নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৮ মে, ২০১৯
বঙ্গবন্ধু পরিবারের বাইরে কাউকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেওয়া হলে তা তৃণমূলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আওয়ামী লীগে তৃণমূল পর্যায়ে পরিচালিত এক জরিপে এরকম তথ্য উঠে এসেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অবসর গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। শুধু অবসর গ্রহণের প্রক্রিয়াই নয়। একই সঙ্গে তিনি পরিকল্পনা করছেন যে, তিনি কোনো উত্তরাধিকার মনোনয়ন করবেন না। বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাউকেও তিনি আওয়ামী লীগে নেতৃত্বে আনতে চান না। বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ যদি দলের নেতৃত্বে আসতে চায় তাহলে তাকে তৃণমূলের ভোটে বা জনগণের মতামতের ভিত্তিতে আসতে হবে। নিজ যোগ্যতায় আসতে হবে। নেতা-কর্মীদের সমর্থন নিয়েই তাদের আসতে হবে যেটা কোনোভাবেই ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া নয়। এটা নিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন। তৃণমূল পর্যায় থেকে তাকে বলা হয়েছে যে, এটা জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন এবং জাতির পিতার কন্যা ছিল জন্যই আওয়ামী লীগ আজ এ অবস্থায় এসেছে। জাতির পিতার পরিবারের বাইরে কেউ আওয়ামী লীগের হাল ধরলে দলের ঐক্য থাকবে না। আওয়ামী লীগের শক্তিও খর্ব হবে এবং দল দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়বে। এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের একটি মহল সারাদেশে আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে একটা জরিপ পরিচালনা করেছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই জরিপে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
দেখা গেছে যে, আওয়ামী লীগ সভাপতিকে তারা এখনই অবসর গ্রহণ করতে দেওয়ার পক্ষপাতি নয়। অন্তত ৯৮ জন আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী বলছেন যে, আমৃত্যু শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা উচিৎ। এদের প্রায় সবাই বলেছেন যে, শেখ হাসিনার অবসর গ্রহণের বয়স এখনও হয় নি। তারপরও শেখ হাসিনার বিকল্প কে এই প্রশ্ন করা হলে ৯৭ জন উত্তরদাতা বলেছেন যে শেখ হাসিনার বিকল্প এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনা। তারা অন্য কোনো বিকল্প মেনে নিতে রাজি নয়।
তৃতীয় প্রশ্ন ছিল যে, শেখ হাসিনা যদি শেষ পর্যন্ত অবসর নেন তাহলে তার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন? এর উত্তরে সজীব ওয়াজেদ জয় সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং শেখ রেহানার নাম এসেছে। তবে তারা মনে করেন যে, এখনি শেখ হাসিনার অবসরে যাওয়ার মতো সময় হয়নি। আওয়ামী লীগের রাজনিতিতে এখন শেখ হাসিনার অবসর নিয়ে নতুন করে আবেগ এবং উত্তেজনা তৈরী হয়েছে। তৃনমূলের কাছে এটা স্পর্শকাতর বিষয়ে পরিনত হয়েছে। তৃনমূলের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে এ ব্যাপারে বুঝাবে তিনি যেন এখনই নেতৃত্ব না ছাড়েন। প্রয়োজনে আবেগময় কর্মসূচী দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে বলে তৃনমূলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে। এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি কিভাবে অবসরের সিদ্ধান্ত নিবেন এবং তা বাস্তবায়ন করবেন এটাই জটিল সমীকরণ হয়ে দাড়িয়েছে। কারণ তিনি তৃনমূলের প্রবল বাধার মুখে পড়বেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের যে কাঠামো তাতে কাউন্সিলরদের ভোটেই নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়। আওয়ামী লীগের তৃনমূল থেকে এরকম সিদ্ধান্ত উঠে আসছে, শেখ হাসিনা যদি অবসরের ঘোষণা দেন আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে তাহলে সভাপতি পদে কোন প্রার্থী কেউ দিবে না। উল্লেখ্য যে, ১৯৮১ সাল থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে কেউই প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষন করেনি। যদিও আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতির পদে যে কেউ মনোনয়ন জমা দিতে পারে। একাধিক ব্যক্তি যদি সভাপতি পদে ইচ্ছুক হয় তাহলে সেখানে কাউন্সিলরদের ভোটের ব্যবস্থাও রয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগে এরকম ভোটের মাধ্যমে কাউন্সিলরের ঘটনা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একবারও ঘটেনি। ধারণা করা হচ্ছে আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের মধ্যে একজন উত্তরসূরী খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন এবং তিনি খুঁজতে চেষ্টা করছেন দলের মধ্যে জনপ্রিয় কে? কিন্তু এটা যাচাই করার উল্টো ফল হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, শেখ হাসিনাকে ছাড়া তৃনমূলের কেউই অন্য কাউকে ভাবে না। অন্য কারো নেতৃত্বের ব্যাপারে তারা কেউই আস্থাশীল নয়। এজন্য শেখ হাসিনার অবসরের চিন্তা হয়তো তৃনমূলের বাধায় পণ্ড হয়ে যেতে পারে। এবং আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতাকর্মীই জানেন, শেখ হাসিনা দুর্বল একটা জায়গাতেই, সেটা হলো তৃনমূলের নেতাকর্মীদের কাছে। কারণ আওয়ামী লীগ সভাপতি সবসময় বলেছেন, দুর্দিনে তার বিপদে তৃনমূলই তার পাশে এসে দাড়িয়েছে। তৃনমূলের জন্য তিনি আজেকে এই জায়গায় এসেছেন। তৃনমূলকে তিনি মূল্যায়ন করেন। এরকম বাস্তবতায় শেখ হাসিনার অবসর পরিকল্পনা বিলম্বিত হতে পারে, এমনকি তা ভেস্তেও যেতে পারে।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।