ইনসাইড পলিটিক্স

ইন্দিরা গান্ধী, মের্কেল, থ্যাচারদের ছাড়িয়ে শীর্ষে শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯


Thumbnail

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন ক্ষমতায় থাকা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি নারী নেত্রী। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, ব্রিটেনের মার্গারেট থ্যাচার, জার্মানির অ্যাঙ্গেলা মের্কেল এবং শ্রীলঙ্কার চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গাকেও টপকে গেছেন শেখ হাসিনা। উইকিলিকসের সর্বশেষ গবেষণা মতে, শেখ হাসিনা বর্তমান বিশ্বের পুনরুত্থান করা সবচেয়ে আইকনিক নেত্রী।

ডেইম পার্লেট লুইজি, গভর্নর জেনারেল অব সেন্ট লুসিয়া কোনো স্টেটের হিসেবে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি নারী নেত্রী। সে ১৯৯৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ক্ষমতায় বসে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ ক্ষমতা ছাড়েন। ২০ বছর ১০৫ দিন তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু তিনি অতটা বিখ্যাত নন বিশ্ব রাজনীতিতে। আঞ্চলিক রাজনীতিবিদ হিসেবেই তিনি পরিচিত ছিলেন।

আইসল্যান্ডের ভিগডিস ফিনভোগাডটির ১৯৮০ সালের ১ আগস্ট থেকে ১৯৯৬ সালের ১ আগস্ট পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। তিনিও বিশ্ব রাজনীতিতে অতটা পরিচিত মুখ ছিলেন না।

ডোমিনিকার প্রধানমন্ত্রী ডেইম উজনাইন ১৪ বছর ৩২৮ দিন ক্ষমতায় ছিলেন। ২১ জুলাই ১৯৮০ সাল থেকে তিনি ১৪ জুন ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন।

আয়ারল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি মেরি ম্যাকক্লে ১৩ বছর ৩৬৪ দিন ক্ষমতায় ছিলেন।

জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ক্ষমতাবান নারী নেত্রী। তিনি ২২ নভেম্বর ২০০৫ সালে ক্ষমতায় বসেন। বর্তমানেও তিনি ক্ষমতায় আছেন। তবে তিনি ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন ২০২১ সালের পর ক্ষমতায় থাকবেন না। 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় ও চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে তিনি দেশ পরিচালনা করেছেন, ২০০৮ সালে ফের ক্ষমতায় আসেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ ভোট পেয়ে তার দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারী তিনি চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তিনি ইতিমধ্যে ১৫ বছর ক্ষমতায় রয়েছেন। চতুর্থবার ক্ষমতায় বসে তাঁর একবছর শেষ করলেন সফলতার সঙ্গে। শেখ হাসিনা তাঁর চতুর্থমেয়াদও সফলতার সঙ্গে শেষ করবেন তা হলফ করে বলা যায়। বর্তমান হিসেবে শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকা নারী নেত্রী। শেখ হাসিনা নানা ইস্যুতে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় রাষ্ট্রপ্রধানও।

শেখ হাসিনার চেয়ে ক্ষমতায় কম ছিলেন ব্রিট্রেনের মার্গারেট থ্যাচার। তিনি ব্রিটেন শাষণ করেন ১১ বছর ২০৮দিন। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় ছিলেন।

ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বিভিন্ন মেয়াদে ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন।

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা ১১ বছর ৭দিন ক্ষমতায় ছিলেন।

চারজন দীর্ঘমেয়াদি নারী রাষ্ট্রপ্রধানের তালিকায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর চতুর্থবারের শাষণ আমল সম্পূর্ণ করতে পারলে এই তালিকায় থাকা বিখ্যাত অন্যদের থেকে আরো একধাপ এগিয়ে যাবেন। যা হয়তো এই প্রজন্মে অন্যদের ছোঁয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। 

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

স্বজনদের বিরুদ্ধে কেন কঠোর অবস্থানে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।

শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনি, সবাই পিতার পথ ধরেই রাজনীতিতে আসা। প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যেও প্রাথমিক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী এসেছেন উত্তরাধিকার রাজনীতি ধরেই।

আওয়ামী লীগের এবার নির্বাচনেও দেখা গেছে চট্টগ্রামে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নিজে নির্বাচন না করে তার পুত্রকে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন এবং তার পুত্র আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিল। রংপুর থেকে আশিকুর রহমান চৌধুরী নিজে প্রার্থী না হয়ে তার ছেলে রাশেদ চৌধুরীকে প্রার্থী করেছিলেন। যদিও তিনি নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে পারিবারিক সংস্কৃতি এবং প্রভাব। বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় দেখা যায় যে, পিতার মৃত্যুর পর তার সন্তান বা আত্মীয়রা নির্বাচন করেন। আওয়ামী লীগের এক সময়ের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ আব্দুল মান্নানের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী সেখানে এমপির মনোনয়ন পেয়েছেন। এমপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেনগুপ্ত। যদিও গতবার নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। 

এই ধারা চলছে আওয়ামী লীগে দীর্ঘদিন ধরে। নেতার ছেলে নেতা হবে এটাই যেন রাজনীতিতে একটা সংস্কৃতি হয়ে আছে। কিন্তু সেই অবস্থান থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি কেন ঘুরে দাঁড়ালেন, কেন কঠোর অবস্থান নিলেন, এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানামুখী আলাপ আলোচনা চলছে। 

একাধিক সূত্র বলছে, যারা পিতার হাত ধরে বা মায়ের হাত ধরে বা নিকটাত্মীয়দের হাত ধরে রাজনীতি করে বড় হয়েছেন তাদের জন্য এই ধরনের বিধিনিষেধ ছিল না। বরং আওয়ামী লীগ সব সময় বিশ্বাস করে যে আওয়ামী লীগ একটি আবেগ এবং সম্পর্কের নাম। যারা আওয়ামী লীগ করেছেন তারা বংশপরম্পরায় আওয়ামী লীগ করবেন এবং এভাবে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে ধরে রাখবে বলেই তারা মনে করেন। কিন্তু এবার নির্বাচনে যেভাবে প্রার্থী করা হয়েছে তা স্রেফ পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। 

আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, স্বাভাবিকভাবে পিতার পর পুত্রের রাজনীতিতে আসা একটি ইতিবাচক দিক। কিন্তু এলাকা দখল করার জন্য বা অন্য কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য পুত্রকে রাজনীতিতে নামিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান করা এবং এলাকায় রাজত্ব কায়েম করাটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বজনদের রাজনীতির বিরুদ্ধে নন। আওয়ামী লীগ একটি পরিবার এবং সেই পরিবারের বংশ পরম্পরায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ চর্চা হবে। এটি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের ওই নেতা। 

কিন্তু সমস্যা হলো, লোভ এবং আদর্শহীনতার ক্ষেত্রে। যখন দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগের নেতারা লোভে পড়ে এলাকা দখলের জন্য তার নিজস্ব আত্মীয়স্বজনকে নির্বাচনের প্রার্থী করেন তখন প্রশ্ন ওঠে এবং বিতর্ক তৈরি হয়। এর ফলে সাধারণ ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত হয়। এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় এক ধরনের পারিবারতন্ত্র। এটি বিকৃতি। স্বাভাবিকভাবে যখন কেউ আওয়ামী লীগের উত্তরাধিকারের রাজনীতিতে আসে সেটি হলো একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ। কিন্তু যখন কোন আত্মীস্বজনকে রাজনীতির মাঠে নামিয়ে রাতারাতি নেতা বানিয়ে দেওয়া হয় বা উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী করা হয় তখন সেটি রাজনীতিতে বিকৃতি এবং পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটি প্রচেষ্টা। যার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সভাপতি অবস্থান নিয়েছেন বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

উপজেলা নির্বাচন   আওয়ামী লীগ   আওয়ামী লীগ সভাপতি   শেখ হাসিনা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বহিষ্কার হতে যাচ্ছেন দুই শতাধিক স্থানীয় বিএনপির নেতা

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নাটকীয় এবং কঠোর অবস্থান নিয়ে বিস্মিত সকল মহল। বিএনপি নেতারাও এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না। দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেই বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা তাদের প্রার্থীতা ঘোষণা করছেন এবং জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইতোমধ্যে প্রথম দফার উপজেলা নির্বাচনে প্রায় ৪৭ জন বিএনপির নেতা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আগামী ২২ এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। কিন্তু এই দিনে মনোনয়নপত্র তারা আদৌ প্রত্যাহার করবেন কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ব্যাপারে তাদের কোনও আগ্রহ নেই এবং এরকম কোন চিন্তা ভাবনাও তারা করছেন না। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, যদি মনোনয়নপত্র তারা প্রত্যাহার না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যাপারে একইরকম কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিল বিএনপি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য তৈমুল আলম খন্দকার, মনিরুল হক সাক্কুসহ একাধিক জনপ্রিয় নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু এবার পরিস্থিতি আরও অন্যান্যবারের চেয়ে ভিন্ন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিএনপির নেতারা এবারের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। তারা বলছেন যে, এই সিদ্ধান্তটি অযৌক্তিক, অগ্রহণযোগ্য। 

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন যে, তারেক জিয়া এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন তাদেরকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। আর এরকম বাস্তবতার সারা দেশে বিএনপির অন্তত দুইশ জন উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী বহিষ্কারের ঝুঁকিতে পড়েছেন বলে জানা গেছে।

প্রথম পর্যায়ে ৪৭ জন ছাড়াও দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দফার নির্বাচনে বিএনপির আরও অন্তত দেড় শতাধিক প্রার্থী আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং তারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন। বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন যে, বিএনপির যতই তাদেরকে বহিষ্কারের ভয় দেখাক না কেন তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে তারা তিনটি যুক্তি দেখাচ্ছেন।

প্রথমত, এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থীদেরকে সহজে হারাতে পারবেন। কারণ আওয়ামী লীগ বিভক্তভাবে নির্বাচন করেছে এবং দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছে না। দ্বিতীয়ত, তারা মনে করছেন যে, জনগণের কাছে তাদের দায়বদ্ধতা আছে। ভোটারদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করে দেখেছেন, ভোটাররা চায় তারা অংশগ্রহণ করুক। কর্মী সমর্থকদের মধ্যে এক ধরণের চাঞ্চল্য এবং উদ্দীপনা সৃষ্টির জন্য নির্বাচন করা প্রয়োজন বলে তারা মনে করছেন।

তৃতীয়ত, সংগঠন গোছানোর জন্য এই নির্বাচনে কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন স্থানীয় বিএনপির নেতারা। তারা মনে করছেন যে, বিএনপিকে যদি তৃণমূল থেকে গড়ে তুলতে হয়, তাহলে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে উপজেলা পর্যায়ে সংগঠনগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

আর এ কারণেই বিএনপির নেতারা ধারণা করছেন যে, তাদেরকে যদি বহিষ্কারও করা হয় তাহলেও তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের পর যদি তারা নির্বাচিত হন তাহলে দলের সাথে এ নিয়ে একটি দরকষাকষি করবেন। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে বহিষ্কার নিয়ে দুই ধরনের মতামত পাওয়া গেছে।

অনেকেই বলছেন যে, যদি উপজেলা নির্বাচন করে কেউ জিততে পারে তাহলে হয়তো আস্তে আস্তে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। অতীতেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। অনেকে মনে করছেন, যাদেরকে বহিষ্কার করা হবে তাদেরকে আর ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা নেই। আর এ কারণেই বিএনপির মাঠ পর্যায়ের প্রায় দুইশ নেতা এখন বহিষ্কারের ঝুঁকিতে।

উপজেলা নির্বাচন   বিএনপি   তারেক জিয়া   বহিষ্কার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

দলের সিদ্ধান্ত না মানলে কি করবে আওয়ামী লীগ

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতির পক্ষ থেকে এটিও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যদি শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউ প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই বার্তাটি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইতোমধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশ দিয়েছেন। সাংগঠনিক সম্পাদকরা এখন সারা দেশে আওয়ামী লীগের যারা এমপি, মন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আছেন তারা কতজন নিজের আত্মীয়স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করেছেন তার তালিকা তৈরি করছেন।

উল্লেখ্য, আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগের ভিতর ক্ষোভ, বিক্ষোভ এবং কোন্দল ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি হয় উত্তাপ-উত্তেজনা এবং বিভাজন। এই বিভাজন কমিয়ে আনার জন্য সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এ নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ও আহ্বান করেন। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যা হবার হয়ে গেছে, ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন। কিন্তু সেই নির্দেশনা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের ভিতর বিভক্তি এবং কোন্দল কমেনি। বিভক্তি ও কোন্দলের সূত্র ধরে দলের ভিতরে হানাহানি মারামারির প্রবণতাও লক্ষ্য করা গেছে।

এরকম একটি পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, উপজেলা নির্বাচনে তারা দলীয় প্রতীক ব্যবহার করবে না এবং উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীও দেবে না। যার যেখানে ইচ্ছা তারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবে। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরই দেখা যায় ভিন্ন অবস্থা। আওয়ামী লীগের যারা এমপি হয়েছেন বা হননি তারা চর দখলের মতো উপজেলা দখলের লড়াইয়ের ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং এটি করতে গিয়ে তারা একদিকে যেমন তারা মাইম্যানদেরকে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত হন, অন্যদিকে তারা শুরু করেন আত্মীয়স্বজন খোঁজা। যে যেভাবে পেরেছেন তাদের নিজেদের আত্মীয় স্বজনকে প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। এর ফলে প্রত্যেকটি স্থানীয় পর্যায়ে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়। তৃণমূলে পরিবারতন্ত্র কায়েমের পথ প্রশস্ত হয়ে যায়।

বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতির নজরে আসে এবং আসার সাথে সাথেই তিনি এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, যারা উপজেলা নির্বাচনে নিজের আত্মীয়স্বজনকে প্রার্থী করেছে তাদেরকে অবিলম্বে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হবে এবং যদি তারা না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি বা আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবেন তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন? অতীতে দেখা গেছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছেনে, তাদের বিরুদ্ধে খুব একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ব্যবস্থা নিলেও সেটি কার্যকর করা হয়নি।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলমের কথাই ধরা যাক। জাহাঙ্গীর আলম দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল বটে, তবে সেই ব্যবস্থা বেশিদিন টিকেনি। জাহাঙ্গীর এখন আওয়ামী লীগই করছেন।

এছাড়াও, বিভিন্ন স্থানীয় পৌরসভা নির্বাচনে নানা অপরাধে যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তাদের কারও বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ কার্যকরী হয়নি বরং ব্যবস্থা গ্রহণের পর পরই তাদেরকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় আনা হয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এই সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর হবে এবং তৃনমূলে এর প্রভাব কতটুকু পরবে সেটাই দেখার বিষয়।

আওয়ামী লীগ   উপজেলা নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

তারেকের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ জানতে চায় ব্রিটিশ দূতাবাস

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

গতকাল ঢাকাস্থ ব্রিটিশ দূতাবাসে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল ব্রিটিশ দূতাবাসে। সেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক এক ঘণ্টার বেশি সময় তাদের সাথে বৈঠক করেন। এসময় ব্রিটিশ দূতাবাসে অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

এই বৈঠকটি নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কারণ ২০০৮ সাল থেকেই লন্ডনে অবস্থান করছেন বিএনপির এখনকার শীর্ষ নেতা তারেক জিয়া। লন্ডনে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থেকে তিনি সাম্প্রতিক সময়ে দল পরিচালনা করছেন, বিভিন্ন রকম কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছেন। এটি নিয়ে ব্রিটিশ সরকার এক ধরনের অস্বস্তিতে রয়েছে বলেও জানা গেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে বিভিন্ন মামলায় দণ্ডিত এবং অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত তারেক জিয়াকে যেন বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়- এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দেনদরবার করা হচ্ছে। 

আর এই কারণেই ব্রিটিশ সরকার এখন তারেক জিয়াকে রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। কারণ ব্রিটেন তার নিজের দেশের ভূখণ্ড অন্যদেশে বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস বা নাশকতার সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করতে দেয় না। এটি ব্রিটেনের ঐতিহ্যগত রীতি।

সাম্প্রতিক সময়ে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো এসেছে তাতে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে তিনি ব্রিটেনে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানারকম ষড়যন্ত্র এবং অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। 

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, বিএনপির তিন নেতাকে ডেকে সারা কুক কিছু সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিয়েছেন এবং তারেকের ভাবনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। অবশ্য বিএনপির তিন নেতা তারেকের ভাবনা সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি। তারা বিষয়টি নিয়ে তারেক জিয়ার সঙ্গে কথা বলে আবার সারা কুককে জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। 

উল্লেখ্য যে, ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে যে, বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন দরকার। যারা দেশে থেকে রাজনীতি করছেন, দলে সার্বক্ষণিক সময় দিচ্ছেন, তাদেরকেই নেতৃত্বে রাখা উচিত। 

পশ্চিমা দেশগুলো এই মুহূর্তে তারেক জিয়াকে বিএনপির কার্যকর নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়ে আসছে বেশ কিছুদিন ধরে। বিশেষ করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এই মনোভাবটি পশ্চিমা কূটনীতিকদের মধ্যে আরও প্রবলভাবে দেখা যাচ্ছে। যেহেতু তারেক জিয়া এখন ব্রিটেনেই অবস্থান করছেন, কাজেই সারা কুক এই বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছেন।   

তারেক জিয়ার ব্রিটেনে অবস্থান এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ফলে বাংলাদেশ ব্রিটিশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একধরনের অস্বস্তি এবং ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে বলেও যুক্তরাজ্য মনে করেন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সাথে আলাপকালেও তারেককে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। 

আর একারণেই ব্রিটেন মনে করে যে, তারেক জিয়া যদি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে তার জীবন রক্ষার জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় চান, তাহলে উদার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ব্রিটেন সেটা বিবেচনা করতেই পারে। কিন্তু ব্রিটেনে বসে যদি তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন, তবে সেটি অনভিপ্রেত।

তবে বিএনপির তিন নেতা বলেছেন যে, বিএনপি কাছে সারা কুক জানতে চেয়েছেন যে, তাদের রাজনৈতিক পরিকল্পনা কি? তাদের উপজেলা নির্বাচন বর্জন করার পর তারা কি করলো ইত্যাদি। 

তবে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, তারেক জিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েই ব্রিটিশ দূতাবাসে প্রধান আলোচনা হয়েছে।

তারেক জিয়া   বিএনপি   ব্রিটিশ দূতাবাস   সারা কুক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

‘স্বজন’ প্রশ্নে বাগে আসছে না মন্ত্রী-এমপিরা

প্রকাশ: ১১:০৯ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।

এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক স্থগিত হয়ে গেছে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, ‘স্বজন’ প্রশ্নে দলের সিদ্ধান্ত না মানলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও দলীয় এমপির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কেড়ে নেওয়া হতে পারে তাদের দলীয় পদ-পদবি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের মনোনয়নও অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। সব মিলিয়ে এ ইস্যুতে দলীয়ভাবে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে স্বজনকে প্রার্থী করা নিয়ে দলের মন্ত্রী ও এমপিদের এরই মধ্যে কড়া ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো নিকটাত্মীয় অংশ নিতে পারবেন না। এ বিষয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে আনার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদেরও তাগিদ দেন।

এরপর সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠক থেকেই নিকটাত্মীয়দের নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ও শাজাহান খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে এবং শাজাহান খান এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান মাদারীপুর সদর উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন।

এ ছাড়া নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর সঙ্গেও কথা বলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী সুবর্ণচরে প্রার্থী হয়েছেন। 

এ ব্যাপারে নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, উপজেলা নির্বাচন থেকে তার ছেলেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কথা বলেছেন। তিনি তাকে ঢাকায় ডেকেছেন।

তবে তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পাওয়ার পরও প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করেছিলেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম। এ বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হলেও তিনি সুবিচার পাননি। এ জন্যই তার ছেলে প্রার্থী হয়েছেন।

গতকাল দলের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে চার বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, এস এম কামাল হোসেন এমপি, মির্জা আজম এমপি, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এবং দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকজন মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে প্রার্থী করানোর বিষয় নিয়ে অল্পবিস্তর আলোচনা হয়। সেই সঙ্গে দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে নিকটাত্মীয়দের প্রার্থী করানোর বিষয় নিয়ে নেতারা বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিভিন্ন উপজেলায় সাংগঠনিকভাবে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেন নেতারা।

বৈঠকে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রংপুর, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের তৃণমূল নেতাদের বৈঠকে সাংগঠনিক বিরোধ নিষ্পত্তির তাগিদ দেওয়া হলেও কার্যত তা হয়নি। উল্টো উপজেলা নির্বাচন নিয়ে গৃহদাহ পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মী দ্বন্দ্ব-বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। এ জন্য কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ওই সময়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের পূর্বনির্ধারিত সাংগঠনিক বৈঠক স্থগিত করার তথ্য জানান। সিলেট ও বরিশাল বিভাগের বৈঠকের দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ হয়নি। 

দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানিয়েছেন, ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হওয়ার কথা। এ জন্য ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার রাজশাহী এবং ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ঢাকা বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল দুই দিনে। প্রথম দিন ২৭ এপ্রিল এবং শেষ দিন ৪ মে। 

এদিকে গতকালের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ নেওয়া তিন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন থেকে আত্মীয়স্বজনকে সরিয়ে নিতে মন্ত্রী ও দলের এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের কথা তাদের জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। এর পর থেকে তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও এমপির সঙ্গে কথা বলছেন। যেসব উপজেলায় মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে দেওয়া হবে।

আগামী ৮ মে অনুষ্ঠেয় প্রথম পর্বের ১৫০ উপজেলা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মন্ত্রী ও দলীয় এমপির আত্মীয়স্বজন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে নতুন করে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। নাটোরের সিংড়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রথমে মারধর ও পরে অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় সন্দেহ করা হচ্ছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেলকে।

এদিকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনায় খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছেন।

উল্লেখ্য যে, আগামী ২ মে সংসদের অধিবেশন শুরু হবে। ওই অধিবেশন চলাকালে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক থেকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এমপিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নেতারা জানিয়েছেন।

তারা বলেছেন, নির্বাচনী এলাকায় প্রভাব বাড়াতে কয়েকজন মন্ত্রী ও দলের এমপি নিকটাত্মীয় ছাড়াও নিজস্ব লোক তৈরির জন্য পছন্দের প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। তাই শুধু সন্তান, পরিবার কিংবা আত্মীয়স্বজন নয়; মন্ত্রী এবং দলের এমপিদের প্রকাশ্যে বা গোপনে উপজেলা নির্বাচনে সম্পৃক্ত না হওয়ার কড়া নির্দেশনা দেওয়া হবে। 

তবে দলীয়ভাবে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও মন্ত্রী ও দলীয় এমপির অনেকে তা মানবেন না বলে আভাস মিলেছে। এরই মধ্যে অনেক উপজেলায় মন্ত্রী ও দলের এমপির নিকটাত্মীয়রা প্রার্থী হয়েছেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে লড়ছেন মাজহারুল ইসলাম সুজন এমপির দুই চাচা মোহাম্মদ আলী ও সফিকুল ইসলাম

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাহাদারা মান্নান এমপির ছেলে শাখাওয়াত হোসেন সজল। একই জেলায় সোনাতলায় এমপির ভাই মিনহাদুজ্জামান লিটন

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় নির্বাচন করছেন আলী আজগার টগর এমপির ভাই আলী মুনসুর

নরসিংদীর পলাশে লড়ছেন ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ এমপির শ্যালক শরীফুল হক

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রার্থী হয়েছেন শাহাব উদ্দিন এমপির ভাগনে সোয়েব আহমদ

নোয়াখালীর হাতিয়ায় লড়ছেন মোহাম্মদ আলী এমপির স্ত্রী ও দুইবারের সাবেক এমপি আয়েশা ফেরদাউস ও ছেলে আশিক আলী।

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ

মাদারীপুর সদর উপজেলায় শাজাহান খান এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান প্রার্থী হয়েছেন

এ ছাড়া ধাপে ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে অনেক মন্ত্রী-এমপির নিকটাত্মীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন।


মন্ত্রী   এমপি   উপজেলা নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন