নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
পাপিয়ার ঘটনা নিয়ে গত দুদিন ধরে যথেষ্ট তোলপাড় চলছে। বলা হচ্ছে যে এটা আওয়ামী লীগের অবক্ষয় এবং আওয়ামী লীগের যে আদর্শিক চর্চা কমে গেছে তার একটি বড় প্রমাণ হলো পাপিয়ার এই ঘটনা। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে যে, পাপিয়ার এই ঘটনার অনেকগুলো ইতিবাচক দিক রয়েছে। বিশেষ করে সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো যারা অপরাধ এবং দুর্বৃত্তায়ন করে তারা যে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় পায় না- পাপিয়া, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূইয়া তার বড় উদাহরণ।
কারণ যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তখনই তাদের আইনের আওতায় এনেছে। তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা কোনোরকম বাধা প্রদান করেনি। এটি সুশাসন এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি বড় ইতিবাচক দিক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সালেও এরকম মাদক, দুর্বৃত্তায়ন, নারীদের টেন্ডারসহ বিভিন্ন অপকর্মে ব্যবহার করার ঘটনা হরহামেশাই ঘটেছিল। সেসময় বিদেশ থেকেও অনেক নায়িকাদেরকে নিয়ে আসা হয়েছিল। হাওয়া ভবনের তত্ত্বাবধানে গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বাগানবাড়ি ‘খোয়াব ভবনে’ বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। সেখানে রাতভর চলতো উদ্দাম নাচ, মদের উৎসব।
বিএনপি জামাতের আমলে অনেক পাপিয়াই ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এদের মধ্যে রয়েছেন;
অদিতি সেনগুপ্ত
যিনি গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের ‘গার্লফেন্ড’ ছিলেন। সেসময় তিনি অন্যতম ‘মক্ষীরানী’ ছিলেন বলে একাধিক গোয়েন্দা অনুসন্ধানে পাওয়া যায়। অদিতি সেনগুপ্ত চ্যানেল ওয়ানের কর্মকর্তা ছিলেন। পরবর্তীতে গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তিনি পরবর্তীতে সরকারের বিভিন্ন মহলে প্রভাব বিস্তার করতেন। তার কাছে অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদরা আসতো, বিশেষ করে খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক জিয়ার সঙ্গেও তাঁর অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। এছাড়া অদিতি সেন গুপ্তর কাছে অনেকে ধর্ণা দিতেন বিভিন্ন কাজ, টেন্ডার, পদোন্নতি পাবার জন্য। আলোচিত এই অদিতি সেন গুপ্ত পরবর্তীতে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে বিয়ে করেছিলেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।
বেবি নাজনীন
আলোচিত গায়িকা বেবি নাজনীনও সেই সময়ের আলোচিত মক্ষীরানি ছিলেন। তিনিও পাপিয়ার মতো তৎকালীন শেরাটন হোটেল বুক করে দীর্ঘদিন ছিলেন। তাঁর সঙ্গেও বিভিন্ন মহলের দহরম-মহরম ছিল। এবং তাঁর কাছে অনেকে বিভিন্ন টেন্ডার, ব্যবসার জন্য তদবির করতেন বলে জানা গেছে।
চিত্রনায়িকা জনা
চিত্রনায়িকা জনাও বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে আলোচিত মক্ষীরানি ছিলেন। তাঁর বাসভবনেও বিএনপির অনেক প্রভাবশালীর মহলের যাতায়াত ছিল এবং তাদেরকে বাগিয়ে তিনি অনেক কাজ বাগাতেন বলে জানা গেছে।
এছাড়াও এই সময়ে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের হাওয়া ভবনকে ঘিরে অনেক অপকর্ম হতো বলে বিভিন্ন গোয়ান্দা সূত্রে জানা গেছে। সেই সময় ভারত থেকে অনেক নাম করা শিল্পীদের নিয়ে আসা হতো এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশে এয়ারপোর্ট থেকে ভিআইপি প্রোটোকলে সরাসরি গাজীপুরের হাওয়া ভবনে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে তারেক জিয়া এবং গিয়াস উদ্দিন আল মামুনরা নানারকম উৎসব এবং রাতভর অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পর আবারও বিদেশে ফেরত পাঠানো হতো।
দুটো ঘটনার পার্থক্য হলো, সেই সময় এরা ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন তাদেরকে ধরা তো দূরে থাক, ভয়ে তাদের দিকে তাকাতেও পারতো না। আর সাম্প্রতিক সময়ে যখন যারা এসব অপকর্মে জড়াচ্ছে, যখনই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নজরে আসছে, তখনই নির্মোহভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। আর এইসব ব্যাপারে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার উপর কোন রাজনৈতিক চাপ নেই। এবং এটাই হলো সবথেকে বড় পার্থক্য। ফলে এখন এসমস্ত ঘটনা বিক্ষিপ্তভাবে হলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইন বা রাষ্ট্র কার্পন্য করছে না।
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।