বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সামাল দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে নির্বাচন কেন্দ্রীক বিরোধ অন্যদিকে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাওয়া আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তদারকির অভাবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই।
অবশেষে জিয়া পরিবার মুক্ত হচ্ছে বিএনপি। বিএনপির রাজনীতিতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে ঠিক কবে, কখন, কীভাবে এ পরিবর্তন হবে সে সম্পর্কে কেউ কোন সুনির্দিষ্ট ধারণা দিতে পারেনি। তবে বেগম খালেদা জিয়া বিএনপিতে পরিবর্তনের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ নির্বাচনে বিএনপি প্যানেল থেকে নির্বাচিত হলেও দায়িত্বভার না নিতে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সহ চার আইনজীবীকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। তবে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এমন ইঙ্গিত দেন বিএনপিপন্থি এ আইনজীবী নেতা।