নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৭ জানুয়ারী, ২০২০
ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনের উত্তাপ এখন পুরো ঢাকাজুড়ে। ঢাকা ছাড়িয়ে এই উত্তাপ এখন সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের আগ্রহ যে শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচন কি রকম হয়। কারণ ৩০ ডিসেম্বরের পর যে কোনো কারণেই হোক জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে অনীহা এবং অরূচি তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ চট্টগ্রামের উপ-নির্বাচনেও দেখা গেছে ভোটার উপস্থিতি উদ্বেগজনকভাবে কম। মাত্র ২৩ ভাগ ভোটার সেখানে ভোটপ্রদান করেছেন।
রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, যদি শেষ পর্যন্ত ঢাকা সিটির নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়, তাহলে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। পাশাপাশি সবার ভোটের প্রতি যে অনীহা তৈরি হয়েছে, তা দূর হবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয় পরাজয়ের চেয়ে ভোট বাড়ানো, ভোট নিয়ে মানুষের যে অস্বস্তি এবং উদ্বেগ তা দূর হোক- সেটাই আওয়ামী লীগ চায়। এজন্যই আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তারপরেও নির্বাচন নিয়ে সংশয়, সন্দেহ কাটছে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন যে, আওয়ামী লীগ সভাপতির আন্তরিকতা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের আগ্রহের পরেও কিছু কিছু অতি উৎসাহীদের কারণে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এবং তাদেরকে নিয়েই ভয় সবচেয়ে বেশি।
১. নির্বাচন কমিশন
সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। প্রথমেই নির্বাচন কমিশন এই সিটি নির্বাচনকে বিতর্কিথ করেছে ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা নিয়ে। ৩০ জানুয়ারি সরস্বতী পূজার দিনে ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা নিয়ে এখন শুধু রাজনৈতিক অঙ্গন নয়, সর্বত্রই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের এ ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করে। কাজেই নির্বাচন কমিশনের মধ্যে কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তি এবং কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা সরকারকে খুশি করার মানসিকতা পোষণ করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম অঘটন ঘটিয়েছে। এবারেও তারা সেরকম কিছু করবেন কিনা সে নিয়ে এখন পর্যন্ত সংশয় মুক্ত হওয়া যায়নি।
২. আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা
যদিও এখন পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট নিরপেক্ষ এবং দায়িত্বশীল আচরণ করছে। বিশেষ করে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচন প্রচারণায় যেন বাধাপ্রাপ্ত না হন, তা নিশ্চিত করায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা অনেক প্রশংসনীয়। শুরুতেই বিএনপির প্রার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়ছিল যে তাদের কাউন্সিলর প্রার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সেই অভিযোগ থেকেও বিএনপি এখন সরে এসেছে। এখন পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচনে একটি নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি তৈরি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে যে শেষ পর্যন্ত এই নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি থাকবে কিনা। কারণ আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর মধ্যেও কিছু কিছু অতি উৎসাহী রয়েছেন যারা মনে করেন এই নির্বাচনে জয়ী না হলে আকাশ ভেঙে পড়বে বা সরকারি দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আওয়ামী লীগের চেয়ে অতি আওয়ামী লীগার এইসব আইন প্রয়োগকারী সদস্যের নিয়ে শংকা রয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
৩. প্রশাসনে নিরপেক্ষতা
এখন পর্যন্ত দুই সিটি নির্বাচনে প্রশাসনিক কোনো হস্তক্ষেপের কথা জানা যায়নি। প্রশাসন এখন পর্যন্ত নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে। শেষ পর্যন্ত প্রশাসন কতটুকু নিরপেক্ষ থাকবে জনমনে শংকা রয়েছে। কারণ অতীতে দেখা গেছে যে প্রশাসনের কিছু উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নির্বাচনের মতো রাজনৈতিক অধিকারের বিষয়ে নাক গলান। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চেয়ে তারা আরও বেশি আওয়ামী লীগার হয়ে যায়। অনেকেই আওয়ামী লীগের নেতার মতো আচরণ করেন। নির্বাচনে যেকোনো মূল্যে আওয়ামী লীগকে জেতানোর জন্য বিভিন্ন কূটকৌশলের আশ্রয় নেওয়ার জন্য প্ররোচিত করেন। সেরকম কোনোকিছু আসন্ন নির্বাচনের আগে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা করবেন কিনা তা নিয়েও এক ধরনের সংশয় রয়েছে।
আর এই সংশয়গুলো যদি শেষ পর্যন্ত কাটিয়ে ওঠা যায়, তাহলেই ঢাকা দুই সিটির নির্বাচন হতে পারে আরেকটা ঘুর দাঁড়ানোর নির্বাচন। যে নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটারদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।