নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২২ মে, ২০২০
রাজনীতি একটি নিরন্তর প্রয়াস। একজন রাজনীতিবিদ নিজেকে তিল তিল করে গড়ে তোলেন। স্থানীয় পর্যায় থেকে, ছোট্ট পরিসর থেকে নিজেকে জাতীয় মঞ্চে উদ্ভাসিত করেন। একজন ক্ষুদ্র স্থানীয় নেতা বা অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কর্মী থেকে নিজের যোগ্যতা, গুণ এবং ধারাবাহিকতা দিয়ে একজন জাতীয় রাজনীতিতে স্থান করে নেন। জাতীয় রাজনীতির একজন তারকায় পরিণত হন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই রকম কিছু উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় তারকা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সম্ভাবনা জাগিয়েও তারা রাজনীতিতে টিকতে পারেনি। নানারকম দৈব দুর্বিপাকে সেই সম্ভাবনাগুলোর মৃত্যু ঘটেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের বিভ্রান্তি, পথভ্রষ্টটা এবং অস্থিরতাই তাদেরকে রাজনীতিতে টিকে থাকতে দেয়নি। রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেদেরকে ব্যর্থ করেছে, অথচ তাদের যোগ্যতা ছিল। কিছু বাস্তবতার কারণে এবং নিজেদের কারণে তারা সেই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারেনি। এরকম কয়েকজন রাজনীতিবিদকে আমরা এখন দেখে নেই।
সোহেল তাজ
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেন, সেখানে শহিদ তাজউদ্দীন আহমেদের সন্তান সোহেল তাজকে স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই সময় তাকে দায়িত্ব প্রদান করাটাকে প্রত্যেক মানুষ ইতিবাচকভাবে নিয়েছিল। সোহেল তাজ কেবল বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও রাজনীতিতে সম্ভবত সবচেয়ে মেধাবী মানুষ তাজউদ্দীন আহমেদের পুত্র হিসেবেই নয়, বরং সোহেল তাজ নিজেও একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিলেন। তার কথাবার্তা, তার ইতিবাচক পদক্ষেপ মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল। কিন্তু তার কি যেন কি হল! হঠাৎ করে তিনি পদত্যাগ করলেন। দেশের বাইরে চলে গেলেন। তার এই পদত্যাগ নিয়ে নানা রকম গুঞ্জন রয়েছে। অনেকে মনে করেন একটা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। আবার অনেকে মনে করেন তাকে পারিবারিক চাপের কারণে আমেরিকায় চলে যেতে হয়েছিল। যেটিই হোক না কেন, এরপর সোহেল তাজের অস্থিরতা, অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা, তার রাজনীতির শেষ সম্ভাবনাটুকুও আর রাখতে দেয়নি। একটি সম্ভাবনার মৃত্যু হয়েছে।
আমানুল্লাহ আমান
আমানুল্লাহ আমান ডাকসুর ভিপি ছিলেন এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব স্থানীয় নেতা ছিলেন। এরপর তার রাজনীতিতে উত্থানটা ছিল একটি সহজ অঙ্ক। সেটি ছিল জোয়ারে শুধুমাত্র গা ঠিকঠাক মতো ভাসিয়ে দিতে পারলেই হল। রাজনীতিতে তার জাতীয় নেতা হিসেবে আবির্ভাব ছিল শুধু কিছুটা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। কিন্তু আমানুল্লাহ আমান সেটি করতে পারেননি। এর কারণ হল তার অর্থলিপ্সা, দুর্নীতি, অনিয়ম এবং ভ্রান্ত নীতি। আমানুল্লাহ আমান ২০০১ সালে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনি নিজেকে উজ্জ্বল করে মেলে ধরতে পারেননি। এরপর রাজনীতিতে তাকে আর তেমন সক্রিয় দেখা যায় না। বরং শুধুমাত্র গতানুগতিক রাজনীতির ধারায় তিনি নিজেকে বন্দী করে রেখেছেন।
মাহি বি চৌধুরী
মাহি বি চৌধুরী ২০০১ সালে সবচেয়ে আলোচিত রাজনীতিবিদদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। সে সময় মনে করা হতো মাহি হতে যাচ্ছেন বিএনপির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা। কিন্তু পিতার সঙ্গে তিনিও বিএনপি ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে তারা বিকল্পধারা নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এটি একটি কুটিরশিল্প ধরনের রাজনৈতিক দল। জাতীয় রাজনীতিতে অবদানহীন এই সাইনবোর্ড সর্বস্ব রাজনৈতিক দলটির মূল উদ্দেশ্য কী, পরে তা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে যায়। সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করে নানারকম ব্যবসাবাণিজ্য হাসিল করাই এই রাজনৈতিক দলের মূল উদ্দেশ্য। মাহি বি চৌধুরী রাজনীতিতে আছেন কি নেই, সেটিই এক বড় প্রশ্ন? তবে রাজনীতিবিদ হিসেবে তার প্রচুর সম্ভাবনা ছিল। তিনি নিজেও মেধাবী। কিন্তু রাজনীতিবিদ হিসেবে তার সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটেছে।
গোলাম মাওলা রনি
গোলাম মাওলা রনি রাজনীতিতে ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো। ২০০৮ এর নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। নির্বাচিত হওয়ার পরে তিনি বিভিন্ন টকশো ও লেখালেখির মাধ্যমে জনপ্রিয়তাও পেয়েছিলেন। কিন্তু এই জনপ্রিয়তাই তার কাল হয়ে দাঁড়ায়। হয়তো জনপ্রিয়তার ভার তিনি বহন করতে পারেননি। এরপর তিনি নিজেই বিভ্রান্তিতে জড়ান। নানারকম বিভ্রান্তি শেষে তিনি কখনো তিনি জামাতের প্রতি আকৃষ্ট হন। এখন তিনি বিএনপির রাজনীতিতে নিজেকে সপে দিয়েছেন। সম্ভাবনা জাগিয়েও তিনি নিজের অযোগ্যতা এবং অস্থিরতার কারণে পথভ্রষ্ট হয়ে রাজনীতিতে তার সম্ভাবনার মৃত্যুটা নিজেই ঘটান।
এ রকম বাংলাদেশে আরও অনেক রাজনীতিবিদ আছেন, যারা মেধাবী, যারা সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সম্ভাবনা জাগিয়েও তারা টিকে থাকতে পারেননি। এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী তারা নিজেরাই।
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।