নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০১ পিএম, ০৯ অক্টোবর, ২০১৯
আগামী ২০ এবং ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কাউন্সিলের আগেই জেলা পর্যায়ের যে সমস্ত জেলা কমিটির এখনো সম্মেলন হয়নি, সে সমস্ত জেলা কমিটির সম্মেলন সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানের প্রেক্ষিতে যেহেতু বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে নানারকম দুর্নীতি, টেন্ডারবাজিসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এসেছে, এই জন্য এবার জেলা পর্যায়ের নির্বাচন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকবে।
ইতিমধ্যে তার নির্দেশে নতুন নেতৃত্বের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। অন্যবারের সঙ্গে এবার জেলা পর্যায়ের সম্মেলনের মৌলিক পার্থক্যটি হলো- অন্যবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদকদেরকে জেলা পর্যায়ের কমিটি তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। একইসঙ্গে স্থানীয় এমপি এবং মন্ত্রীদের আলাদা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে জেলা কমিটি প্রণয়নের ক্ষেত্রে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে যে, এবার জেলা কমিটিগুলো প্রণয়নের ক্ষেত্রে কারোই কোনো ভূমিকা থাকবে না। বরং প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁর একক নেতৃত্বে এবং নিজস্ব টিমের অনুসন্ধানের মাধ্যমে এই কমিটিগুলো প্রণয়ন করবেন। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে যদিও বলা হয়েছে যে, নির্বাচনের মাধ্যমে জেলা কমিটিগুলো নির্ধারণ করার এই সম্মেলনগুলোর মাধ্যমে কাউন্সিলর ঠিক করার। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগের বর্তমান বাস্তবতার প্রেক্ষিতে জেলা পর্যায় থেকে কাউন্সিলর নির্বাচন করা এবং জেলা কমিটি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তার চেয়ে সৎ এবং বিতর্কহীন ব্যক্তিদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যেই জেলা কমিটিগুলো থেকেই শুদ্ধি অভিযান শুরু করার অঙ্গীকার করেছেন। তবে এই অভিযানে র্যাব, পুলিশ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। এই শুদ্ধি অভিযান হবে আওয়ামী লীগের মধ্যে শুধু।
আওয়ামী লীগে ইতিমধ্যে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে যে, জেলা পর্যায়ে যারা জনপ্রিয় নেতাকর্মী, যাদের বিরুদ্ধে কোনোরকম অভিযোগ নেই- তাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন যে দশবছর ক্ষমতায় থাকার ফলে আমাদের যে বিভিন্ন জেলা কমিটিতে যে নানারকম সমস্যা দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে সুবিধাবাদী, অর্থবিত্তশালী, ব্যবসায়ী এবং অন্য দল থেকে আগতরা দলের নেতৃত্ব দখল করে নিয়েছে। যার ফলে দলের নিবেদিতপ্রাণ, পরীক্ষিত এবং দুঃসময়ের কর্মীরা আস্তে আস্তে দলের মধ্যেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এই অবস্থার অবসান ঘটানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ঐ সাংগঠনিক সম্পাদক এটাও বলেছেন যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচনের সময় সারাদেশে তৃণমূলের ওপর জরিপ পরিচালনা করে তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। এখন দ্বিতীয়বারের মতো তিনি সারাদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন এবং এর ভিত্তিতেই জেলা কমিটি নির্ধারিত হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ৩ ধরনের ব্যক্তিদের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হবে। তারা হলেন-
১. যারা মন্ত্রী এমপি বা উপজেলা চেয়ারম্যান নন
২. যাদের বিরুদ্ধে কোনো চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি বা দুর্নীতির অভিযোগ নেই
৩. যারা ২০০৯ সালের আগে থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, যারা দলের বিভিন্ন দুঃসময় যেমন- ৭৫ এর পর, ৯১ এর নির্বাচনের পর, ওয়ান ইলেভেনের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি কাঠামো পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, কমিটিগুলো এমনভাবে বিন্যস্ত হয়েছে যে মন্ত্রী এমপিরা তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক করেন এবং জেলা কমিটিগুলো তাদের নিজের পকেটস্থ করে রাখেন। কোথাও কেউ মন্ত্রী এমপিদের বিরোধীতা করলেও তাদের কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এসব খবর সবই প্রধানমন্ত্রীর হাতে চলে এসেছে। এজন্যই এবার যারা মন্ত্রী এমপি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান, তাদেরকে জেলা কমিটিতে রাখা হবে না। মন্ত্রী, এমপিদের পছন্দের ব্যক্তিরাও যেন জেলা কমিটিতে না থাকতে পারে, সে ব্যাপারেও সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
জেলা কমিটিগুলো যেন স্বাধীন, সক্রিয়ভাবে শুধুমাত্র দলের জন্য কাজ করতে পারে, সেটাও বিবেচনায় নিচ্ছেন শেখ হাসিনা। আর সে লক্ষ্যেই আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সম্মেলনগুলো এবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এবার তৃণমূলে এমনভাবে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে যে নেতৃত্ব হবে দুর্নীতিমুক্ত। যারা সৎ এবং দলের আদর্শ নিয়ে কাজ করেন, তাদেরকেই সামনে নিয়ে আসা হবে। এর ফলে এই সম্মেলনের পর আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ে যেন দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ না ওঠে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এবারের কমিটি বিন্যাস করা হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, কাউন্সিলের পরে নতুনরূপে আবির্ভূত হবে আওয়ামী লীগ।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সভাপতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বেগম জিয়া আর ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন না, রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন এ রকম একটি বক্তব্য সামনে নিয়ে আসছেন শামীম ইস্কান্দার।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠিত করা এবং বিভেদ-বিভক্তির দূর করার জন্য যে ডাক দেওয়া হয়েছিল তারপর একটু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল বলে বটে। কিন্তু এখন আবার উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে তৃণমূল বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সামাল দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে নির্বাচন কেন্দ্রীক বিরোধ অন্যদিকে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাওয়া আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তদারকির অভাবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই।