নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯
আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পরিবারের সংজ্ঞা দিয়েছেন একাধিকবার। জাতীয় সংসদে এবং শুদ্ধি অভিযানের সময় তিনি তার পরিবারের সংজ্ঞায় তার পরিবারের সদস্যদের নাম সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, তার পরিবার হলো তিনি, তার বোন শেখ রেহানা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ রেহানার মেয়ে রেজওয়ানা সিদ্দিক টিউলিপ, আজমিনা সিদ্দিক রুপন্তী, ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। এছাড়া আর কেউ তার পরিবারের সদস্য নয় বলে সুস্পষ্টভাবে সংসদে জানিয়ে দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা এটাও বলেছেন যে, এবারই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার শেষ মেয়াদ। এরপর তিনি আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন না। আর সে কারণেই আওয়ামী লীগের ২০ এবং ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় কাউন্সিলকে ঘিরে নানারকম প্রশ্ন এবং জিজ্ঞাসা।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্পষ্ট বুঝতে পারছে যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারই সম্ভবত শেষবারের মতো দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর তাকে সভাপতির দায়িত্ব পালনের জন্য অনুরোধ করেও কোনো লাভ হবে না। এ ব্যাপারে তিনি বেশ খোলামেলাভাবেই তার অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে যে, তাহলে শেখ হাসিনার পরে কে? আওয়ামী লীগের প্রবীণ একাধিক নেতাই মনে করেন যে, শেখ হাসিনা যদি এবারের কাউন্সিলে শেষবারের মতো নেতৃত্ব গ্রহণ করেন, তাহলে ৩ বছর পর নেতৃত্বে যিনি আসবেন, তাকে এখন থেকেই তৈরি করতে হবে, প্রস্তুতি নিতে হবে। আর আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীরা একটি ব্যাপারে একমত যে, শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনা যদি শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব থেকে সরে যান, তাহলে তার পরিবারের কেউই উত্তরাধিকার হিসেবে আসতে হবে। না হলে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখা কঠিন হবে এবং আওয়ামী লীগের অর্জিত শক্তি দুর্বল হয়ে যাবে।
এই বিবেচনা থেকেই দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব এখন থেকে তৈরি করার মৃদু আওয়াজ উঠছিল। কেউ কেউ বলছিল যে ভবিষ্যতে যিনি নেতা হবেন, তাকে এখন থেকেই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে এনে আস্তে আস্তে তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, এমনকি রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি’র নামও আলোচনায় এসেছে।
কিন্তু শেখ হাসিনা যেরকম দৃঢ়তায় তার অনড় অবস্থানের কথা ব্যক্ত করেছেন। ঠিক এরকই রকম ভাবে তার পরিবারের কাউকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আনার ব্যাপারে আপত্তি করছেন। এমনকি যাদেরকে আনার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী উৎসাহী তারাও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসতে অনাগ্রহী। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজেই বলেছেন তিনি সজীব ওয়াজেদ জয়কে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আনার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু জয় এ ব্যাপারে অনাগ্রহ দেখিয়েছেন।
শেখ রেহানাকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আনার জন্য গোপালগঞ্জের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সময় ধরণা দিয়েছিল। এমনকি লন্ডনে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ শেখ রেহানাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসার জন্য অনুরোধ করেছিল। কিন্তু শেখ রেহানা সেই প্রস্তাব বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আনার ব্যাপারে কেউ কেউ উৎসাহী। তারাও পুতুলকে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে দেখতে চান। কিন্তু অটিজম বিষয়ক এই মনোবিজ্ঞানী তার নিজের কর্মক্ষেত্রেই বিচরণ করতে চান। রাজনীতির ভিতরে মাথা গলাতে চান না।
আওয়ামী লীগের কেউ কেউ মনে করছেন শেখ হাসিনা যতদিন জীবিত থাকবেন ততদিন তারই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা উচিত। যদিও তিনি বলছেন, এবারের কাউন্সিলের পর তিনি আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে থাকবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলের নেতা কর্মীরা সেটা হতে দেবে না বলেই মনে হয়।
আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীত্বে থাকবেন না সেটি অন্য বিষয় কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত দলের নেতৃত্ব শেখ হাসিনা যতদিন জীবিত থাকবেন তিনিই দেবেন। যারা শেখ হাসিনাকে আমৃত্যু পর্যন্ত দলের নেতৃত্বে রাখতে চাচ্ছেন। তারাও মনে করেন বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি করার সময় এখনই। যাকে ধীরে ধীরে তৈরি করতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতির ঘনিষ্ঠরা মনে করেন, কতগুলো বাস্তব কারণেই আওয়ামী লীগ সভাপতি তার পরিবারের কাউকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আনতে চান না। তার প্রধাণ কারণ হলো আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা এবং বিএনপির রাজনীতি।
তারেক জিয়াকে নেতৃত্বে আনার ফলেই তার বিষয়ে নেতিবাচক বিষয়গুলো সামনে চলে আসে। তারেক জিয়া জাতির কাছে একজন অগ্রহণযোগ্য নেতা হিসেবে পরিণত হয়েছেন। ভারতেও উত্তরাধিকার সূত্রে নেতৃত্বে আনা হলেও জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার ঘনিষ্ঠদেরকে বলেছেন, নেতৃত্ব আসে জনগণ থেকে। নেতাকর্মীরা নেতৃত্ব ঠিক করে। উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া নেতৃত্ব কখনই জনগণ গ্রহণ করে না। সেজন্য তিনি মনে করেন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার শূন্যস্থান পূরণ হবে। নতুন নেতৃত্ব ঠিক হবে। আর এটা জনগণের আকাঙ্খা ও অভিপ্রায় অনুযায়ী হবে কাউকে জোর করে নেতা বানানো যায় না বলেও তিনি মনে করেন। আর এই বাস্তবতায় তিনি নতুন নেতৃত্ব তার দলের কাউকে দিতে অনাগ্রহী বলে জানা গেছে। আর এবার কাউন্সিলেও শেখ হাসিনার পরিবারের কেউ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসছেন না এটা মোটামুটি নিশ্চিত।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।