নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৬ জানুয়ারী, ২০২০
২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের পর ক্রমাগতভাবে ক্ষত বিক্ষত বিএনপি এখন রাজনীতিতে অস্তিত্বের সংকটে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপির হতশ্রী অবস্থা নিয়ে দলটির নেতাকর্মীরাই হা-হুতাশ করেন। শেষ পর্যন্ত এই দলটির অবস্থা মুসলিম লীগের মতোই হবে কিনা তা নিয়ে দলটির মধ্যেই নানা আলাপ আলোচনা চলে। আর এর মধ্যে বিএনপির মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষত চিহ্ন হলো ঢাকা মহানগরী। দলটির অনেক নেতাই মনে করে ২০১৪-২০১৫ সালের আন্দোলনে তারা প্রায় সফল হয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঢাকায় তারা তেমন কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি।
একটা সময় ঢাকায় বিএনপির অনেক শক্তিশালী ছিল বিশেষ করে সাদেক হোসেন খোকা ও মির্জা আব্বাসের মতো নেতৃত্ব ঢাকায় বিএনপির একটি শক্ত সাংগঠনিক অবস্থা তৈরি করতে পেরেছিল। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে সাদেক হোসেক খোকা আস্তে আস্তে নিজেকে রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নেন। এরপর অসুস্থতা নিয়ে তিনি বিদেশে চলে গেলে ঢাকায় অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে বিএনপি।
কারণ মির্জা আব্বাস ঢাকার মেয়র হলেও তিনি সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে তেমন জনপ্রিয় নন। বিশেষ করে পুরাণ ঢাকার তার অবস্থান কখনোই সংহত ছিল না। আর এ কারণে বিএনপি ঢাকার নেতৃত্ব তৈরির জন্য নানা রকম চেষ্টা করেছে। রংপুর থেকে হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে আমদানী করেও চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু ঢাকায় শক্তিশালী সাংগঠনিক ভীতি তৈরি করতে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। আর এই ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রেই এবার নির্বাচনে দলটির সবচেয়ে বড় চমক ছিলেন ইশরাক হোসেন।
এছাড়া এই নির্বাচনে যাওয়ার পেছনে বিএনপির একটি বড় যুক্তি ছিল দুই তরুণকে তৈরি করা। এই নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কোনো বিএনপির নেতারা মনে করছেন তারা ইশরাকের মতো তরুণ সম্ভাবনাময় ভবিষতের নেতা পেল। এই নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার আগে প্রায় অপরিচিত আর অনালোচিত ছিলেন ইশরাক হোসেন। সাদেক হোসেন খোকার পুত্র। এছাড়া দেওয়ার মতো তার আর কোনো পরিচয় ছিল না। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণা যখন শুরু হয় তখন আস্তে আস্তে তিনি আলোচনায় আসতে শুরু করেন। আর বিএনপির মধ্যে ইশরাক হোসেনকে নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে অত্যন্ত তরুণ হওয়ার পরেও তার পরিমার্জিত কথা-বার্তা, দৃঢ় বাচন ভঙ্গি এবং রাজনৈতিক দৃঢ়তা দেখে অনেকেই প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছায়া দেখতে পাচ্ছেন ইশরাকের মধ্যে।
নেতারা বলছেন এই নির্বাচনে তাদের পরাজয় অনিবার্যিত। তারা হয়তো শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচনে জীততে পারবে না। কিন্তু এই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে তারা ইশরাক হোসেনের মতো একজন তরুণ নেতাকে পেলেন।
বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, এই নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেনো ঢাকায় নেতৃত্ব দেওয়ার মতো একজন তরুণ নেতা পাওয়া গেল। যিনি অন্তত আরো ২০ বছর ঢাকায় বিএনপির জন্য অবদান রাখতে পারবেন।
ইশরাক হোসেনকে নাবালক হিসেবে নির্বাচনে গনণার মধ্যেই আনছিলেন না ভোটাররা। কিন্তু আস্তে আস্তে ভোটারদের কাছে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে সক্ষম হয়েছেন। বিশেষ করে তার কথা-বার্তার মধ্যে বিএনপির তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ আশার আলো দেখছেন।
বিএনপির নেতৃবৃন্দ যে ধরণের কথা বার্তা ভয় পায় বা বিএনপির নেতৃবৃন্দ যে ধরণের ভঙ্গুর এবং মেরুদণ্ডহীন অবস্থান গ্রহণ করেন তার সম্পূর্ণ বিপরীত ইশরাক হোসেন। বরং তার দৃঢ় চিত্র মনোভাব এবং ভোটারদের কাছে তার উপস্থাপনা বিএনপির নেতৃবৃন্দ পছন্দ করেছেন। আর এ কারণেই ঢাকা নিয়ে বিএনপির যে অস্বস্থি এবং হতাশা ছিল বিশেষ করে কর্মীরা যারা পছন্দের নেতৃত্ব পাচ্ছিলেন না সেই জায়গাটি ইশরাক হোসেন পূরণ করেছেন বলে মনে করেন। তাই এই নির্বাচনে বিএনপির সবচেয় বড় অর্জন হলো ইশরাক হোসেনের মতো তরুণ একজন নেতাকে পাওয়া। যিনি ঢাকায় বিএনপির শূন্য স্থান পূরণ করতে পারবেন। নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কোনো ইশরাক যে আগামী দিনে ঢাকায় বিএনপিকে নেতৃত্ব দেবেন সেটা এই নির্বাচনের ফলাফলের আগেই নিশ্চিত হয়ে গেল।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।