নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ০৪ এপ্রিল, ২০২০
যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করেন, রাজনীতির খোঁজখবর রাখেন তারা জানেন যে শেখ হাসিনা খারাপ সময়ে কাউকে ছুড়ে ফেলে দেন না। ব্যর্থ হলেই তার মন্ত্রিসভা থেকে একজন কেউ বাদ পড়েন না। ২০০৯ এ প্রথম মন্ত্রিসভা গঠনের পর ঐ মন্ত্রিসভায় অনেকে ব্যর্থ, অযোগ্য ছিলেন। কিন্তু তাদেরকে তিনি তার পুরো মেয়াদেই রেখেছিলেন এবং দ্বিতীয় মেয়াদে এসে তাদের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদে এসেও তিনি যাদেরকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়েছিলেন, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল, এমনকি দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগও ছিল। তাদেরকেও তিনি পুরো মেয়াদে বাদ দেননি। বরং যখন মেয়াদ শেষ হয়েছে তখন তিনি নতুন করে মন্ত্রিসভা গঠন করে তারপর বাদ দিয়েছেন।
এই সময়ের মধ্যে মাত্র তিনজন মন্ত্রীকে বড় ধরনের ধাক্কা খেতে হয়েছে। তাদের মধ্যে ছিলেন প্রথম মেয়াদের সেতুমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। সেখানে অবশ্য বিশ্বব্যাংকের একটি চাপ ছিল। ঐ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে পদ্মাসেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল বিশ্বব্যাংক। সেসময় একটি সমঝোতার প্রক্রিয়া হিসেবে আবুল হোসেনকে মন্ত্রিসভা থেকে সরে যেতে হয়েছিল।
দ্বিতীয় মেয়াদে শেখ হাসিনা বাদ দিয়েছিলেন লতিফ সিদ্দিকীকে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া সংক্রান্ত একটি খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করার জন্য তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। ঐ মেয়াদেই শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এবং তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে প্রথমে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী এবং পরে তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রী করেছিলেন। অবশ্য এটা করার মূল উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে কাজের গতি আনা।
এছাড়া মন্ত্রিসভায় ছোটখাট রদবদল হয়েছে, মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন হয়েছে। তবে ব্যাপক দৃশ্যমান এবং দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। যেমন প্রথম মেয়াদে শেখ হাসিনা ফারুক খানকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রথমে। পরে ফারুক খানকে সরিয়ে জি এম কাদেরকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আবার তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা আবুল কালাম আজাদকে সরিয়ে হাসানুল হক ইনুকে তথ্যমন্ত্রী করেছিলেন।
এগুলোকে বলা যায় মাইনর সার্জারি। খুব বড় ধরনের কাউকে ব্যর্থতার কারণে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া, গলাধাক্কা দেওয়া শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নেই। এখন যারা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের অনেকেরই এই মন্ত্রিসভায় শেষ সুযোগ। কারণ একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, যদি কোনো মন্ত্রী দায়িত্ব পালনে সক্ষম হন, ভালো কাজ করেন, তাহলে তাকে পরের মেয়াদেও রাখা হয়। যদি অন্য কোনো হিসাব নিকাশ না থাকে। আবার যদি নিতান্তই তিনি ব্যর্থ হন তো তাকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
আবার, ২০০৯ এর মন্ত্রিসভা থেকে ডা. দীপু মনি, হাছান মাহমুদ ভালো দায়িত্ব পালন করলেও দ্বিতীয় মেয়াদে তারা মন্ত্রীত্ব পাননি। কিন্তু তৃতীয় মেয়াদে তাদেরকে আবার মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। কাজেই রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে কোনো ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিলে সেই দায়িত্বটি সফলভাবে পালনের যোগ্যতা থাকতে হয়। শেখ হাসিনার এবার বেশ কয়েকজনকে তাদের প্রাপ্যের চেয়েও বেশি সুযোগ দিয়েছেন বলে সমালোচকরা মনে করেন। এখন তাদের জন্য এই মেয়াদটি একটি পরীক্ষার সুযোগ। সম্ভবত করোনা সংক্রমণের মাধ্যমেই এটা তাদের শেষ সুযোগ হতে চলেছে। এরকম শেষ সুযোগের পরীক্ষা যারা দিচ্ছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন-
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে আসাটা ছিল অভাবনীয়। এর আগে তিনি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অনেকেই মনে করেছিলেন যেহেতু স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তার অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি মন্ত্রণালয়ের পূর্ণদায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারবেন। কিন্তু প্রথম দফায় গতবছরের ডেঙ্গু বিপর্যয় এবং এই বছর করোনা মোকাবেলায় তিনি এখনো স্বপ্রতিভ এবং জনআস্থার মন্ত্রী হিসেবে নিজেকে উদ্ভাসিত করতে পারেননি। যদিও তার কর্তব্যনিষ্ঠা এবং দায়িত্বপালনের আগ্রহ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তারপরেও তিনি এখন পর্যন্ত জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেননি।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি
টিপু মুনশি দীর্ঘদিন রাজনীতি করার পর এবার মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ পেঁয়াজের দাম নিয়ে যে তুঘলকি ঘটনা, এরপর করোনা মোকাবেলায় বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা তিনি সঠিকভাবে পালন করতে পারেন কিনা সেটার ওপর তার ভবিষ্যত অনেকখানি নির্ভর করছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল
বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের রীতি ভেঙে শেখ হাসিনা সিলেটের বাইরে অর্থমন্ত্রী করেছিলেন আ হ ম মুস্তফা কামালকে। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি একের পর এক সুযোগ নষ্ট করেছেন বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ আদায় নিয়ে তার অবস্থান পরস্পরবিরোধী। এছাড়াও ব্যাংক ব্যবস্থাপনাও নেতিবাচক অবস্থায় চলে গেছে। এখন করোনা পরিস্থিতিতে যে অর্থনৈতিক মন্দা, সেই মন্দা মোকাবেলায় তিনি কি ভূমিকা পালন করেন, সেটা দেখার বিষয়।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার
সাধন চন্দ্র মজুমদার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন বিতর্কিত কথাবার্তায় তিনি আলোচিত। এবার করোনা পরিস্থিতিতে যে খাদ্য ব্যবস্থাপনা এবং সম্ভাব্য খাদ্য পরিস্থিতি মোকাবেলার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা শুধু আওয়ামী লীগের ভেতরেই নয়, বাইরেও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আব্দুল মোমেনের দায়িত্ব পাওয়াটা ছিল একটা বিস্ময়কর ব্যাপার। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এখনো নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতিতে যখন বিদেশীরা একের পর এক দেশত্যাগ করছে, বিদেশ থেকে বাংলাদেশিদের আনার ক্ষেত্রেও তার বিচক্ষণতা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। এছাড়াও গণমাধ্যমের সামনে লাগামহীন কথাবার্তার কারণে তিনি আলোচিত-সমালোচিত। তার জন্যেও এই মেয়াদটি শেষ সুযোগ।
এই সমস্ত আলোচিত মন্ত্রীরা কি পারবেন তাদের শেষ সুযোগটা কাজে লাগাতে? এই সংকটে নিজেদের যোগ্যতাকে প্রমাণ করতে? নাকি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবেন তারা আগামীদিনে পরিত্যাক্ত হওয়ার জন্য?
মন্তব্য করুন
বিএনপি জনপ্রিয় নেতা কর্নেল অলি আহমদ মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ আগাম কাউন্সিল দলীয় কোন্দল
মন্তব্য করুন
এমভি আবদুল্লাহ কবির গ্রুপ সোমালিয়া উপকূল
মন্তব্য করুন
ভারত বিরোধী বিএনপি রুহুল কবির রিজভী
মন্তব্য করুন
বিএনপি নেতারা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে যেসব কথা বলে তা শুনলে জিয়াউর
রহমানও কবরে শুয়ে লজ্জা পেয়ে যেতেন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর প্রেসক্লাবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
এ সময় তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান জীবদ্দশায় কখনো শুনেননি তিনি স্বাধীনতার ঘোষক।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, স্কুল ঘণ্টা যেমন দপ্তরি বাজায়, তেমনি জিয়াউর
রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে। আজকে বিএনপি নেতা আব্দুল মঈন
খান অনেক কথা বলেন। মঈন খানের বাবা আব্দুল মোমেন খান ৭৪ সালে খাদ্য সচিব ছিলেন। তিনি
ষড়যন্ত্র করে মার্কিন খাদ্যবাহী জাহাজ ফেরত পাঠিয়েছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান আব্দুল মোমেন খানকে মন্ত্রী
বানিয়েছিল। মঈন খান নিজেও সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিল, দরকার পড়লে দেশ বিক্রি করে দেব।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান
মাহমুদ বলেন, দেশ সমৃদ্ধির দিকে যখনই এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।
বিএনপি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বানানোর জন্য যেভাবে দাবি করে জিয়াও সেভাবে
কখনো দাবি করেনি। জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ছত্রছায়া পাকিস্তানিদের পক্ষে কাজ করেছে।
জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগের অধীনেই মুক্তিযুদ্ধের সময় বেতন ভুক্ত কর্মচারী ছিলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতাদের কথা হাস্যরসের সৃষ্টি করে। বিএনপির নেতা মঈন খানের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, যার বাবার জন্য এদেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছে তার মুখে এসব কথা মানায় না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে ইতিহাস বিকৃতি করে বিএনপি নেতারা বিশদকার বিষোদগার করছে কিন্তু এখন সঠিক ইতিহাস জনগনের সামনে আসার পর তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বিএনপির ইতিহাস বিকৃতির পাশাপাশি দেশের জনগণকেও বিভ্রান্তি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
বিএনপি ড. হাছান মাহমুদ আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হয়েছে। নতুন মন্ত্রিসভা গঠন হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কমেনি। কোন্দল ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সামনে উপজেলা নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সারা দেশে এখন আওয়ামী লীগ নানা ভাগ উপভাগে বিভক্ত। শুধুমাত্র সংঘাত হানাহানির উপলক্ষ খুঁজছে পরস্পরবিরোধী আওয়ামী লীগের শিবিরগুলো। এরকম বাস্তবতার দলের সঙ্কট নিরসনে এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল দূর করার জন্য আওয়ামী লীগ আগাম কাউন্সিল অধিবেশনে যেতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্র ইঙ্গিত দিচ্ছে।