নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৪৬ এএম, ১৪ জুলাই, ২০১৯
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আর নেই। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ রোববার সকাল পৌনে আটটায় তার মৃত্যু হয়। ের মাধ্যমে দীর্ঘ এক অধ্যায়ের অবসান ঘটলো। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ আলোচিত, সমালোচিত, বিতর্কিত। আসুন জেনে নেওয়া যাক এরশাদের সমালোচিত ৫টি দিক।
১. মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করা: ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ অংশগ্রহণ করেননি। অনেকের অভিযোগ ওইসময় পাকিস্তান থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য যেসমস্ত অফিসার এবং জওয়ানরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে পশ্চিম পাকিস্তানে আটক হয়েছিল তাঁদের বিচারের জন্য যে ট্রাইব্যুনাল সেই ট্রাইব্যুনালের বিচারক ছিলেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। যদিও এরশাদ বিভিন্নসময় এই বক্তব্যে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সুযোগ থাকা স্বত্বেও তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি, যেরকম মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল অন্যান্য সেনা কর্মকর্তারা।
২. অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা: ১৯৮২ সালের ২৪শে জানুয়ারি এরশাদ সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধ পন্থায় বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতা দখল করেছিল। বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন জিয়াউর রহমান। এরশাদ তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন। কাজেই এরশাদের ইতিহাস যখন লেখা হবে তখন তাঁকে গণতন্ত্রের হন্তারক হিসেবেই দেখা হবে।
৩. অযাচিত মিথ্যা বলা ও ডিগবাজি: বাংলাদেশের সরকার এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে মিথ্যে কথা বলার প্রথম দিকে থাকবেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। কারণে অকারণে মিথ্যা বলা ছিল তাঁর একটি অভ্যাস। যেমন, যখন তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ছিলেন তখন তিনি অনর্গল মিথ্যা কথা বলতেন। একটি মসজিদে যাওয়ার জন্য প্রায় একমাস আগে থেকে নির্ধারিত সফর থাকলেও তিনি ঐ মসজিদে গিয়ে বলেছিলেন যে কাল তিনি স্বপ্ন দেখেছেন বলে ঐ মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়তে এসেছিলেন। এমনকি তার পুত্র সন্তানের জন্ম নিয়েও তিনি মিথ্যাচার করেছিলেন। যখন তিনি সামরিক আইন জারি করেছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন যে, তার কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। তিনি কখনো রাজনীতি করবেন না। নির্বাচন শেষে তিনি ব্যারাকে ফিরে যাবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো এরশাদের এই উক্তিটি ছিল সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার। জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে রাজনৈতিক ডিগবাজি দেওয়ার জন্যও এরশাদ প্রায় অমরত্ব লাভ করে ফেলেছেন। কখনো বিএনপির দিকে ঝুকে পড়া, কখনো আবার আওয়ামী লীগের দিকে ঝুকে পড়া এবং নিজের সুবিধা অনুযায়ী রাজনৈতিক আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে যেকোনো একটি পক্ষে চলে যাওয়া এরশাদের চিরায়ত অভ্যাস। এজন্য এরশাদ সম্বন্ধে বলা হতো যে এরশাদ সকালে যেটা বলেন বিকেলে সেটা পরিবর্তন করেন। এরশাদ যখন সামরিক প্রধান ছিলেন তখন তাকে বলা হতো CMLO মানে হলো Cancel my last order (সিএমএলও ক্যান্সেল মাই লাস্ট অর্ডার)।
৪. দুর্নীতিবাজ: এরশাদকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম দুর্নীতিবাজ রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মনে করা হয়। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার পর গণঅভ্যুত্থানের মুখে তিনি যখন পদত্যাগে বাধ্য হন, তারপর তার বিরুদ্ধে অসংখ্য দুর্নীতি মামলা হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে রাজনৈতিক সমঝোতায়, রাজনৈতিক নানা হিসাবনিকাশের কারণে তার বিরুদ্ধে এই মামলাগুলো আর এগোয়নি, এমনকি তা নিয়ে আর তেমন কোনো তদন্তও হয়নি। কিন্তু সাধারণ মানুষের চোখে তিনি একজন দুর্নীতিবাজ রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবেই চিহ্নিত হবেন।
৫. নারী কেলেংকারী: সেনাপ্রধান হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় নারী কেলেংকারীতে বারবার জড়িয়েছেন এরশাদ। এরশাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি নারী কেলেংকারী এরশাদের পিছু ছাড়েনি। সেনাপ্রধান হওয়ার পর পরই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে, মরিয়ম মমতাজ বা মেরি নামে একজনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এরশাদ তাকে বিয়ে করেছেন বলেও কথিত ছিল। সেনা প্রধান থেকে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার পর তিনি তৎকালীন শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী জিনাত মোশাররফের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে। জিনাত মোশাররফের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ ছবি প্রকাশ হয়েছিল গণমাধ্যমে। সে সময় জিনাত মোশাররফের প্রচুর দাপটের কথা সবাই জানতো। এছাড়াও একাধিক নারীর সঙ্গে এরশাদ সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। অনেক স্বনামধন্য চিত্রনায়িকা, গায়িকারি মতো বিভিন্ন তারকাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও নারী এরশাদের পিছু ছাড়েনি। বরং বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় তিনি বিদিশার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত নারী কেলেংকারী তার পিছু ছাড়বে না। নারী কেলেংকারী এরশাদের সমালোচনার মুখরোচক আলোচিত বিষয়।
এই কারণগুলোর জন্যই এরশাদ যতটা না আলোচিত তার থেকেও বেশি হয়েছেন সমালোচিত। নয়বছর স্বৈরশাসক হওয়ার পরেও এরশাদ একটি বিশেষ এলাকার নেতা হিসেবেই চিহ্নিত এবং রাজনীতিতে এরশাদের মূল্যায়নের এই সমালোচিত দিকগুলো বার বার তাকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেবে।
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি ড. মঈন খান
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপি
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বেগম জিয়া আর ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন না, রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন এ রকম একটি বক্তব্য সামনে নিয়ে আসছেন শামীম ইস্কান্দার।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠিত করা এবং বিভেদ-বিভক্তির দূর করার জন্য যে ডাক দেওয়া হয়েছিল তারপর একটু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল বলে বটে। কিন্তু এখন আবার উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে তৃণমূল বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সামাল দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে নির্বাচন কেন্দ্রীক বিরোধ অন্যদিকে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাওয়া আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তদারকির অভাবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই।
অবশেষে জিয়া পরিবার মুক্ত হচ্ছে বিএনপি। বিএনপির রাজনীতিতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে ঠিক কবে, কখন, কীভাবে এ পরিবর্তন হবে সে সম্পর্কে কেউ কোন সুনির্দিষ্ট ধারণা দিতে পারেনি। তবে বেগম খালেদা জিয়া বিএনপিতে পরিবর্তনের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ নির্বাচনে বিএনপি প্যানেল থেকে নির্বাচিত হলেও দায়িত্বভার না নিতে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সহ চার আইনজীবীকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। তবে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এমন ইঙ্গিত দেন বিএনপিপন্থি এ আইনজীবী নেতা।