নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৫ জানুয়ারী, ২০২০
বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি এক করুণ পরিণতির দিকে এগুচ্ছে। গতকাল বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার পরিবারের লোকজন সাক্ষাৎ করেছেন। সেখান থেকে বেরিয়ে তারা বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হচ্ছে। তার ব্লাড সুগার ১৫ এবং তার এক হাত বেঁকে গেছে।
বেগম খালেদা জিয়া তাদের বিশেষ বিবেচনায় অর্থাৎ প্যারোলের মাধ্যমে আবেদন করার বিষয় নিয়ে কাজ শুরুর কথা বলেছেন। এর মাধ্যমে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নি:শেষ প্রায়। তার শারীরিক অবস্থাও উদ্বেগজনক বলে বিএনপির নেতৃবৃন্দরা প্রকাশ্যে স্বীকার করছেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া অরফানেজ মামলায় দণ্ডিত হয়ে যখন জেলে যান তখন বাংলাদেশে এমন বিশ্বাস করার লোক কম ছিল যে, তিনি এতদিন জেলে থাকবেন। বরং বিএনপি নেতারা মনে করেছিলেন যে, বেগম খালেদা জিয়া মাত্র অল্প কিছু সময়ের জন্য কারাবরণ করছেন। শীঘ্রই তিনি আরো জনপ্রিয় হয়ে ফিরে আসবেন। রাজনৈতিক মহলে এমন আলোচনা হয়েছিল যে, রাজনৈতিক মহলে বেশিদিন বেগম খালেদা জিয়াকে কারান্তরীণ রাখা সম্ভব নয়।
বেগম জিয়ার আইনজীবিরা মনে করেছিলেন যে, খুব শিঘ্রই তাকে জামিন করিয়ে আনা যাবে। কিন্তু দুই বছর গড়াতে চললো; বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে বিএনপি কার্যত কিছুই করতে পারেনি।
উল্লেখ্য যে, ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আগে বেগম জিয়া লন্ডন সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি চোখ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছিলেন। সেই সময় বেগম খালেদা জিয়া এই মামলা এড়ানোর জন্য আরো কিছুদিন থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তারেক জিয়ার প্রলোভনের কারণেই তিনি সে সময় থাকেননি। তিনি দেশে ফিরে আসেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন হলো বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান পরিণতির জন্য দায়ী কে? এই প্রশ্নের উত্তর বিশ্লেষণ করে ৫ জনকে দায়ী করা যায় এই পরিণতির পেছনে।
তারেক জিয়া
বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থার জন্য সবথেকে বেশি দায়ী করা হয় তাঁর জেষ্ঠ্য পুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে। বিএনপির নেতারাই এখন মনে করেন, তারেকের কারণেই বেগম খালেদা জিয়ার আজকের এই পরিণতি। কারণ যে দুটি মামলায় বেগম খালেদা জিয়া দণ্ডিত হয়েছে, সেই মামলা দুটিতে যে অর্থ লোপাটের অভিযোগ, সেই অর্থ লোপাটের সাথে তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুন এবং তারেক জিয়ার কিছু ব্যবসায়িক সহযোগিরা যুক্ত ছিল। এই থেকে স্পষ্ট হয় যে, বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে যেসমস্ত অনিয়ম, দুর্ব্রিত্তায়ন এবং দুর্নীতিগুলো হয়েছে তা সবগুলোই হয়েছে তারেক জিয়ার মদদে। বিশেষ করে হাওয়া ভবনের মাধ্যমে তারেক জিয়া যে দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছিলেন, তাঁর দায়ভার বেগম খালেদা জিয়াকে নিতে হচ্ছে। বিএনপির অনেক নেতাই এই কথা বলেন যে, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা বিএনপি আর আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি ‘পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন’ সম্পর্ক তৈরি করে দিয়েছে এবং সেই একুশে আগস্ট হামলার প্রধান হোতা তারেক জিয়া। কাজেই বেগম খালেদা জিয়ার আজকের পরিণতির জন্য তারেক জিয়াই সবথেকে বেশি দায়ী- এটা বিএনপি এবং সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে।
বেগম জিয়ার পরিবার
বেগম খালেদা জিয়ার ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজনকেও বিএনপির লোকজন কম দায়ী করেনা। কারণ তাদের বেসুমার দুর্নীতি এবং অতি লোভ বেগম খালেদা জিয়াকে কঠোর হতে দেয়নি এবং বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির পথে নিমজ্জিত করেছে। ভাই-বোনদের ক্ষমতার লোভের কাছে বেগম খালেদা জিয়া পরাজিত হয়েছেন এবং তিনি নিরবেই এসব সহ্য করেছেন। যার কারণে আজকে এসবের মাশুল দিতে হচ্ছে।
বিএনপির নেতৃবৃন্দ
বেগম খালেদা জিয়ার দুর্ভাগ্য তার আস্থাভাজন ও বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব বিএনপিতে তৈরি করতে পারেননি। বরং নেতৃবৃন্দ একদিকে যেমন লোভী তেমনি কাপুরুচিত। এই বিএনপির নেতৃবৃন্দর যেমন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে লড়াই করার সাহস নেই। তেমনি বিভিন্ন প্রলোভনের কাছে তারা পরাভূত হয়েছেন।
বিএনপির নেতৃবৃন্দই প্রকাশ্যে বলেন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপির আন্দোলনই যথেষ্ট ছিল কিন্তু বিএনপি একটি সফল আন্দোলন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য করতে পারেনি। আর এজন্য বিএনপির মহাসচিবসহ দলটির নেতৃবৃন্দকে তৃনমূলের নেতাকর্মীরা কম দায়ী করে না।
আইনজীবীরা
বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা বিশেষ শীর্ষ পর্যায়ের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদসহ সিনিয়র আইনজীবীরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে এক রকম নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাদের নিষ্ক্রিয়তা এবং নির্লিপ্ততার জন্যই বেগম খালেদা জিয়ার পরিণতি এমন হয়েছে বিএনপির নেতাদের অনেক মনে করেন।
বিশেষ করে যে দুইটি মামলায় বেগম খালেদা জিয়া দণ্ডিত হয়েছেন এই দুটি মামলা বিভিন্ন ধাপে ধাপে উচ্চ আদালতে যাওয়া হয়েছে। আর উচ্চ আদালতে মামলাটিতে দীর্ঘায়িত করা এবং কালক্ষেপণের নীতি পরে বুমেরাং হয়েছে বিএনপির জন্য।
এখন পরিস্থিতি হয়েছে যে উচ্চ আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে কোনো যুক্তি নেই। আর এটাও বেগম খালেদা জিয়ার এই পরিণতির জন্য কম দায়ী না।
সরকারের কৌশল
বেগম খালেদা জিয়ার এই পরিণতির জন্য সরকারের রাজনৈতিক কৌশলগুলো বিএনপির নেতৃবৃন্দ এবং সরকারের নেতৃবৃন্দ মনে করেন। আওয়ামী লীগের মনে বিএনপির ভুল রাজনীতিকে কাজে লাগিয়েছে সরকার। সরকার এই মামলার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো নীতি গ্রহণ না করে আইনী প্রক্রিয়ায় ধাপে ধাপে গেছে। আর আস্তে আস্তে পরিস্থিতিটাকে এমন করেছে এট সরকারের কোনো বিষয় নয় বরং বিচার বিভাগ এবং খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়। আর যে কারণে এই মামলাগুলোতে সরকার একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেছে। পাশাপাশি সরকার তাদের বার বার বলছে খালেদা জিয়ার বিষয়ে তাদের কিছুই করার নেই, তা আদালতের বিষয়। আর সরকারের কৌশলের কাছেই বিএনপির পরাজিত হয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়ার এই পরিণতির জন্য দায়ী যেই হোক না কেনো, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আজ তার পাশে কেউ নেই।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
কিংস পার্টি সরকার শমসের মবিন চৌধুরী মেজর হাফিজ বিএনপি তৈমুর আলম খন্দকার
মন্তব্য করুন
বিএনপি কিংস পার্টি মেজর হাফিজ সাকিব আল হাসান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
সংযমের এই রমজান মাসে ইফতার পার্টির নামে বিএনপি গিবত পার্টি করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শ্রমিক লীগ এবং কৃষক লীগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বর্তমানে বিএনপির নেতারা ক্লান্ত, কর্মীরা হতাশ। এ অবস্থায় গালিগালাজ করা ছাড়া তাদের করার কিছু নেই। দলটি এখন ইফতার পার্টির নামে সরকারের অন্ধ সমালোচনা করছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি ইফতার পার্টি করে, এটাকে ইফতার পার্টি বলবো নাকি গিবত পার্টি বলবো। আওয়ামী লীগের গিবত করার জন্যই ইফতার পার্টি। স্রষ্টার প্রশংসার জন্য নয়, ইফতার পার্টির নামে ঢালাওভাবে সরকারের সমালোচনা করে।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ওবায়দুল কাদের রাজনীতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
বিএনএম সাকিব আল হাসান মেজর হাফিজ
মন্তব্য করুন
সদ্যই রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন দেশসেরা অলরাউন্ডার, বাংলাদেশ ক্রিকেটের রত্ন সাকিব আল হাসান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নমিনেশন নিয়ে হয়েছেন মাগুরা-১ আসনের এমপি। তবে এরই মাঝে ভিন্ন এক সমালোচনার জন্ম নিয়েছে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে।
গুঞ্জন উঠেছে, দ্বাদশ নির্বাচনের পূর্বে ‘কিংস পার্টি’ খ্যাত বিএনএমে যোগ দিয়েছিলেন। সম্প্রতি গণমাধ্যমে এমন একটি ছবিও প্রকাশিত হয়েছে। সাবিকের এমন কাণ্ডে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাকিব আওয়ামী লীগের টিকিটে মাগুরা থেকে নির্বাচন করে জয় লাভ করেছে। এর আগে সে কোনো দল করেছে কি না সেটা আওয়ামী লীগের কাছে বিবেচ্য নয়।
কাদের আরও বলেন, নমিনেশন চাওয়ার আগে সাকিব আমাদের পার্টির কেউ ছিল না। নমিনেশন যখন নেয় তাকে প্রাইমারি সদস্য পদ নিতে হয়। সে শর্ত পূরণ করা দরকার সেটা সে করেছে।
তিনি বলেন, সরকারি দল কিংস পার্টি করতে যাবে কেন? নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতিতে অনেক ফুল ফোটে। কোনটা কিংস পার্টি, কোনটা প্রজা পার্টি এটা সম্পর্কে আমার জানা নেই।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আমাদের গণতন্ত্র ঠিক আছে। আমাদের নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন ছাড়া সরকারে কেউ ক্ষমতা বসাতে পারবে না।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনিসুল ইসলামসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন
অনেকেই মনে করে যে, সরকারের পৃষ্টপোষকতায় কিংস পার্টিগুলো গঠিত হয়েছিল। তৃণমূল বিএনপি এবং বিএনএম গঠনের পিছনে সরকারের মদদ এবং সমর্থন ছিল বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। কিন্তু সেই মদদ এবং সমর্থন শেষ পর্যন্ত টেকেনি। কিংস পার্টি গঠনের ব্যাপারে শুরুতে সরকারের লোকজন যেভাবে আগ্রহী ছিল, পরবর্তীতে তাদের মধ্যে সে আগ্রহ থাকেনি। বিএনএম এবং তৃণমূল বিএনপির অনেক নেতাই ব্যক্তিগত আলাপ চারিতায় বলেছে, সরকার গাছে তুলে মই সরিয়ে নিয়েছে।
মেজর হাফিজ এবং সাকিব আল হাসানের ভাইরাল ছবির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে নির্বাচনের আগে বিএনপির অনেকেই নির্বাচনে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিল। তারা বিএনএম বা কিংস পার্টি গঠনেও তৎপর ছিলেন। মেজর হাফিজ সুবিধা করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত বিএনএমে যোগ দেননি। এখন তিনি আবার সাচ্চা বিএনপির সাজার একটি নাটক করছেন। তবে সুযোগ সুবিধা পেলে কে কি করতে পারে তার একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রকাশিত হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিনের ছবিতে।