নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২১ জানুয়ারী, ২০২০
টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীদের ওপর নজরদারি বাড়ছে। মন্ত্রীরা যেন দুর্নীতির সঙ্গে না জড়ায়, মন্ত্রীদের যেন কোন বদনাম না হয়, নির্বাচনী ইশতেহারে যে ঘোষণাগুলো দেওয়া হয়েছিল সেই ঘোষণার আলোকে যেন মন্ত্রীরা কাজ করেন সেটা নিশ্চিত করার জন্য নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত এক বছরে মন্ত্রীরা যে সমস্ত কার্যক্রম করেছে, সেসব কার্যক্রমের রিপোর্ট কার্ড এখন প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরই এই রিপোর্টের আলোকে মন্ত্রিসভার রদবদলের কথাও শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভার রদবদল হবে না। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, মন্ত্রীদের ওপর নজরদারি বাড়ানো এবং মন্ত্রীরা যেন দুর্নীতিতে জড়িয়ে না পড়ে এজন্য সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা আসতে পারে। এর মধ্যে আছে;
১. রাজনৈতিক বিবেচনায় এপিএস নিয়োগ বন্ধ:
আগে মন্ত্রীদের পছন্দের পিএস এবং এপিএস দেওয়া হত। এটি সাধারণত দেওয়া হত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় এপিএসদের বিরুদ্ধে অনেক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন রাজনৈতিক বিবেচনায় এপিএস নিয়োগ বন্ধের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে। সেই সুপারিশের আলোকে এবার ৭ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিসভায় যেভাবে এপিএস নিয়োগ করা হয়েছিল, উপসচিবদের মাধ্যমে। ঠিক একইভাবে সিনিয়র সহকারী সচিবদের মধ্য থেকে এপিএস নিয়োগের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে। কারণ রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া এপিএসদের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ সবচেয়ে বেশি ওঠে।
২. দলের কাছে মন্ত্রীদের জবাবদিহিতা:
মন্ত্রীরা দলের নির্বাচিত ব্যক্তি হিসেবেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে, কোনো কোনো মন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাজনীতি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন, দলের নীতি আদর্শ এবং দল ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে তাদের মন্ত্রণালয়কে পরিচালনা করছেন না। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের অবস্থা খুব সুস্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পরেই নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেই আলোকেই তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেছিলেন এবং নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন কতটুকু অগ্রগতি হচ্ছে তা মনিটরিং করারও নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
কিন্তু অনেকগুলো মন্ত্রণালয়ে এই নির্দেশনাগুলো প্রতিপালিত হচ্ছে না বলে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকেরা মনে করছেন। এজন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যারা যে বিষয়ে দায়িত্বে রয়েছেন, যেমন যিনি ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক, তিনি ঐ মন্ত্রণালয়ের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে কতটুকু অগ্রগতি করছে- সেই ব্যাপারে জবাবদিহিতা করবে। মন্ত্রীদেরকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে এ ব্যাপারে নিয়মিত রিপোর্ট প্রদান করতে হবে।
৩. সংসদীয় কমিটিকে কার্যকর করা:
মন্ত্রীদের নজরদারি এবং জবাবদিহিতা বাড়ানোর জন্য সংসদীয় কমিটিকে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংসদীয় কমিটিগুলোতে মন্ত্রীরা যেন উপস্থিত হন এবং মন্ত্রীদের কার্যক্রম যেন মূল্যায়ন করা হয়, সে ব্যাপারে ইতিমধ্যে সংসদের স্পিকার সংসদীয় কমিটিকে কার্যকর করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। নিয়মিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক এবং বৈঠকে সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
৪. সব বিষয়ে কথা না বলা:
মন্ত্রীদের নজরদারির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে, সেটি হলো মন্ত্রীদের বাক সংযত করা। সব ধরনের বিষয়ে তারা যেন কথা না বলেন এজন্য মন্ত্রীদের ওপর সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আসতে পারে। কারণ দেখা যায় যে, একই বিষয়ে এক এক মন্ত্রী এক একরকম কথা বলে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ সংকটের সময় এক এক মন্ত্রীর এক এক মন্তব্য নিয়ে সরকার একটি অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়েছিল। এ কারণে মন্ত্রীদের বক্তব্য তাদের মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে এবং দলীয় মুখপাত্র ছাড়া কেউ অন্য বিষয়ে বক্তব্য রাখতে পারবেন না এরকম একটি নির্দেশনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
৫. মন্ত্রীদের মন্ত্রণালয়গুলোতে পরিদর্শন করা:
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরপরই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের গতি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করতে পারেন। উল্লেখ্য যে, নির্বাচনের পরপরই তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেছিলেন।
৬. মনিটরিং সেল:
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম কতটুকু হচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রীর আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করার জন্য একটি মনিটরিং সেলও গঠন করা হতে পারে এবং প্রধামন্ত্রীর মূখ্য সচিবের নেতৃত্বে এইধরনের মনিটরিং সেল বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমগুলো পর্যবেক্ষণ করবে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, সরকারের মূল লক্ষ্য হলো যে অঙ্গীকার পেয়ে তাঁরা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সেই নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করা এবং পাঁচ বছরের মেয়াদে যেন সেই ইশতেহারের শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারে সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। আর সেজন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে আরো কার্যকর এবং মন্ত্রীদের দায়িত্ববান করার জন্য এইরকমের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সরকারি নীতিনির্ধারকরা মনে করছে, এই ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করার ফলে সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা যেমন বাড়বে তেমনি মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি আসবে।
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের সব রকম কমিটি গঠন ও সম্মেলন বন্ধ থাকবে।
শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক বিফ্রিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন হচ্ছে। সামনে প্রথম পর্যায়ের নির্বাচন হবে। এই নির্বাচন চলাকালে উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে কোনো সম্মেলন, মেয়াদোত্তীর্ণ সম্মেলন, কমিটি গঠন এই প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে’।
মন্ত্রী-এমপির নিকটাত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, নিকটজনদেরকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। যারা ভবিষ্যতে করতে চায় তাদেরও নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। যারা আছে তাদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
নির্দেশনা দেওয়া হলেও অনেকেই এখনো নির্বাচনে আছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রত্যাহারের তারিখ শেষ হোক, তার আগে এ বিষয়ে কীভাবে বলা যাবে।
ওবায়দুল কাদের উপজেলা নির্বাচন সেতুমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।