নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০১ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
যুবলীগের ঢাকা উত্তর দক্ষিণের একাধিক শীর্ষনেতাসহ অন্তত ১০৭ ব্যাক্তির বিদেশ গমনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, তাদের বিরুদ্ধে আসা বিভিন্ন অভিযোগগুলো সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এবং তারা যেন তদন্ত এড়িয়ে বিদেশ চলে যেতে না পারে সেজন্যই এই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন এখন বিদেশে না যায়।
দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী গত ১৪ সেপ্টেম্বর যখনি যুবলীগের বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করেন তখনই ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ বিদেশ চলে যেতে চেয়েছিলেন। তাকে একাধিক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা জানিয়েছে, বিদেশ যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাকে বিমানবন্দর বা যেকোন সীমান্ত এলাকায় আটক করা হতে পারে। এরপরই তিনি আর বিদেশে না গিয়ে বাসায় অবস্থান করেন। একইভাবে আরো কয়েকজন ব্যক্তিকেও এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। তার যেন এখন বিদেশ যেতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে।
শুধু যুবলীগ নয়, ছাত্রলীগের অব্যাহতি পাওয়া সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ৩০ জনের বেশি নেতার বিরুদ্ধে বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তারা যেন বিদেশ না যায় সেই জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট স্থানে দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রলীগ ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবকলীগ এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দর বিদেশ যাওয়ার ব্যাপার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের ভিতরে যারা অপকর্ম করছে। আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসসহ নানা রকম অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তালিকা প্রণয়নের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন নির্বাচনের পরপরই।
তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা এ ব্যাপারে কাজ করেছিল। সেখানে ৫ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছিল। যে সমস্ত অভিযোগের মধ্যে অন্তত শতাধিক অভিযোগ ছিল দালিলিক অভিযোগ। তথ্য প্রমাণ, সুনির্দিষ্ট তথ্য উপাত্ত ছবি সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেগুলো প্রধানমন্ত্রী বরাবর হস্তান্তর করা হয়েছিল। এই যে শতাধিক ব্যক্তি। তাদের উপরই এখন বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তাদের দিকে নজর রাখা হবে, তারা বিদেশে গেলে তাদের বিরুদ্ধে যে তদন্ত হবে তা যেন ব্যহত না হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মূলত ৫ টি ক্ষেত্রের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে:
১. অবৈধ টেন্ডার বাণিজ্য। দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে টেন্ডারে প্রভাব বিস্তার করা।
২. সন্ত্রাসের মাধ্যমে অন্যের জমি দখল করা। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায়।
৩. মাদক ব্যবহার, মাদক ব্যবসা বা মাদকসেবীদের সঙ্গে যোগসাজশ।
৪. জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, সহায়তা প্রদান বা প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জঙ্গিদের মদদ দেয়া।
৫. সংখ্যালঘুদের নির্যাতন, সংখ্যালঘুদের সম্পদ দখল, নিপীড়ন।
৬. নারী নির্যাতন, নারী নিপীড়ন সহ নারী নিপীড়নকারীদের নানারকম সহায়তা প্রদান।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী পাঁচ অপরাধের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী যারা জড়িত তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে একাধিক সূত্র বলছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এমনভাবে একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে না যাতে আতঙ্ক তৈরি হয়। বরং ধাপে ধাপে যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে এবং যারা সীমা অতিক্রম করেছে তাদেরকেই এখন আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কাউকে কাউকে সতর্কবার্তাও দেওয়া হচ্ছে। যেসমস্ত অন্যায় অপকর্ম তারা করে বেড়াচ্ছে সেসব থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্কবার্তাও দেওয়া হচ্ছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা বলছে যে, যেটা করা হচ্ছে সেটা একটা রুটিন ওয়ার্ক। আওয়ামী লীগের এই শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে সরকার একটি বার্তা দিতে চায়। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ যেটি অঙ্গিকার করেছে, দুর্নীতিকে তারা আশ্রয় প্রশ্রয় দিবে না। দুর্নীতিবাজ যেই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। তার ধারাবাহিকতা হিসেবেই এই শুদ্ধি অভিযান চলছে। একাধিক সূত্র বলছে, এ ধরনের অভিযোগের ফলে যেটি লাভ হবে, অন্যদের জন্য এটি একিটি মেসেজ হবে। এরফলে প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ক্রিয়াশীল ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী স্পষ্ট হবে, অনিয়ম ,দুর্নীতি বা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়ালে আইনের আওতায় তাকে আসতেই হবে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছে, যদি এই বোধটা সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে বাধ্য।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।