নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৯ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের পর সচেতন নাগরিকদের দৃষ্টি এখন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দিকে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গতকাল ছিলো মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। আগামী পয়লা মার্চ মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই হবে। ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
একাধিক প্রার্থী থাকলেও এই নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। এই প্রার্থীতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দুই দল বিপরীতমুখী অবস্থান গ্রহণ করেছিল। আওয়ামী লীগ বর্তমান মেয়র আজম নাছির এবং দলের অনেক সম্ভব্য প্রার্থী যারা প্রায় নিশ্চিত ছিলেন যে, নির্বাচনে তারা মনোনয়ন পাবেন। তাদেরকে বাদ দিয়ে রেজাউল করিমকে মনোনয়ন দিয়ে মোটামুটি একটা চমক দেখিয়েছেন। যে রেজাউল করিম কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম ৮ আসনে মনোনয়ন চেয়েও মনোনয়ন পাননি। আওয়ামী লীগের এই চমক দলের মধ্যে কি প্রভাব ফেলবে এবং বিভক্ত কোন্দলে জর্জরিত আওয়ামী লীগকে নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে কি কি সমস্যার সৃষ্টি করবে তা নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলছে। অন্যদিকে ধুকতে থাকা বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তি, দলের আন্দোলন সংগ্রামের ব্যর্থতাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দলটি মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে কোন রকম পরীক্ষা নীরিক্ষা করেননি। বরং চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ড. শাহাদাতকেই তারা মনোনয়ন দিয়েছেন। এই মনোনয়ন দেওয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপির যারা মাঠের কর্মী, মাঠের রাজনীতি করে এবং দলের জন্য দীর্ঘদিন ত্যাগ এবং সংগ্রাম করেছে তাদেরকে মূল্যায়ন করেছে।
ঢাকায় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপি যেমন দুজন নবিশ এবং আনকোড়া ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়েছিল, যাদের দলের সঙ্গে তেমন কোন সম্পর্ক ছিল না, যারা কেবল পৈত্রিক পরিচয়ে পরিচিত তেমন মনোনয়ন দেওয়ার মত ভুল বিএনপি করেনি। বরং ড. শাহাদাতের চট্টগ্রামে বিএনপি ছাড়াও আলাদা নিজের একটি ইমেজ রয়েছে দীর্ঘদিন রাজনীতি করছেন বলে। রাজনীতিতে তিনি দীর্ঘদিন ধরে একটি স্বচ্ছ ইমেজ তৈরী করে রেখেছিলেন। ড. শাহাদাতই মূলত গত ৫/৭ বছর ধরে চট্টগ্রামে বিএনপির মূল কর্ণধর। যারা বিএনপির চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় নেতা যেমন আমির খসরু মাহমদু চৌধুরী, আব্দুল্লাহ আল নোমান তারা জাতীয় রাজনীতিতে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় ড. শাহাদাতই চট্টগ্রামে বিএনপির হাল ধরে আছেন।
একারণেই এবারের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। শেষ পর্যন্ত কি বাজিমাত করতে পারবেন ড. শাহাদাত?
ড. শাহাদাত আর রেজাউলের মধ্যে পার্থক্য করতে গেলে দেখা যায় যে, দুজনই মাঠ থেকে উঠে আসা রাজনীতিবিদ এবং দুজনই পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করেই শেষ পর্যন্ত তাঁরা মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে দুজনের মধ্যে মূল পার্থক্যটি হচ্ছে, ড. শাহাদাত ঐক্যবদ্ধ একটি রাজনৈতিক শক্তি পাবেন নির্বাচনের প্রচারণায় এবং এই নির্বাচনে তাঁর হারাবার কিছু নেই, সাথে এই নির্বাচনে তিনি সরাসরিভাবে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করতে পারবেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউলের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বিগত মেয়রের বিভিন্ন রকমের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, চট্টগ্রামের জলযট থেকে শুরু করে নানা রকমের সমস্যা এবং সর্বোপরি বিভক্ত আওয়ামী লীগ। আর এই বিভক্তি যদি রেজাউল শেষ পর্যন্ত কাটিয়ে উঠতে না পারেন তাহলে তাঁর জন্য এই নির্বাচন কঠিন হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে, চট্টগ্রামের ওয়ার্ড কাউন্সিলরে মনোনয়নের ক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন এবং এবার আওয়ামী লীগে তাই বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। এই বিদ্রোহীরা শেষ পর্যন্ত মেয়র নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও ভোটারদের উপস্থিতি চট্টগ্রামের নির্বাচনে একটি বড় ফ্যাক্টর হবে। শেষ পর্যন্ত যদি ভোটারদের যে অনীহা সৃষ্টি হয়েছে, সেই অনীহা যদি বজায় থাকে তাহলে এই নির্বাচনের ফলাফলও ঢাকার মতো হবে। কারণ নূন্যতম ভোটার টার্ন আউটের নির্বাচনের ফলাফল ক্ষমতাসীন দলের পক্ষেই যাবে। তাই ড. শাহাদাত নির্বাচনের ফলাফলে কোন চমক সৃষ্টি করতে চাইলে তাঁর প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে ভোটারদেরকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসা। এবং চট্টগ্রামে বিএনপি সেই হিসেব কষেই এগোতে চাইছে।
তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে যতই বিরোধ থাকুক না কেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাঁর পেছনেই কাজ করবে। চট্টগ্রামের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোনরকম নেতিবাচক ফলাফল চট্টগ্রামের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। একারণে নির্বাচনের শুরুতে যতই মনে করা হোক না কেন আওয়ামী লীগ পিছিয়ে, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের দৌড়ে রেজাউলই এগিয়ে থাকবেন। তবে ঢাকার থেকে যে চট্টগ্রামের নির্বাচন জমজমাট হবে সেই বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কোন সন্দেহ নেই।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সভাপতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বেগম জিয়া আর ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন না, রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন এ রকম একটি বক্তব্য সামনে নিয়ে আসছেন শামীম ইস্কান্দার।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠিত করা এবং বিভেদ-বিভক্তির দূর করার জন্য যে ডাক দেওয়া হয়েছিল তারপর একটু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল বলে বটে। কিন্তু এখন আবার উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে তৃণমূল বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সামাল দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে নির্বাচন কেন্দ্রীক বিরোধ অন্যদিকে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাওয়া আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তদারকির অভাবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই।