নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারা অন্তরীণ রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। বিএনপি নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটাপূর্ণ। বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে যে এই করুণ পরিণতি অপেক্ষা করছে তা ছিল পূর্ব অনুনীত। বিভিন্ন রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত এবং বিভিন্ন কাজ না করার কারণে বেগম খালেদা জিয়ার আজকের পরিণত বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বেগম খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পর্বের গতি প্রবাহ এক সূত্রে গাঁথা ছিল। কিন্তু কতগুলো কাজ না করার কারণে রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়ার আজকের অবস্থান তৈরি হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। যে কাজগুলো করলে বেগম খালেদা জিয়ার পরিণতি আজকের মতো হতো না বলে মনে করা হয় সেই সমস্ত কাজের মধ্যে রয়েছে;
১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যের ডাক
১৯৯১ সালের নির্বাচনে অভাবনীয়ভাবে এবং স্রোতের বিপরীতে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিজয়ী হয়েছিল বিএনপি। সে সময় জামাতের সমর্থনে তারা সরকার গঠন করেছিলেন। সেই সময় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ফসল হিসেবে তিন জোটের রূপ রেখার অংশ হিসেবেই বিএনপি ক্ষমতায় আসে। কিন্তু ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের বদলে বিভক্তির রাজনীতির সূত্রপাত করেন। এই সময়ে বেগম জিয়া যদি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিতেন এবং সুশাসনের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতেন তাহলে হয়তো বাংলাদেশের রাজনীতিক ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো।
ইনডিমিনিটি অধ্যাদেশ বাতিল
বেগম খালেদা জিয়ার সামনে সুযোগ এসেছিল ইনডিমিনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে একটি অমরত্বের পথ গ্রহণ করার। কিন্তু তিনি ইনডিমিনিটি অধ্যাদেশতো বাতিল করেনই এমনকি ১৫ আগস্টে নিজের ভুয়া জন্মদিন পালন করেছেন। এর পাশাপাশি তিনি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের কুটনীতিক চাকরিতে পদোন্নতি দিয়েছেন। সেই সময় তিনি যদি ইনডিমিনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে জাতির পিতার খুনীদেরকে বিচারের আওতায় আনতেন তাহলে হয়তো পরিস্থিতি অন্যরকম হতো।
২০০১ সালের নির্বাচনে পর প্রতিপক্ষদের ওপর আক্রমণ
২০০১ সালের ১ অক্টবরের নির্বাচনে দুই তৃতীয়াশের বেশি আসন পেয়ে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিজয়ী হয় বিএনপি ও জামাত জোট। এ সময় নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের সাথে সাথে বিএনপির ক্যাডাররা সশস্ত্রভাবে চড়াও হয় আওয়ামী লীগ এবং সংখ্যালঘুদের ওপর। যদি ঐ সময় বেগম জিয়া ওই হামলা এবং দমন নীতি গ্রহণ না করতেন তাহলে হয়তো বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো।
হাওয়া ভবন প্রতিষ্ঠা
২০০১ সালের নির্বাচনের আগেই হওয়া ভবন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক জিয়া। আর বেগম জিয়ার এতে প্রত্যক্ষ মদদ ছিল। এই হাওয়া ভবন যদি প্রতিষ্ঠা না করতেন তাহলে হয়তো বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক পরিণতি অন্যরকম হতো।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চিরস্থায়ীভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিচ্ছেদ রেখা তৈরি করেছে। এই ঘটনার কারণেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে সমঝোতা ও সহমর্মিতার সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ এই হামলার ঘটনাটি বেগম জিয়া চাইলেই এড়াতে পারতেন। সেটি না করা রাজনীতিতে তার একটি বড় ভুল ছিল।
ছেলেকে রাজনীতিতে আনা
ছেলেকে রাজনীতিতে আনা বেগম খালেদা জিয়ার আরেকটি বড় ভুল করেছেন। এই কাজটি যদি তিনি না করতেন তাহলে হয়তো তিনি রাজনীতিতে এত সমালোচিত, নিন্দিত ও দীক্ষিত হতেন না।
অধ্যাপক বি. চৌধুরীকে সরিয়ে দেওয়া
২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু অধ্যাপক বি. চৌধুরীকে তিনি বেশি দিন সহ্য করতে না পারায় তাকে সরিয়ে দেন। আর অধ্যাপক বি. চৌধুরীকে সরিয়ে দেওয়া ছিল বেগম খালেদা জিয়ার একটি বড় ভুল।
কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার জন্য সংবিধান সংশোধন
কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধাণ করার জন্য সংবিধান সংশোধন করেছিলেন। এই কাজটি করে বেগম খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপর আস্থা নষ্ট করে দিয়েছিলেন। সেটি হলো কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধাণ করার জন্য প্রধান বিচারপতির বয়স সীমা বাড়িয়ে দেওয়া সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী। আর এর মাধ্যমেই মূলত বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মৃত্যু ঘটে।
মইন উ আহমেদকে সেনাপ্রধান করা
আট জনকে ডিঙিয়ে মইন উ আহমেদকে সেনাপ্রধান করা ছিল বেগম খালেদা জিয়ার আরেকটি রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত। যে সিদ্ধান্তের জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে ওয়ান ইলেভেন পর কারাবরণ করতে হয়েছিল।
২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়া
বেগম খালেদা জিয়া যদি ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিতেন তাহলে হয়তো তার রাজনৈতিক পরিণতি অন্যরকম হতো।
এই কাজগুলো করা না করার কারণেই বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে তার অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি বাংলাদেশের নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মেজর হাফিজ সাকিব আল হাসান কিংস পার্টি ড. মঈন খান বিএনপি
মন্তব্য করুন
মো. সিদ্দিকুর রহমান আওয়ামী লীগ বিপ্লব বড়ুয়া সুজিত রায় নন্দী
মন্তব্য করুন
আবদুল আউয়াল মিন্টু তারেক জিয়া বিএনপি ২৮ অক্টোবর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার জন্য নতুন করে আবেদন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার ভাই শামীম ইস্কান্দারের করা এই আবেদন এখন আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন যে, সচিব তাকে ফাইলটি পাঠিয়েছেন। এটি তিনি দেখছেন। আগামীকাল তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। আইনমন্ত্রী এও বলেছেন যে, এ ব্যাপারে পূর্বের সিদ্ধান্ত থেকে তিনি খুব একটা সরে আসবেন না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে কি ধোঁকা দিয়েছে—এরকম একটি প্রশ্ন এখন বিএনপির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিএনপি নেতারা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনায় এই প্রসঙ্গটি বারবার আনছেন। বিএনপির একাধিক নেতা মনে করে, বিএনপি যে আগ্রাসী অবস্থান গ্রহণ করেছিল, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিএনপি কর্মীদের মধ্যে যে তেজি ভাব এসেছিল, তার প্রধান কারণ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব এবং আগ্রহ। তাছাড়া বিভিন্ন সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা কূটনীতিকরা বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যে ভাষায় যে ভাবে কথা বলেছেন তাতে বিএনপির নেতাদের মধ্যে স্থির বিশ্বাস জন্মগ্রহণ করেছিল যে, তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে চায় না। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম এজেন্ডা। আর এ কারণেই বিএনপি নেতারা এই বক্তব্যটিকে তাদের কর্মীদের কাছে সঞ্চারিত করেছিল এবং কর্মীরা উৎসাহিত হয়েছিল।
টানা ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। ১৬ বছরে পা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ। টানা ক্ষমতায় থাকলেও আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রে একটা ভারসাম্য লক্ষ্য করা যায়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীদেরকে বিভিন্ন সময় পরিবর্তন করে একেক মেয়াদে একেক জনকে মন্ত্রী করেন এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন করে নেতাদের যেমন যোগ্যতা পরিমাপ করেন, ঠিক তেমনি তাদেরকে ক্ষমতাবান করেন।
নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে একশ কোটি টাকার বেশি উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। সরকারের সঙ্গে দেন দরবার করছেন। কাকে কাকে আটক করতে হবে এবং কারা কারা বিএনপিতে বড় ধরনের আন্দোলন করতে চায়, সরকারের জন্য বিপজ্জনক সেই নামের তালিকা সরবরাহ করেছেন। কাদেরকে বাইরে রাখলে কোন সমস্যা নেই সে নামও জানিয়েছেন সরকারি দলের লোকজনকে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেন বিএনপি কোনো বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতে পারে সেজন্য আশ্বাসও দিয়েছেন। তার এই আশ্বাসের কারণেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনেকটা নির্ভর অবস্থায় নির্বাচন করেছে এবং বিএনপি যথারীতি নির্বাচন প্রতিরোধে কোন বড় ধরনের সহিংসতা বা নাশকতা করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছে।