নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২২ জুন, ২০১৯
আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে ৭০ বছর পূর্ণ করছে। একটি রাজনৈতিক দলের ৭০ বছর নি:সন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে ৭০ বছর সমান জনপ্রিয় থাকা একটি রাজনৈতিক দলের জন্য অবশ্যই ঈশ্বনীয় ব্যাপার। কিন্তু আওয়ামী লীগের আজকের যে অবস্থান, এটি ৭০ বছরের ইতিহাস নয়। আওয়ামী লীগকে বিভিন্ন সময় নানা প্রতিকূলতা এবং অস্তিত্বের সংকটের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হয়েছে। অস্তিত্বের সংকটের মধ্যেও আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময় শেষ পর্যন্ত উত্তীর্ণ হয়েছে এবং কঠিন পরীক্ষায় পাশ করেছে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষন করলে দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগ পাঁচবার মোটা দাগে অস্তীত্বের সংকটে পড়েছিল এবং প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এই সংকটের সময়কাল উল্লেখ করতে পারি আমরা এভাবে:
১৯৫৫ সাল: ১৯৫৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এ কাউন্সিলে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ একটি সেক্যুলার রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর ফলে আওয়ামী লীগ প্রথম অস্তীত্ব সংকটে পড়েছিল। এরফলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রচারণা করা হয়েছিল যে, আওয়ামী লীগ হিন্দুদের সংগঠন। পাকিস্তানকে বিভক্ত করার জন্যই এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এরকম একটি প্রচারণা করে আওয়ামী লীগকে ভারতের এজেন্ট সংগঠন হিসেবে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগকে অস্তীত্ব সংকটে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। এই সম্মেলনের জের ধরেই ১৯৫৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কাগমারি সম্মেলনে আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে বিভক্ত হয়ে যায়। মওলানা ভাসানি আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ অস্তীত্বের সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল।
১৯৫৮ সাল: আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় অস্তীত্ব সংকটে পড়ে ১৯৫৮ সালে যখন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে দেওয়া হয়। জেনারেল ইস্কান্দার মির্জার সংবিধান বাতিল, কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা বাতিল এবং রাজনৈতিক সমস্ত কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে। এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অসংখ্য নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসব নেতাদের গ্রেপ্তারের পরে আওয়ামী লীগ অস্তীত্বের সংকটে পরে। এ সময় আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। তিনি আওয়ামী লীগের গোপন বৈঠক এবং নানা রকম আলাপ আলোচনাসহ নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করা এবং দল পরিচালনার জন্য অর্থ যোগানসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। অস্তীত্ব টিকিয়ে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগের।
১৯৭৫ সাল: আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইতিহাসে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় অস্ত্বিত্বের সংকটে পড়েছিল ৭৫এর ১৫ই আগস্ট। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর কার্যত আওয়ামী লীগ বিলীন হয়ে যাওয়ার সংকটে পড়েছিল। ৭৫ থেকে ৮১ পর্যন্ত শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেয়ার আগে আওয়ামী লীগ ছিল শতভাগ দ্বিধাবিভক্ত। এই সময় বিভক্ত আওয়ামী লীগের ৩টি অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এরা হলো আওয়ামী লীগ মিজান গ্রুপ, আওয়ামী লীগ মালেক গ্রুপ, আওয়ামী লীগ পল্টু গ্রুপ। তারপর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করার পর এই দ্বিধাবিভক্তি কাটিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও ঐক্যবদ্ধ করেন এবং আওয়ামী লীগকে আস্তে আস্তে একটি শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যান। মনে করা হয়, ৭৫এর ১৫ই আগস্টের পর আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় অস্তিত্বের সংকটে পড়েছিল।
২০০১ সাল: ২০০১ সালেও আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পর আওয়ামী লীগে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কারণেই আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হিসেবে আবির্ভুত হয়।
২০০৭ সাল: ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগ আবার অস্তিত্বের সংকটে পড়েছিল। এই অস্তিত্বের সঙ্কট তৈরি করেছিলেন আওয়ামী লীগের কিছু সংস্কারপন্থী নেতারা। মাইনাস ফর্মুলার মাধ্যমে কার্যত তাঁরা আওয়ামী লীগকে অস্তিত্বহীন করার ষড়যন্ত্রে মেতেছিলেন। অন্যান্য বারের মত এবারও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আন্তরিকতা এবং তাঁদের দৃঢ় অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যায়নি। বরং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আরও শক্তিশালী অবস্থায় উন্নীত হয়।
আওয়ামী লীগের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখ যায়, আওয়ামী লীগ যতবার অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে ততবার আওয়ামী লীগ আরও সঙ্ঘবদ্ধ ও শক্তিশালী হয়ে উঠে দাড়িয়েছে। এটাই হলো আওয়ামী লীগের রাজনীতির বৈচিত্র্য।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ব্রিটিশ হাইকমিশনার বিএনপি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শামা ওবায়েদ সারাহ কুক
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন মন্ত্রী-এমপি আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। আজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনাটি জারি করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্য স্বজনরা প্রার্থী হতে পারবেন না। এটি আওয়ামী লীগ সভাপতির একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল পর্যন্ত যে পরিবারতন্ত্র ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল এবং বিভিন্ন জায়গায় যে জমিদারি প্রথা তৈরির শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল সেটা প্রতিরোধের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতির এই উদ্যোগ তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।