নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৫৯ পিএম, ২২ জুন, ২০১৯
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ নি:সন্দেহে প্রধান এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। কিন্তু আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষন করলে দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকেই সকল প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগকে তার রাজনৈতিক প্রচারাভিযান এগিয়ে নিতে হয়েছে। রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ কখনোই ফাঁকা মাঠে গোল দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর থেকে প্রত্যেকটা সময় শক্তিশালি প্রতিপক্ষর সঙ্গে লড়াই করে আওয়ামী লীগকে টিকে থাকতে হয়েছে, এগিয়ে যেতে হয়েছে। রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ কারা এবং কিভাবে ছিল? সেই প্রতিপক্ষদের কিভাবে আওয়ামী লীগ পরাজিত করলো আসুন দেখা যাক:
মুসলিম লীগ: আওয়ামী লীগ যখন রাজনীতি শুরু করেছিল। সেই রাজনীতির শুরুতেই প্রথম প্রতিপক্ষ হিসেবে ছিল তৎকালীন পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকার। মূলত মুসলিম লীগ সরকারের অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদ জানাতেই আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছিল। আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকেই নির্যাতন, নীপিড়ন এবং নিষ্পেষণের শিকার হয়েছিল। কারণ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে দাড়াতে দিতে চাচ্ছিল না। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ যেন বিকশিত না হতে পারে সেজন্য যা যা করার দরকার, তার সবই করেছিল ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কারাবরণ জেল জুলুম নীপিড়ন নির্যাতনের ইতিহাস যারা বিন্দুমাত্র জানেন, তারাই জানেন যে আওয়ামী লীগের ওপর কি বিভৎস রকম নীপিড়ন হয়েছিল। কিন্তু এই নীপিড়নে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করতে পারেনি মুসলিম লীগ। বরং মুসলিম লীগই নিষ্পেষিত হয়েছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের নাম নিশানা মুছে দিয়েছে বাংলাদেশের জনগন। সত্তরের নির্বাচনের মাধ্যমে মুসলিম লীগকে চুড়ান্তভাবে পরাজিত করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
জাসদ: স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উদ্বেলিত হয়েছিল জাসদ। বাইরে বৈপ্লাবিক সমাজতন্ত্রের আওয়াজ তুললেও জাসদ মূলত ছিল স্বাধীনতা বিরোধী চক্র এবং বিভ্রান্ত বামদের এক প্লাটফর্ম। এই জাসিই জ্বালাও পোড়াও এবং নানা রকম কুৎসা রটানোর মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে কোনঠাসা করার চেষ্টা করে। সাধারণ মানুষের মধ্যে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা হ্রাসের ক্ষেত্রে জাসদের প্রপাগাণ্ডা মিথ্যাচার এবং ভ্রান্ত রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বিশেষকরে জাসদের গণবাহিনীর সশস্ত্র তৎপরতা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটিয়েছিল। যার দায় উঠেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপর। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলে ৭৫ এর ১৫ আগস্ট পটভূমি তৈরীতে জাসদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।কিন্তু এই জাসদ তার অস্তীত্ব টিকিয়ে রাখতে পারেনি। জাতির পিতার মৃত্যুর পর জাসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কর্ণেল তাহেরও জিয়াউর রহমানের নির্মমতার শিকার হন এবং জাসদ দিকভ্রান্ত রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। এখন বহু বিভক্ত জাসদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে মূল্যহীন। দুটি অংশ আওয়ামী লীগের লেজুরভিত্তি করে কোনরকম অস্তীত্ব টিকিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব নেই। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক এই প্রতিপক্ষ নি:শোষিত হয়েছে।
বিএনপি: বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের তৃতীয় প্রতিপক্ষ বিএনপি। মূলত ৭৫ এর ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বেনিফিশিয়ারি হিসেবে বিএনপি আত্মপ্রকাশ করে। বিএনপির প্রধান লক্ষ্যই ছিল আওয়ামী লীগকে নি:শেষ করে দেওয়া। জিয়াউর রহমান তার বিভিন্ন বক্তৃতায় বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ নামের কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব থাকবে না। শুধু জিয়াউর রহমান না, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপির চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব নিয়ে বেগম খালেদা জিয়াও ঘোষণা করেছিলেন যে, আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব বিলীন করতে হবে এবং দেশে আওয়ামী লীগ নামে কোনো রাজনৈতিক দল থাকবে না। এ প্রসঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া ২০০১ সালের ২৩শে জুন এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘এবার নৌকাকে মাটির নিচে পুতে ফেলতে হবে।‘ ১৯৮১ সাল থেকেই আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়েছিল বিএনপি। বিএনপি আওয়ামী লীগের প্রায় দেড় লাখ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টে জানা যায়। ৭৫এর পর থেকে ৮১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রায় ৮লক্ষ নেতাকর্মীকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। এই সবকিছু করার পরও রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রধান আশ্রয়স্থল বিএনপি এখন নিজেরাই রাজনৈতিক অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। আওয়ামী লীগ তার প্রবল প্রতিপক্ষকে শুধু জনগণের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে এবং ভোটের রাজনীতিতে রাজনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছে।
জাতীয় পার্টি: আওয়ামী লীগের স্বল্পকালীন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছিল জাতীয় পার্টি। ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন। যেকোনো সামরিক শাসকরা ক্ষমতা গ্রহণ করলেই প্রথম আক্রান্ত হয় আওয়ামী লীগ। কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের রাজনৈতিক দল। এসময় জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগকে ভাঙার কৌশল নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ থেকে অনেকে বেরিয়ে গিয়ে অনেকে বেরিয়ে গিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিল। ১৯৮৬র নির্বাচনে মিডিয়া কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করেছিল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি। কিন্তু জাতীয় পার্টি এখন আওয়ামী লীগের একটি লেভেল ছাড়া কিছুই নয়। মহাজোটের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রশংসা করা এবং গৃহপালিত বিরোধী দল হিসেবে কাজ করাই জাতীয় পার্টির প্রধান রাজনৈতিক ধর্ম। এভাবেই আওয়ামী লীগের প্রবল প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলটি আওয়ামী লীগের একান্ত অনুগত রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে।
শুধু এই কয়টি রাজনৈতিক দল ছাড়াও প্রচন্ড আওয়ামী বিরোধী রাজনৈতিক দল বিলীন হয়ে গেছে বা কেউ কেউ আওয়ামী লীগের লেজুরবৃত্তি করে দিন কাটিয়ে দিচ্ছে। ৭৫এর ১৫ আগসটের আত্মস্বীকৃত খুনিদের দল ফ্রিডম পার্টি বা ডেমোক্র্যাটিক লীগের মত দলগুলো বিলীন হয়ে গেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কট্টর সমালোচক চীনপন্থি দলগুলো, সাম্যবাদী দল ওয়ার্কার্স পার্টি এখন আওয়ামী লীগের গভীর মিত্রে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটাই একটা অদ্ভুত বাস্তবতা যে, যে রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের যত বেশি প্রতিপক্ষ হয়েছিল সেই রাজনৈতিক দলগুলো এখন ততটাই দেউলিয়া, নিঃস্ব হয়ে গেছে। হয় তাঁদেরকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে রাজনীতি করতে হচ্ছে অথবা সেই দলগুলোই বিলুপ্তপ্রায়।
বাংলা ইনসাইডার/এসআর
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া তারেক জিয়া বিএনপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
মন্তব্য করুন
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
তীব্র গরম মির্জা আব্বাস বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
ড. আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন শাজাহান খান
মন্তব্য করুন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনই দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি পরামর্শ দিয়ে আসছেন এমন গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কখনও মুখ খুলেননি বিএনপির কেউই। তবে এবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি জানিয়েছেন বিএনপি থেকে বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়াকে বাদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে দল ভাবছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে দলের এমন ভাবনার কথা জানান বিএনপির এই নেতা।
উপজেলা নির্বাচন থেকে কঠোর অবস্থান থেকে ইউটার্ন নিলো বিএনপি। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আপাতত যারা উপজেলা নির্বাচন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে সব কিছু নির্ভর করবে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। যারা পরাজিত হবে তাদের ওপর নেমে আসবে শাস্তির খড়গ। আর যারা বিজয়ী হবেন তাদের বিষয়টি উপেক্ষা করা হবে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে ফেঁসে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। তবে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেও নীতিমালার কারণে বেঁচে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।