নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ০১ মে, ২০১৯
আকস্মিকভাবে বিএনপির পাঁচ এমপির শপথ গ্রহণ শুধু বিএনপিকেই লণ্ডভণ্ড করে দেয়নি, সেই তাণ্ডবে লন্ডভণ্ড হয়েছে ২০ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই ঘটনায় বিএনপির লাভ ক্ষতি কি হয়েছে তা নিয়ে চলছে নানা হিসাব নিকাশ। কিন্তু বিএনপির পাঁচ এমপির শপথ গ্রহণ ইস্যুতে দেউলিয়া হয়ে গেছেন কয়েকজন রাজনীতিবিদ, যারা বিএনপির ওপর নির্ভর করেই রাজনীতি করছিলেন। এই ঘটনায় সবেচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁরাই। বিএনপি শপথ না নিলে আস্তে আস্তে রাজপথের আন্দোলন গড়ে তোলা হবে এবং বিএনপিতে এবং রাজনীতিতে তাঁদের কদর বাড়বে এমন ধারণা তারা করছিলেন। কিন্তু তাঁরা হতাশ হয়েছেন, আশাহত হয়ে পড়েছেন। বিএনপির পাঁচ এমপির শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে রাজনীতি সংসদ কেন্দ্রিক হয়ে গেলো। সংসদের বাইরে যে রাজনৈতিক নেতারা আছেন তাঁরা আপাতত সংসদের বাইরে আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত একরকম অবসর জীবনই কাটাবেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। যেসমস্ত নেতারা নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই পাদপ্রদীপে এসেছিলেন, তাঁরাই আওয়ামী লীগ বিএনপির চেয়ে নিজেদেরকে বড় নেতা হিসেবে আবির্ভূত করেছিলেন এই ঘটনায় তাঁরা এমনভাবে ছিটকে পড়েছেন যে রাজনীতিতে তাঁরা প্রায় বিপন্ন এবং অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনকে নিয়েই এই প্রতিবেদন-
মাহামুদুর রহমান মান্না
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহামুদুর রহমান মান্না। একসময় জাসদ-বাসদ ও পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে মাহামুদুর রহমান মান্না শেষে নিজেই নাগরিক ঐক্য নামে একটি সংগঠন করেছিলেন। কিন্তু সংগঠনের বিকাশ ঘটাতে পারেননি। শেষ্পর্যন্ত তিনি ঠাই নেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। নির্বাচনের আগে তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নীতিনির্ধারক হয়ে ওঠেন। তিনি বিএনপি চালান এবং রাজনীতিতে তাঁর গুরুত্ব অনেক বেশী এরকম একটি ভাবমূর্তি তৈরি করার চেষ্টা করেন। নির্বাচনে তিনি শুধু পরাজিতই হননি বরং তিনি যে নিজেকে জাতীয় নেতা হিসেবে দাবী করেন সেই দাবীও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এই প্রেক্ষিতে মান্না চেয়েছিলেন যে, বিএনপির এমপিরা শপথ গ্রহণ করবে না এবং আস্তে আস্তে তিনি আন্দোলন গড়ে তুলবেন। যারা শপথ গ্রহণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল তাঁদের মধ্যে মান্না অন্যতম। যখন বিএনপি শপথ নিলো তখন সবচেয়ে বড় শত্রু হয়েছেন মান্না। মান্না কোনো রাখঢাক না রেখেই এই শপথের সমালোচনা করেছেন। বাস্তবতা হলো এই শপথের কারণে রাজনীতিতে দেউলিয়া হয়ে পরলেন মান্না। কারণ এই শপথের মধ্য্যদিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের রাজনীতির প্রায় মৃত্যুঘন্টা বেজে গেছে। বিএনপি এখন নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত, নিজের দল গোছাতেই ব্যস্ত। এই বাস্তবতায় মান্নাদের মত ‘পরগাছারা’ বিএনপিতে কতটা প্রয়োজন এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিএনপির মধ্যেই। কাজেই মান্নার ভবিষ্যৎ রাজনীতি অনিশ্চয়তার মুখে।
আসম আব্দুর রব
জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের আরেক নেতা আসম আব্দুর রবও নির্বাচনের সময় বেশ হৈচৈ করেছিলেন। ঐক্যফ্রন্টের নেতা হয়ে তিনি সরকারকে ফেলে দেয়ার হুমকি ধামকিও কম দেননি। নির্বাচনে জনগণ তাঁকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছে। নির্বাচনের পর তিনি হঠাৎ সরব হঠাৎ নিরব ভূমিকা পালন করতেন। বিএনপি নেতাদের শপথ না নেয়ার পক্ষে তিনিও ছিলেন অন্যতম। কিন্তু বিএনপি শপথ নেয়ায় তিনিও মুষড়ে পড়েছেন। রাজনীতিতে তিনিও একটা অপ্রয়োজনীয় উপাদানে পরিণত হয়েছেন।
কাদের সিদ্দীকি
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকিও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছিলেন বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে। রাজনীতির মাঠে তিনি যতটা না আলোচিত তিনি তারচেয়েও তিনি আলোচিত ৭৫ পরবর্তী সময়ের ভুমিকার কারণে। কিন্তু সেই ধারণাকে আড়াল করে তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজনীতিতে বিএনপি ঘরানার রাজনীতিতে নিজেকে বিকশিত করতে চেয়েছিলেন। ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে নির্বাচনে তাঁর মনোনয়ন বাতিল হয়েছিল। নির্বাচনের পরও তিনি চেয়েছিলেন সকলকে নিয়ে আন্দোলন করতে। কিন্তু বিএনপির এই শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে কাদের সিদ্দীকির রাজনীতিও একটা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়লো।
শুধু জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নয় ২০ দলের অনেকেরই রাজনীতি এখন সংকটের মধ্যে পড়েছে। তাঁদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত এখন গাড় অন্ধকারে ঢাকা। এদের মধ্যে রয়েছেন কল্যাণ পার্টির নেতা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ ইব্রাহিম, এলডিপির নেতা কর্নেল অলি আহমেদসহ আরও অনেকেই। এরা এখন কি করবেন? কারণ বিএনপি এখন দুটো কাজে ব্যস্ত থাকবে। এক হলো- সংসদ কেন্দ্রীক রাজনীতি। সংসদে বিএনপি চাইবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং অন্যান্য বিহশোয়গুলোকে সামনে নিয়ে এসে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। অন্যদিকে এবিনপির এখন সবচেয়ে বড় কাজ যেটা সামনে এসেছে সেটি হলো দল গুছানো। কারণ হতবিহব্বল, হতাশ, বিক্ষুব্ধ এবং প্রায় নেতিয়ে পরা দলটিকে জাগ্রত করাই এখন বিএনপির চ্যালেঞ্জ। সেখানে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা ২০দলের দিকে কোনো আগ্রহ নেই। যারা রাজনীতিতে নিজের শক্তির ওপর বলিয়ান না হয়ে অন্য দলের ওপর নির্ভরশীল হয় তাঁদের রাজনীতি এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রায় নিঃশেষ যে হয়ে গেলো তা আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে পাঁচ জনের শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে।
বাংলা ইনসাইডার/এসআর
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।