নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৯ পিএম, ০২ ডিসেম্বর, ২০১৯
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মলন শেষ হয়েছে। কিন্তু সবগুলো সম্মেলনেই শুধুমাত্র সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটির বাকি সদস্যদের নির্বাচন করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদেরকে।
কিন্তু শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, মহিলা শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ এবং মৎস্যজীবী লীগের কমিটি গঠন করতে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতাদেরকে। তারা এই কমিটিগুলোতে নিজেদের পছন্দের লোকগুলোকে ঢুকানোর জন্য চেষ্টা করছেন। প্রভাব বলয় বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। একাধিক নেতা তাদের সিন্ডিকেটের লোকেদেরকে কমিটিতে ঢুকানোর চেষ্টা করছে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে। এই শুদ্ধি অভিযানের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বকে সম্মেলনের আগেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন সেখানে নতুন নেতৃত্ব রয়েছে। কিন্তু যে সমস্ত আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সময় যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগকে তাদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতেন এর পাশাপাশি তাদের পছন্দের লোকজনকে এখানে ঢুকিয়ে একটা সিন্ডিকেট তৈরি করতেন তারা এখনো সক্রিয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিশেষ করে প্রধান দুটি সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে তৎপরতা লক্ষনীয়। যে সমস্ত নেতৃবৃন্দ দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগের ব্যাপারে উৎসাহে আছে, যুবলীগে তাদের প্রভাব বলয়ে লোকজন দীর্ঘদিন ধরে ছিল তাদের কয়েকজন এখন এই নতুন কমিটিতে তাদের লোক ঢুকানোর জন্য নানা রকম কৌশন অবলম্বন করছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, শেখ ফজলে শামস পরশ, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে। পরশ শেখ সেলিমের ভাতিজা। সেই হিসেবে শেখ সেলিমের প্রভাব বলয় এখনো যুবলীগে কতটা থাকবে সেটা দেখার বিষয়। বিশেষ করে যুবলীগের কংগ্রেসে শেখ সেলিম স্বপরিবারে উপস্থিত হয়েছেন। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে শেখ সেলিম প্রভাব বিস্তার করবেন কিনা এ নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা রয়েছে।
শেখ সেলিম ছাড়াও যুবলীগে একটা প্রভাব বলয় রয়েছে জাহাঙ্গীর কবির নানকের। জাহাঙ্গীর কবির নানক এবার যুবলীগের কংগ্রেসকে ঘিরে তাঁর নিজস্ব ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আনার জন্য চেষ্টা করেছিল। যদিও সেই চেষ্টা বয়সসীমার কারণে ব্যর্থ হয়েছে। তবে জাহাঙ্গীর কবির নানক তাঁর পছন্দের লোকদেরকে যুবলীগের নেতৃত্বে ঢুকানোর জন্য এখন থেকেই মাঠে নেমেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
যুবলীগের বিভিন্ন মহলে খবর নিয়ে জানা গেছে যে, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে পরশ এবং নিখিল আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উপরই নির্ভর করবেন বেশি। প্রধানমন্ত্রীর সুবিধাজনক সময়ে তারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলেও জানা গেছে।
একইভাবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠনও ধীর গতিতে চলছে। তারা এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগ দীর্ঘদিন ধরেই বাহাউদ্দীন নাছিমের কর্তৃত্বেই নিয়ন্ত্রিত হয়। তার পছন্দের লোক ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্ব পাওয়া যেত না এমন ধারণা প্রচলিত আছে। এবার কি বাহাউদ্দীন নাছিমের সেই বলয় থাকবে নাকি ভেঙে যাবে সেটিও একটি প্রশ্ন।
একইভাবে কৃষকলীগ, শ্রমিক লীগ এবং মহিলা শ্রমিক লীগের নেতৃত্বের ব্যাপারে প্রশ্ন উঠেছে। তবে আওয়ামীলীগের একজন নেতা বলেছেন, এবার যারা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন, নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা খুবই কম থাকবে। বরং এইসব অঙ্গসংগঠনগুলোতে কেউ যেন সিন্ডিকেট তৈরি করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অত্যন্ত সচেতন। এই জন্য তিনি একটি কমিটির খসড়া তাঁর নিজস্ব লোক দ্বারা তৈরি করাবেন।
তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সুত্রগুলো বলছে, এবারের নেতৃত্ব তৈরি করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনাই হবেন মূল এবং একমাত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। এই কমিটিতে যারা সদস্য হতে ইচ্ছুক তাদের নামের তালিকা আওয়ামী লীগ সভাপতির একটি নিজস্ব টিম ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করা শুরু করেছে। এই তালিকায় যাদের নাম আসবে তাদের সম্পর্কে গোয়েন্দা অনুসন্ধান চালান হবে। গোয়েন্দা অনুসন্ধানে যদি তাঁরা নিষ্কলঙ্ক প্রমাণিত হয় তাহলে আরো কয়েকটি ধাপ পার করতে হবে। এই ধাপের মধ্যে রয়েছে, তাদের অতীত কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হবে। তাঁরা দলের সঙ্কটের সময় কি ভূমিকা পালন করেছিল সেটা দেখা হবে। তাঁরা দলে কোন গ্রুপিং কিংবা অন্য কর্মকাণ্ডে জড়িত কিনা সেটা দেখা হবে।
সর্বোপরি দেখা হবে যে তাঁরা কতদিন যাবত দল করছে এবং দলে থাকা অবস্থায় তাদের অন্যকোন প্রাপ্তি আছে কিনা। যদি দেখা যায়, যারা গত ১০ বছরে কিছুই পাননি কিন্তু সততা-নিষ্ঠার সাথে দলের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বিভিন্ন সঙ্কটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তাদেরকেই এবার অঙ্গসংগঠনগুলোর বিভিন্ন কমিটিতে প্রাধান্য দেয়া হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।