নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০১ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার দলের ভিতর শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। টানা দশ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগে দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, ক্যাডার এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন তিনি।
গত শনিবার তিনি এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন দলের কার্যনির্বাহী সভায়। দলের সভায় তিনি কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের সামনে বলেছিলেন, আমার দলে কোন সন্ত্রাসী- ক্যাডার দরকার নেই। দলের ছত্রছায়ায় যারা অপকর্ম করবে তাদের প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। শেখ হাসিনা যা বলেন সেটা যে করেন তা আরেকবার প্রমাণ করলেন। শেখ হাসিনার বক্তব্যের ৭২ ঘন্টার মধ্যে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ঢাকায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মীদের তত্বাবধানে পরিচালিত ক্যাসিনোগুলোতে সাড়াশি অভিযান শুরু করে। একদিনের অভিযানেই ঢাকা শহরের সব অবৈধ ক্যাসিনো বন্ধ হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে ৪টি ক্যাসিনোতে সিলগালা লাগিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শুধুমাত্র ক্যাসিনো বন্ধই নয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছে ৫ শতাধিক ব্যক্তির একটি তালিকা হাতে এসে পৌঁছেছে যারা চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন প্রশ্ন, কেন শেখ হাসিনা এই কঠোর অবস্থানে গেলেন? হঠাৎ কেন তিনি দলের ভিতর শুদ্ধি অভিযান শুরু করলেন? অনেকেই মনে করছে যে, এর ফলে আওয়ামী লীগের মধ্যে ভুল বার্তা যাবে। বিরোধী দল আঙ্গুল তোলার সুযোগ পাবে। আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় যতদিন ধরে অনিয়ম চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস হয়েছে সেটা বলার একটা প্ল্যাটফর্ম পাবে বিরোধী দলগুলো। কিন্তু এর বিপরীত মতামতও রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে, এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা আরো বাড়বে। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করবে শেখ হাসিনা যতক্ষণ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছে ততক্ষণ তিনি দেশের মঙ্গল কামনা করবেন। জনগনের পাশে থাকবেন তিনি। এটা টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড় প্লাস পয়েন্ট হিসেবে দাঁড়াবে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এই মতবিরোধের আড়ালে আমরা বুঝতে পারি শেখ হাসিনা কেন হঠাৎ করে এত কঠোর হলেন। কি কারণে তিনি দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করলেন। এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে বাংলা ইনসাইডারের অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে কয়েকটি কারণ। এর মধ্যে রয়েছে-
১. গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সতর্কবার্তা: বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দলের বিভিন্ন নেতাকর্মী, সহযোগি ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীদের লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করেছেন। শুধু সতর্কই করেননি, বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করছে সেই সমস্ত অপকর্মের তথ্য প্রমাণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছে। তথ্য প্রমাণ এবং ছবি সম্বলিত এসব প্রতিবেদনে শেখ হাসিনা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং তিনি মনে করছেন ‘এনাফ ইজ এনাফ’। এসব অপকর্ম আর বাড়তে দেওয়া যায়না। এসব অপকর্ম আর বাড়তে দেয়া যায়না। এসব যদি বাড়তে দেওয়া হয় তাহলে তারা লাগামহীন হয়ে পড়বে। এর ফলে আওয়ামী লীগ জনগণের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবে। একারণেই তিনি কঠোর অবস্থানে গেছেন।
২. নিজস্ব নেটওয়ার্কের পাওয়া তথ্য: শুধু গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের উপর নির্ভর করে চলার মানুষ শেখ হাসিনা নন। টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করা আওয়ামী লীগ সভাপতির রয়েছে নিজস্ব টীম। যাদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই, তাদের নেটওয়ার্ক সারা দেশব্যাপী বিস্তৃত। শেখ হাসিনার নিজস্ব টীম সারাদেশ থেকে যে রিপোর্ট পাঠাচ্ছিল সে রিপোর্টও প্রধানমন্ত্রীর জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল না। এই রিপোর্টে দেখা যায় তৃতীয়বারের মত ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীই মনে করছে যে, এটাই শেষবারের মত ক্ষমতা। আমরা যা ইচ্ছা তাই করে নেই। এরকম মনোভাব দলের জন্য এবং দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। গোয়েন্দা সংস্থা এবং নিজস্ব নেটওয়ার্কের মধ্যে অদ্ভুত মিল পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে কারণে তিনি মনে করছেন, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই সময়। সরকারের মেয়াদ এখনও একবছর পূর্ণ হয়নি। এখন এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দল গুছানো অত্যন্ত সহজ হবে। যে কারণে তিনি এ ব্যবস্থা গ্রহণে কার্পণ্য করেননি।
৩. আওয়ামী লীগের নিম্নগামী ইমেজ: ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর থেকেই একের পর এক ইস্যুতে জর্জরিত আওয়ামী লীগ। নানা কারণে আওয়ামী লীগকে নিয়ে জনমনে অস্বস্তি বাড়ছে। দ্রব্যমুল্যের উর্ধগতি, ডেঙ্গু জ্বর, প্রিয়া সাহার ঘটনা, গুজব সন্ত্রাস ইত্যাদি নিয়ে এক বছর যেতে না যেতেই তৃতীয়বারের মত ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ ব্যাকফুটে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের নিম্নগামী ইমেজ উদ্ধারের জন্য শেখ হাসিনার কঠোর হওয়ার বিকল্প ছিল না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন যে, একমাত্র শেখ হাসিনার ইমেজ ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্যান্য অত্যন্ত খারাপ। এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, শেখ হাসিনা এখন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয়তম ব্যক্তি। তাঁর ইমেজেই আওয়ামী লীগ চলছে। একারনেই আওয়ামী লীগের ইমেজ পুনরুদ্ধারের জন্য এরকম কঠোর অবস্থানের বিকল্প ছিল না বলেই মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
৪. দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয়বার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি আর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না। সেই হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটাই তাঁর শেষ মেয়াদ। তাই তিনি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান যেন দেশের জনগণ তাকে মনে রাখে। ইতিমধ্যে তিনি বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়েছেন। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন, অগ্রগতিগুলো সারাবিশ্বের মানুষের কাছে একটা দৃষ্টান্ত। আর এজন্যই শেখ হাসিনা চান না যে সব উন্নয়ন দুর্নীতি এবং অপকর্ম খেয়ে নিক। এজন্যই তিনি যে দলের উর্ধ্বে, সবার আগে যে দেশ এবং জনগন এই দৃষ্টান্ত যে তিনি স্থাপন করতে চান এবং এজন্যই তিনি এই কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন।
৫. বিরোধী দলকে কোণঠাসা করা: কিছুদিন ধরেই রাজনীতিতে বিরোধী দলগুলো নতুন করে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন বা বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার কৌশল খুঁজছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের শুদ্ধি অভিযানের ঘোষণা দিয়ে বিরোধীদলকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছেন। এর ফলে জনগণের কাছে শেখ হাসিনার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়েছে। বিরোধী দল শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করছে। শেখ হাসিনা দেশের মানুষের কথা চিন্তা করছেন। দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করছেন। এজন্য তিনি দলের মধ্যেও শুদ্ধি অভিযান করতে কার্পণ্য করছেন না। এই বার্তাটা স্পষ্ট হয়ে গেছে। যার ফলে বিরোধী দলের আন্দোলন হালে পানি পাবে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
শেখ হাসিনার এই কঠোর অবস্থান দলের মধ্যে অস্বস্তি তৈরী করলেও দেশের মানুষের মধ্যে একটি স্বস্তি এবং প্রশংসা কুড়াচ্ছে। আর এটাই হলো শেখ হাসিনার রাজনীতি। তিনি ক্ষুদ্র স্বার্থের বদলে বৃহত্তর স্বার্থকেই যে সবসময় বড় করে দেখেন এই ঘটনার মাধ্যম তিনি সেটাই প্রমাণ করেছেন।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।