নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৫৯ পিএম, ১০ অগাস্ট, ২০১৯
শেষ পর্যন্ত বিএনপি মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরেই যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে এবার তাকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি নিজেই সরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, শারীরিকভাবে তিনি অসুস্থ। দলের মহাসচিবের দায়িত্ব আর তিনি চালিয়ে যেতে পারছেন না। কিন্তু যেখানেই যে অবস্থায় থাকেন না কেন, দলের জন্য তিনি কাজ করবেন। ফখরুলকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া আশ্বস্ত করেছেন যে তিনি নতুন মহাসচিব খুঁজছেন। নতুন মহাসচিব খোঁজা হলেই তাকে বিদায় দেওয়া হবে। তবে মহাসচিবের পদে না থাকলেও দলের স্থায়ী সচিবের পদে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন বলে বিএনপির সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
যদিও বলা হচ্ছে যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অসুস্থতার জন্য মহাসচিবের পদ ছেড়ে দিচ্ছেন। কিন্তু দলের ভেতরে এ ব্যাপারে অন্য রকম খবর পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর থেকেই দলে বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে দলের নির্বাচিত পাঁচজন সংসদ সদস্য শপথ নেওয়ার পর তিনি বিএনপির মধ্যে এখন গণশত্রুতে পরিণত হয়েছেন। দলের তরুণ এবং তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের কাছে তিনি অবিশ্বস্ত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন।
বিএনপির বেশিরভাগ তৃণমূল নেতাই বিশ্বাস করে যে, মহাসচিবের সঙ্গে সরকারের গোপন আঁতাত রয়েছে। তিনি সরকারের নির্দেশিত পথে কাজ করছেন বলে মনে করে বিএনপির একটি মহল।
তবে বিএনপির আরেকটি মহল মনে করে যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সরকারের কোনো যোগাযোগই নেই। বরং দুঃসময়ে দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যেরকম দৃঢ়তা এবং রাজনৈতিক বিচক্ষণতা দরকার সেটার অভাব রয়েছে তার।
মির্জা ফখরুল ব্যক্তি জীবনে একজন ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত হলেও রাজনৈতিক কৌশলের ক্ষেত্রে তিনি অনেক পিছিয়ে আছেন বলে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা মনে করেন। বিশেষ করে, দলের নেতৃত্বে থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচনের আগে সরকারি দলের সঙ্গে যে সংলাপে গিয়েছিলেন, সেখানে বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কোনো আশ্বাসই আনতে পারেননি তিনি। নেতা-কর্মীদের মুক্তির ব্যাপারেও তিনি সরকারের সঙ্গে দেনদরবারে পরাজিত হয়েছেন। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপিকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করার যে কৌশল নেওয়া হয়েছিল, সেই কৌশল প্রতিরোধ করতেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, খালেদা জিয়ার মুক্তি বা মুক্তির আন্দোলনে তিনি সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বলে বিএনপির নেতারা মনে করেন।
দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপিতে নতুন মহাসচিব নেওয়ার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছিলো। কিন্তু বেগম খালেদা এবং তারেক জিয়ার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতোপার্থক্য থাকলেও এ মুহুর্তে নতুন মহাসচিব না নেওয়ার বিষয়ে দুজনেই একমত ছিলেন। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছিলো যে, নতুন মহাসচিব দায়িত্ব গ্রহণ করলে ভুল বার্তা যাবে। নেতা-কর্মীদের আবার সংগঠিত করা কঠিন হবে। একই সঙ্গে সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য এবং ভারসাম্য রক্ষা করাটাও দুরূহ হয়ে যাবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এজন্যই মহাসচিব পদে বহাল রাখা হয়েছিল। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের নেতা-কর্মীদের কাছে তেমন কোনো সহযোগীতা পাচ্ছেন না। বিশেষ করে সিনিয়র নেতারা তাকে চরম অসহযোগীতা করছেন বলেও একাধিকবার অভিযোগ করেছেন তিনি। এ সমস্ত বাস্তবতায় তিনি আর মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গতকাল শুক্রবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে মির্জা ফখরুল দীর্ঘ টেলি আলাপ করেছেন। সেখানে তিনি মহাসচিব পদে থাকা তার পক্ষে কেন সম্ভব নয়, সে ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এই ব্যাখ্যায় তিনি যে বিষয়গুলো বলেছেন তা হলো, দলের শীর্ষ নেতাদের অসহযোগীতা, তৃণমূলের অবিশ্বাস এবং তার শারীরিক অসুস্থতা। তবে নতুন মহাসচিব হিসেবে কে দায়িত্ব নেবেন এ ব্যাপারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কোনো পরামর্শ দেননি।
পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে তারেক জিয়াও এখন একজন নতুন মহাসচিব নিয়োগ করে দল নতুনভাবে গোছানোর পক্ষপাতী। এ বছরের শেষ নাগাদ বিএনপি কাউন্সিল অনুষ্ঠান করতে চায়। সে কাউন্সিলের আগে নতুন মহাসচিব নির্বাচন করা হবে কিনা তা ঠিক করবেন তারেক জিয়াই।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন যে, দল যে এখন বিপর্যয়ের মুখে, এ বিপর্যয় থেকে উদ্ধারের জন্য নেতৃত্বের পরিবর্তন দরকার। নেতৃত্বের যদি পরিবর্তন আনা হয়, তাহলে হয়ত কর্মীরা উজ্জীবিত হবে এবং দলে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হবে। সে বিবেচনায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিদায় ঘন্টা বাজছে। তবে কখন কীভাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরে যাবেন এবং তার বদলে নতুন মহাসচিব কে হবেন তা এখনও নিশ্চিত নয়।
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি ড. মঈন খান
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপি
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বেগম জিয়া আর ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন না, রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন এ রকম একটি বক্তব্য সামনে নিয়ে আসছেন শামীম ইস্কান্দার।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠিত করা এবং বিভেদ-বিভক্তির দূর করার জন্য যে ডাক দেওয়া হয়েছিল তারপর একটু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল বলে বটে। কিন্তু এখন আবার উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে তৃণমূল বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সামাল দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে নির্বাচন কেন্দ্রীক বিরোধ অন্যদিকে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাওয়া আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তদারকির অভাবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই।
অবশেষে জিয়া পরিবার মুক্ত হচ্ছে বিএনপি। বিএনপির রাজনীতিতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে ঠিক কবে, কখন, কীভাবে এ পরিবর্তন হবে সে সম্পর্কে কেউ কোন সুনির্দিষ্ট ধারণা দিতে পারেনি। তবে বেগম খালেদা জিয়া বিএনপিতে পরিবর্তনের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ নির্বাচনে বিএনপি প্যানেল থেকে নির্বাচিত হলেও দায়িত্বভার না নিতে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সহ চার আইনজীবীকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। তবে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এমন ইঙ্গিত দেন বিএনপিপন্থি এ আইনজীবী নেতা।