নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২১ জানুয়ারী, ২০২০
এনআরসি নিয়ে টালমাটাল ভারত। এনআরসি, নাগরিকপঞ্জিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে মোদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক যেন থমকে গেছে। এমনকি সম্পর্ক নিয়ে দুই দেশের মধ্যে শীতলতার গুঞ্জনও রয়েছে। বিশেষ করে এনআরসির বিষয়ে ক্ষমতাশীল বিজেপির একাধিক মন্ত্রী এবং দায়িত্বশীল নেতার নানা রকম উস্কানিমূলক কথাবার্তার ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়েনের গুঞ্জন রয়েছে কুটনৈতিক মহলে।
বলা হচ্ছে বাংলাদেশ ভারতের এনআরসি বিষয়ক সিদ্ধান্তগুলো কিভাবে নেবে? বাংলাদেশ কি নিরবে মুখ বুজে থাকবে কিনা এ নিয়েও নানা রকম কথাবার্তা ছিল। এই সুযোগে ভারতের কর্তা ব্যক্তিরা নানা রকম কথা বার্তাও বলেছেন। কিন্তু মানি লোকের এক কথাই যে অনেক কথার জবাব তা প্রমাণ করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাম্প্রতিক সময় এক সাক্ষাতকারে এনআরসিকে অপ্রয়োজনীয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। আর তার এই একটি কথাতেই ভারতের রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। শেখ হাসিনার একটি কথাই অনেকগুলো বার্তা স্পষ্ট করে দিয়েছে।
প্রথমত, এই একটি কথার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি ভারত নির্ভর নন। ভারতের সব সিদ্ধান্ত মুখ বুজে সহ্য করার মতো রাজনৈতিক নেতা নন তিনি। দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করার কুটনীতিতেও শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না।
দ্বিতীয়ত, এই বক্তব্যের মাধ্যমে শেখ হাসিনা এনআরসির ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এনআরসির কারণে কোনো ভারতীয় মুসলিমকে যদি বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হয় তাহলে সেটা যে বিনা বাঁধায় মেনে নিবে না সে ব্যাপারেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সুষ্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন।
তৃতীয়ত, এই বক্তব্যের মধ্যে শেখ হাসিনা একটি বার্তা স্পষ্ট করেছেন বাংলাদেশের কুটনীতি স্বাধীন। সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বিশ্বাসী। বাংলাদেশের কুটনীতি শুধু ভারত নির্ভর নয়।
এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ঘটনা ভারতের জন্য অস্বস্থির কারণ হয়েছে। যা ভারতের থিঙ্কট্যাংক এবং নীতি নির্ধারকদের টনক নড়িয়েছে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে নতুন কিছুই বলার নেই। অনেকেই মনে করতেন যে ভারত অখুশী হবে বলেই হয়তো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফরে যায় না।
কিন্তু বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এবার একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিন দফায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে পাকিস্তান সফরে পাঠাচ্ছে তারা। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ তার স্বাধীন ও স্বকীয় অবস্থান আরেকবার প্রমাণ করল।
কিছুদিন আগে সংকটের টানাপোড়েনের সময় ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে এখন তারা আবার বাংলাদেশে পেঁয়ার রপ্তানি করতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের তরফে জানানো হয়েছে ভারত থেকে এখন তারা পেঁয়াজ আমদানিতে আগ্রহী নয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ তার স্বকীয় বৈশিষ্ট এবং স্বকীয় বাণিজ্য কৌশল স্পষ্ট করেছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে প্রায় উচ্চারিত হয় যে বাংলাদেশ ভারতের ব্যাপারে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে। বাংলাদেশ ভারতের কাছে তার স্বার্থ বিকিয়ে দেয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ বছরে সুস্পষ্ট ভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন ভারতের সঙ্গে অমিমাংসীত বিষয়গুলো কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বিষয়গুলো তিনি আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে চান।
প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা যেমন পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও গঙ্গার পানি চুক্তি করেছিলেন। তেমনি ২০০৮ থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি ছিট মহল সমস্যা সমাধান করেছেন, সমুদ্র সীমা নির্ধারণ করেছেন, বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি করেছেন। আবার বাংলাদেশের মাটি যে ভারতের জঙ্গিদের জন্য ব্যবহৃত হতো সেটাও বন্ধ করেছেন। কারণ ভারতের সামনে শেখ হাসিনার বিকল্প কিছু নেই।
অন্যদিকে শেখ হাসিনার জন্য অনেক বিকল্পই রয়েছে। ভারত নির্ভর রাজনীতি যেমন শেখ হাসিনা করেন না তেমনি বাংলাদেশে কুটনীতিও ভারত নির্ভর নয়। এই বার্তাটা গত কয়েক দিনে শেখ হাসিনা স্পষ্ট করেছেন। এর ফলে ভারতের টনক নড়েছে। এখন বল ভারতের কোর্টে। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক রাখতে চায়, কতটুকু সুন্দর রাখতে চায়, আগের অবস্থানে রাখতে চায় নাকি এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভারতকেই।
মন্তব্য করুন
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সভাপতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বেগম জিয়া আর ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন না, রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন এ রকম একটি বক্তব্য সামনে নিয়ে আসছেন শামীম ইস্কান্দার।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠিত করা এবং বিভেদ-বিভক্তির দূর করার জন্য যে ডাক দেওয়া হয়েছিল তারপর একটু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল বলে বটে। কিন্তু এখন আবার উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে তৃণমূল বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সামাল দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে নির্বাচন কেন্দ্রীক বিরোধ অন্যদিকে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাওয়া আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তদারকির অভাবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই।