নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২৬ নভেম্বর, ২০১৯
টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ যে বিরোধী পক্ষ থেকে উঠেছে, তা নয়। সাধারণ মানুষ, এমনকি খোদ আওয়ামী লীগ থেকেও তারা সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের ঘরোয়া আড্ডায় বলছে যে, এই ব্যর্থ মন্ত্রীদের জন্যই আওয়ামী লীগ চাপের মুখে পড়েছে এবং গত ১১ বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার এরকম চাপের মুখে আগে কখনো পড়েনি।
আওয়ামী লীগের মধ্যে থেকেই মন্ত্রীরা দায়িত্ব পালনে কতটুকু যোগ্য, সেই প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন যে, তারা মন্ত্রণালয়ের কাজকর্ম ভালোভাবে বুঝছেন না এবং তাদের ব্যর্থতার কারণেই পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। যাদের নিয়ে এই সমালোচনাগুলো হচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন
বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি
গত তিনমাস ধরেই পেঁয়াজের বাজারে আগুন জ্বলছে এবং পেঁয়াজের লাগামহীন উর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। বিশেষ করে এখন যখন টিসিবি খোলা বাজারে স্বল্পমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করছে, সেই পেঁয়াজের জন্য মানুষের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। সরকার তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ছে পেঁয়াজের জন্য। মনে করা হচ্ছে যে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই পেঁয়াজ সংকট মোকাবেলায় যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ পারেনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতার মধ্যে রয়েছে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, পেঁয়াজের কতো মজুদ এবং কতো চাহিদা রয়েছে- সে ব্যাপারে সামঞ্জস্য বিধান করতে না পারা, যখন পেঁয়াজের সংকট দেখা দিলো, তখন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হওয়া।
সরকার, বিরোধী দল মনে করছে পেঁয়াজ সংকটের কারণে বাণিজ্য মন্ত্রী তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি যখন পেঁয়াজ সংকট চলছে, তখন তিনি অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ করেছেন। এটা নিয়েও দলে এবং দলের বাইরে তাকে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন
দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তিনিও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে ব্যর্থ মন্ত্রী হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন। একের পর এক রেল দুর্ঘটনা ঘটছে। যদিও এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে কিছু তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কিন্তু এই তদন্ত কমিটিগুলো কি প্রতিবেদন দিচ্ছে, কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, এই নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো সরকারি বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রেলযাত্রা এখন সাধারণ মানুষের কাছে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। রেলের ব্যাপারে জনগণের কাছে আস্থাহীনতা বেড়েছে।
পরররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, তা কূটনৈতিক মহলের কাছে স্পষ্ট। বিশেষ করে গত কয়েকদিনে পশ্চিমবঙ্গে কিছু সংখ্যক বাঙালিকে আটক এবং তাদেরকে বাংলাদেশে পুশইন করানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, সারা ভারতজুড়ে বাংলাদেশিদের খুঁজে বের করার জন্য নাগরিকপঞ্জী করার ঘোষণা এবং বিজেপির অনেক নেতারা যখন বলছেন যে বাংলাদেশি যারা অনুপ্রবেশকারী রয়েছে, তাদের ভারতে থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে- এই অবস্থায় দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে একটি নাজুক অবস্থার তৈরি হয়েছে। এটা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না।
গড় মেয়াদে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যে উচ্চতায় উঠেছিল, এখন ভাটার টান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এছাড়াও মিয়ানমার ইস্যুতেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি করছে তা নিয়ে জনমনে নানারকম প্রশ্ন রয়েছে।
সবচেয়ে বড় মানবিক বিষয় হলো সৌদি আরব থেকে যে একের পর এক নারী কর্মীদেরকে নির্যাতন নিপীড়ন করে দেশে পাঠানো হচ্ছে, তাদের ব্যাপারেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিষয়টি মোকাবেলা করছে না বলেও কূটনৈতিক মহল মনে করছে। এর ফলে অনেকেই মনে করছেন যে, পররাষ্ট্র মন্ত্রী বিষয়গুলোর গভীরে যেতে ব্যর্থ হচ্ছেন এবং বিষয়গুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছেন না।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদার
পেঁয়াজের পরে চালের বাজারও এখন অস্থির হয়ে উঠছে। চালের বাজার অস্থির হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যমন্ত্রীকে নিয়েও অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। তার একের পর এক বক্তৃতা, বিবৃতি জনমনে বিরক্তির উদ্রেক করছে। মনে করা হচ্ছে যে, পেঁয়াজের পর যদি চালের দাম লাগামহীন হয়ে যায়, তাহলে মানুষের অস্বস্তি অসন্তোষের পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।
আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীরই এখন প্রশ্ন যে, ব্যর্থ মন্ত্রীদের দায় এখন কে নেবে? এই দায় কি আওয়ামী লীগ নেবে নাকি সরকার নেবে? অবশ্য আওয়ামী লীগের তিন বছরের মন্ত্রিসভার বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, যখন কোনো মন্ত্রী সমস্যায় পড়েন বা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তখনই তাকে সরিয়ে দেওয়ার কোনো নজির নেই। বরং সেই মন্ত্রীকে সাহায্য সহযোগীতা করার দৃষ্টান্ত প্রধানমন্ত্রী অনুসরণ করেন। সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে এই মন্ত্রীরা থাকবেন নাকি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে, সেটা এখন একটা কোটি টাকার প্রশ্ন।
আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করেন যে, এই ব্যর্থ মন্ত্রীদের সরিয়ে দিয়ে যোগ্যদের দায়িত্ব দিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের একটি বড় অংশ এইরকম চিন্তার সঙ্গে তারার সহমত পোষণ করেন না। বরং তারা মনে করছে, সরকারের বিরুদ্ধে যে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সেটাকে সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করতে হবে। কোনো মন্ত্রীকে বাদ দিলে সমস্যার সমাধান হবে না।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়া বিএনপি ব্রিটিশ দূতাবাস সারা কুক
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া
হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত
নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান
প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে
আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক
স্থগিত হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন,
‘স্বজন’ প্রশ্নে দলের সিদ্ধান্ত না মানলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও দলীয় এমপির বিরুদ্ধে
সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কেড়ে নেওয়া হতে পারে তাদের দলীয় পদ-পদবি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের মনোনয়নও অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। সব মিলিয়ে
এ ইস্যুতে দলীয়ভাবে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে স্বজনকে
প্রার্থী করা নিয়ে দলের মন্ত্রী ও এমপিদের এরই মধ্যে কড়া ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক
অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো নিকটাত্মীয়
অংশ নিতে পারবেন না। এ বিষয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয়
নির্দেশনা দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে
আনার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদেরও তাগিদ দেন।
এরপর সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠক থেকেই নিকটাত্মীয়দের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ও শাজাহান
খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ টাঙ্গাইলের
ধনবাড়ীতে এবং শাজাহান খান এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান মাদারীপুর সদর উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন।
এ ছাড়া নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরীর সঙ্গেও কথা বলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার
ইশরাক সাবাব চৌধুরী সুবর্ণচরে প্রার্থী হয়েছেন।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরী বলেন, উপজেলা নির্বাচন থেকে তার ছেলেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দলের সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কথা বলেছেন। তিনি তাকে ঢাকায় ডেকেছেন।
তবে তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
নৌকা প্রতীক পাওয়ার পরও প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করেছিলেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের
সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম। এ বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হলেও তিনি সুবিচার
পাননি। এ জন্যই তার ছেলে প্রার্থী হয়েছেন।
গতকাল দলের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে চার
বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, এস এম কামাল হোসেন এমপি,
মির্জা আজম এমপি, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এবং দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া
উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকজন মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে প্রার্থী
করানোর বিষয় নিয়ে অল্পবিস্তর আলোচনা হয়। সেই সঙ্গে দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে নিকটাত্মীয়দের
প্রার্থী করানোর বিষয় নিয়ে নেতারা বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিভিন্ন উপজেলায় সাংগঠনিকভাবে
অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেন নেতারা।
বৈঠকে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রংপুর,
চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের তৃণমূল নেতাদের বৈঠকে সাংগঠনিক বিরোধ নিষ্পত্তির তাগিদ দেওয়া
হলেও কার্যত তা হয়নি। উল্টো উপজেলা নির্বাচন নিয়ে গৃহদাহ পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়েছে।
তৃণমূল নেতাকর্মী দ্বন্দ্ব-বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। এ জন্য কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেন কেন্দ্রীয়
নেতারা। ওই সময়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের
পূর্বনির্ধারিত সাংগঠনিক বৈঠক স্থগিত করার তথ্য জানান। সিলেট ও বরিশাল বিভাগের বৈঠকের
দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ হয়নি।
দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব
বড়ুয়া জানিয়েছেন, ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয়
কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হওয়ার কথা। এ জন্য ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক
স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার রাজশাহী এবং ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক হওয়ার
কথা ছিল। ঢাকা বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল দুই দিনে। প্রথম দিন ২৭ এপ্রিল এবং শেষ দিন
৪ মে।
এদিকে গতকালের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ
নেওয়া তিন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন থেকে
আত্মীয়স্বজনকে সরিয়ে নিতে মন্ত্রী ও দলের এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর
নির্দেশের কথা তাদের জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। এর পর থেকে তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী
ও এমপির সঙ্গে কথা বলছেন। যেসব উপজেলায় মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে
দেওয়া হবে।
আগামী ৮ মে অনুষ্ঠেয় প্রথম পর্বের ১৫০
উপজেলা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মন্ত্রী ও দলীয় এমপির আত্মীয়স্বজন চেয়ারম্যান পদে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে নতুন করে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে।
নাটোরের সিংড়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে
প্রথমে মারধর ও পরে অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় সন্দেহ করা হচ্ছে ডাক, টেলিযোগাযোগ
ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল
হাবীব রুবেলকে।
এদিকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা
জানিয়েছেন, এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনায় খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের
নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, আগামী ২ মে সংসদের অধিবেশন
শুরু হবে। ওই অধিবেশন চলাকালে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক থেকে উপজেলা নির্বাচন
নিয়ে এমপিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, নির্বাচনী এলাকায় প্রভাব
বাড়াতে কয়েকজন মন্ত্রী ও দলের এমপি নিকটাত্মীয় ছাড়াও নিজস্ব লোক তৈরির জন্য পছন্দের
প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। তাই শুধু সন্তান, পরিবার কিংবা আত্মীয়স্বজন
নয়; মন্ত্রী এবং দলের এমপিদের প্রকাশ্যে বা গোপনে উপজেলা নির্বাচনে সম্পৃক্ত না হওয়ার
কড়া নির্দেশনা দেওয়া হবে।
তবে দলীয়ভাবে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও
মন্ত্রী ও দলীয় এমপির অনেকে তা মানবেন না বলে আভাস মিলেছে। এরই মধ্যে অনেক উপজেলায়
মন্ত্রী ও দলের এমপির নিকটাত্মীয়রা প্রার্থী হয়েছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে লড়ছেন
মাজহারুল ইসলাম সুজন এমপির দুই চাচা মোহাম্মদ আলী ও সফিকুল ইসলাম
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন সাহাদারা মান্নান এমপির ছেলে শাখাওয়াত হোসেন সজল। একই জেলায় সোনাতলায় এমপির ভাই
মিনহাদুজ্জামান লিটন
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় নির্বাচন করছেন
আলী আজগার টগর এমপির ভাই আলী মুনসুর
নরসিংদীর পলাশে লড়ছেন ডা. আনোয়ারুল
আশরাফ খান দিলীপ এমপির শ্যালক শরীফুল হক
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রার্থী হয়েছেন
শাহাব উদ্দিন এমপির ভাগনে সোয়েব আহমদ
নোয়াখালীর হাতিয়ায় লড়ছেন মোহাম্মদ আলী
এমপির স্ত্রী ও দুইবারের সাবেক এমপি আয়েশা ফেরদাউস ও ছেলে আশিক আলী।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ড. আব্দুর রাজ্জাক
এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ
মাদারীপুর সদর উপজেলায় শাজাহান খান
এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান প্রার্থী হয়েছেন
এ ছাড়া ধাপে ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে অনেক মন্ত্রী-এমপির নিকটাত্মীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল ঢাকাস্থ ব্রিটিশ দূতাবাসে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল ব্রিটিশ দূতাবাসে। সেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক এক ঘণ্টার বেশি সময় তাদের সাথে বৈঠক করেন। এসময় ব্রিটিশ দূতাবাসে অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক স্থগিত হয়ে গেছে।