নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ৩১ মে, ২০১৯
উত্তরাধিকার রাজনীতির বিরুদ্ধে একটি নতুন মডেল দাড় করিয়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। সন্তান, আত্মীয়রা উত্তরাধিকার নয়, বরং বিজেপিতে নেতৃত্ব বাছাই করা হচ্ছে দলের মধ্যে কর্মঠ, জনপ্রিয় এবং সৎ ইমেজের ব্যক্তিদেরকে। যেভাবে অমিত শাহ বিজেপির সভাপতি হয়েছেন এবং এবার প্রথমবারের মতো নির্বাচন করে এবার মন্ত্রিত্ব পেলেন। ধারণা করা হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদির উত্তরসূরী হিসেবেই অমিত শাহকে তৈরী করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিজেপির এই মডেলটি অত্যন্ত পছন্দ করেছেন। উত্তরাধিকার রাজনীতি নয়, বরং দলের মধ্যে কর্মঠ, দলের জন্য পরীক্ষিত এবং দলের মধ্যে জনপ্রিয় এবং যার কোন ব্যক্তিগত রাজনৈতিক কালিমা নেই এরকম ব্যক্তির নেতৃত্বে আসা উচিত বলে আওয়ামী লীগের সভাপতি বিভিন্নজনের কারণে তার মতামত ব্যক্ত করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি টানা তৃতীয়বার এবং চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই রাজনীতির ব্যাপারে তার তিনটি সুস্পষ্ট অবস্থান ঘনিষ্ঠদের কাছে ব্যক্ত করেছেন।
প্রথম হলো; তিনি আর প্রধানমন্ত্রী হবেন না। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেও তিনি থাকবেন না। রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার সময় হয়েছে তাঁর। দীর্ঘদিন তিনি রাজনীতি করেছেন এখন আর নয়।
দ্বিতীয় হলো; রাজনীতিতে তিনি অবসর গ্রহণ করলে কে আওয়ামী লীগের হাল ধরবে এটা নির্ধারণ করার উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা ব্যক্তি তিনি নন। তিনি সবসময় বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন। যাকে তারা মনোনয়ন করবেন। তিনিই দল চালাবেন।
তৃতীয় হলো; তার পুত্র, কন্যা, বোনসহ নিকটাত্মীয়দের আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী নন। এই মনোভাবটি তিনি অতিসম্প্রতি প্রকাশ করছেন। এর পিছনে দু্টি কারণ রয়েছে বলে আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা মনে করছেন। এর একটি হলো ৭৫ এর ১৫ আগস্ট পরিবারের দুর্বিষহ দু;সহ স্মৃতি আর দ্বিতীয়টি হলো, এভাবে উত্তরাধিকার মনোনয়ন করলে তা যে খুব সুখকর হয় না তা তারেক জিয়া বা রাহুল গান্ধী সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
সাম্প্রতিক সময় ভারতের রাজনীতিতে বিজেপি ব্যাপকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে। সর্বভারতের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এর পেছনে নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত ইমেজ যেমন একটা বড় ভূমিকা রাখছে তেমনি অনেকেই মনে করেন, উত্তরাধিকারের রাজনীতির বিরুদ্ধে বিজেপি একটা প্রতিবাদ। উপমহাদেশের রাজনীতিতে ক্রমান্বয়ে এখন উত্তরাধিকারের রাজনীতি থেকে নিজেদের মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ভারত তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। রাজনীতিতে অত্যন্ত দূরদর্শী এবং বিশ্ব রাজনীতিতে অন্যতম প্রজ্ঞাবান নেতা শেখ হাসিনা সম্ভবত অনেক আগেই এটা বুঝতে পেরেছেন। এজন্যই তার নিকটাত্মীয় কাউকে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করেননি। সম্প্রতি ভারতে অমিত শাহর নির্বাচনে জয়লাভ এবং অমিত শাহর মন্ত্রীত্বের শপথের পর জাপানে অবস্থারত প্রধানমন্ত্রী তার ঘনিষ্ঠদের বলেছেন যে, বিজেপির এই মডেলটি অত্যন্ত ভালো একটি মডেল। এটার ফলে রাজনীতিতে নিষ্ঠাবান এবং ত্যাগি লোকজন উৎসাহী হবেন। শিক্ষিত লোকজন রাজনীতিতে আগ্রহী হবেন। তিনি মনে করেন, যদি রাজনীতিতে নেতৃত্বের দরজা বন্ধ থাকে। একটি পরিবার বা একটি ব্যক্তির হাতে যদি সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত থাকে তাহলে শিক্ষিত, ভালো লোকজন রাজনীতিতে আসবে না। এরকম মন্তব্য প্রধানমন্ত্রী করেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সেই কারণেই আওয়ামী লীগ সভাপতি বিজেপির মডেল বাংলাদেশে কি প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন করা যায়, সেটাই দেখছেন। বিজেপির মডেলের মৌলিক তিনটি বৈশিষ্ঠ রয়েছে। এর মধ্যে;
১. উত্তারাধিকার কাউকে নেতৃত্বে না আনা।
২. দল এবং সরকারের মধ্যে বিভাজন তৈরী করা। যেমন অমিত শাহ এখন মন্ত্রী হলেন, স্বাভাবিকভাবে তাকে সভাপতির পদ ছাড়তে হবে। বিজেপির সভাপতির পদ অন্য কেউ নিবে। একই সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে যারা আছেন তাদের অধিকাংশই মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করবেন না।
৩. চাকরি দেওয়া নেতৃত্ব নয়। স্বতঃস্ফূর্ত নেতাকর্মীদের মনোভাবের ভিত্তিতেই নেতৃত্ব তৈরী করা।
তাহলে কি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেষ মেয়াদে এসে একজন অমিতশাহ খুঁজবেন? উত্তারাধিকার মনোনয়ন করবেন নাকি এটা ছেড়ে দিবেন নেতাকর্মীদের উপর? প্রশ্ন হচ্ছে বিজেপি যেভাবে সংগঠিত হয়েছে সেভাবে আওয়ামী লীগ সংগঠিত হতে পারবে? কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তস্নাত এই সংগঠন এবং এটা বুঝতে কোন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। শেখ হাসিনা যদি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে না থাকে তাহলে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক শক্তি অটুট রাখা এবং দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা দূরহ হয়ে পরবে। শেখ হাসিনা কি এই ঝুঁকি নিবেন?
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।