নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ০২ জুলাই, ২০২০
করোনা মোকাবেলায় সফল দেশগুলোর মধ্যে একটি নিউজিল্যান্ড। করোনা সংক্রমণ তাঁরা রোধ করেছে, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। এর মধ্যেই আবার নতুন করে খবর হলো, সেদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডেভিড ক্লার্ক পদত্যাগ করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে অনেক আগেই। যখন করোনা সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল তখন সেখানে লকডাউন দেওয়া হয়েছিল। তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী লকডাউন ভেঙে তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এটা নিয়ে নিউজিল্যান্ডে তীব্র সমালচনা হয় এবং নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন তখন বলেছিলেন যে, যদি এটা সঙ্কটকাল না হতো তাহলে তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হতো। তখন তাঁকে পদোবনতি দেওয়া হয় এবং করোনা সঙ্কটের পর আজ ডেভিড ক্লার্ক পদত্যাগ করেছেন এবং বলেছেন যে, একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে যা কিছু ঘটেছে তাঁর সবকিছুর দায়দায়িত্ব তাঁর।
এই ঘটনাটি একটি দৃষ্টান্ত। এরকম বহু দৃষ্টান্ত বিশ্ব রাজনীতিতে প্রায় হরহামেশাই দেখা যায়। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে বা কোন রকমের অক্ষমতা থাকলে তিনি সরে দাঁড়ান। কিন্তু বাংলাদেশে একজন মন্ত্রী দায়িত্ব পেলে তিনি কিছুতেই সরতে চাননা, এমনকি রদবদল করে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হলে তিনি মন খারাপ করেন এবং রাজনীতিকে অনেক সময় চিরবিদায় জানিয়ে দেন। কখনো কখনো মন্ত্রিত্ব হারিয়ে সরকারের তীব্র সমালোচকও হয়ে ওঠেন।
বাংলাদেশে ৭৫ পরবর্তী রাজনীতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, অধিকাংশ মন্ত্রীকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন এমন নজির নেই বললেই চলে। একমাত্র ১৯৯১-৯৬ সালে বিএনপির আমলে জহির খান শিল্পমন্ত্রী হিসেবে সার কেলেঙ্কারির বোঝা কাঁধে নিয়ে নিজে পদত্যাগ করেছিলেন। অবশ্য নিজে পদত্যাগ করেছিলেন নাকি জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে তা নিয়ে এখনো যথেষ্ট বিতর্ক রয়ে গেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ব্যক্তিগত পাসপোর্ট নিয়ে সিঙ্গাপুরে গিয়ে ঝামেলায় পড়েন। এর প্রেক্ষিতে তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হয় এবং তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে মন্ত্রিসভায় যারাই পদত্যাগ করেছেন বা সরে গেছেন তাঁদেরকে সরে যেতে বলা হয়েছে বলে তাঁরা সরে গেছেন।
একজন মন্ত্রী যখন দায়িত্ব পালনে অপারগ হন, ব্যর্থ হন, অযোগ্যতার প্রমাণ দেন তখন তিনি নিজে থেকে কেন সরে যাননা? এই প্রশ্নটি রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বড় গবেষণার বিষয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে এর পেছনে কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে।
প্রথম কারণ হচ্ছে, মন্ত্রিত্বে অনেক সুবিধা আছে। বাংলাদেশে মন্ত্রিত্ব মানেই অনেক সুযোগসুবিধা। বৈধ-অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে একটি লোভনীয় পদ হয়ে যায় মন্ত্রিত্ব। এই কারণে কেউ একবার মন্ত্রিত্ব পেলে আর ছাড়তে চাননা।
দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, মন্ত্রী হলে এলাকায় কদর বাড়ে। ভোট বা অন্যান্য প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে মন্ত্রিত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য মন্ত্রিত্ব পেলে কেউ আর তা ছাড়তে চান না। মন্ত্রিত্ব পেয়ে অনেকে ফুলেফেঁপে ওঠে, মন্ত্রিত্ব অনেকের রত্নভাণ্ডার উন্মোচিত করে দেয়। ধনসম্পদে তাঁরা ফুলেফেঁপে ওঠে আর তাই এসব পদ তাঁরা ছাড়তে চাননা। বাস্তবতায় বাংলাদেশের মন্ত্রিত্ব একটি লোভনীয় জিনিস এবং কেউ মন্ত্রিত্ব পেলে শত চেষ্টা, তদবির করে হলেও তা রাখতে চান। মন্ত্রিত্ব ছাড়া আর নরকে নিক্ষিপ্ত হওয়া যেন একই বিষয়।
মন্ত্রিত্ব এতটাই লোভনীয় যে, তাঁদেরকে যদি জনগণ ব্যর্থ বলে, অযোগ্য বলে এবং সত্যি সত্যি তাঁরা যদি দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন তারপরেও তাঁরা মন্ত্রিত্ব ছাড়তে চাননা। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যদি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথা ধরি, তিনি নিজেই বলছেন যে করোনা নিয়ে কি হচ্ছে আমার ধারণা নেই, গার্মেন্টস খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আমাকে অবহিত করা হয়নি- তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে তিনি মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন না কেন? তিনি তো নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডেভিড ক্লার্কের মতো পদত্যাগ করতে পারতেন। এরকম অজস্র মন্ত্রী আছেন যারা সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন, কিন্তু কিছুতেই চেয়ার ছাড়ছেন না। কাজেই অনেকে মনে করেন যে, যদি প্রশাসনে দূর্নীতি বন্ধ করা যায় এবং যদি মন্ত্রীদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায় তাহলে মন্ত্রিত্বের প্রতি আগ্রহ কমবে। বিশেষ করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে সংসদীয় কমিটিকে যদি জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায় এবং নির্বাহী বিভাগকে যদি সবসময় একটা স্বচ্ছতার মধ্যে আনা যায় তাহলে মন্ত্রিত্ব আঁকড়ে রাখার লোভ কমে যাবে, বরং মন্ত্রী হয়ে দেশের জন্য কিছু করার প্রবণতা বাড়বে।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়া বিএনপি ব্রিটিশ দূতাবাস সারা কুক
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া
হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত
নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান
প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে
আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক
স্থগিত হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন,
‘স্বজন’ প্রশ্নে দলের সিদ্ধান্ত না মানলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও দলীয় এমপির বিরুদ্ধে
সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কেড়ে নেওয়া হতে পারে তাদের দলীয় পদ-পদবি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের মনোনয়নও অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। সব মিলিয়ে
এ ইস্যুতে দলীয়ভাবে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে স্বজনকে
প্রার্থী করা নিয়ে দলের মন্ত্রী ও এমপিদের এরই মধ্যে কড়া ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক
অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো নিকটাত্মীয়
অংশ নিতে পারবেন না। এ বিষয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয়
নির্দেশনা দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে
আনার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদেরও তাগিদ দেন।
এরপর সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠক থেকেই নিকটাত্মীয়দের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ও শাজাহান
খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ টাঙ্গাইলের
ধনবাড়ীতে এবং শাজাহান খান এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান মাদারীপুর সদর উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন।
এ ছাড়া নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরীর সঙ্গেও কথা বলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার
ইশরাক সাবাব চৌধুরী সুবর্ণচরে প্রার্থী হয়েছেন।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরী বলেন, উপজেলা নির্বাচন থেকে তার ছেলেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দলের সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কথা বলেছেন। তিনি তাকে ঢাকায় ডেকেছেন।
তবে তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
নৌকা প্রতীক পাওয়ার পরও প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করেছিলেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের
সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম। এ বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হলেও তিনি সুবিচার
পাননি। এ জন্যই তার ছেলে প্রার্থী হয়েছেন।
গতকাল দলের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে চার
বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, এস এম কামাল হোসেন এমপি,
মির্জা আজম এমপি, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এবং দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া
উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকজন মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে প্রার্থী
করানোর বিষয় নিয়ে অল্পবিস্তর আলোচনা হয়। সেই সঙ্গে দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে নিকটাত্মীয়দের
প্রার্থী করানোর বিষয় নিয়ে নেতারা বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিভিন্ন উপজেলায় সাংগঠনিকভাবে
অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেন নেতারা।
বৈঠকে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রংপুর,
চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের তৃণমূল নেতাদের বৈঠকে সাংগঠনিক বিরোধ নিষ্পত্তির তাগিদ দেওয়া
হলেও কার্যত তা হয়নি। উল্টো উপজেলা নির্বাচন নিয়ে গৃহদাহ পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়েছে।
তৃণমূল নেতাকর্মী দ্বন্দ্ব-বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। এ জন্য কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেন কেন্দ্রীয়
নেতারা। ওই সময়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের
পূর্বনির্ধারিত সাংগঠনিক বৈঠক স্থগিত করার তথ্য জানান। সিলেট ও বরিশাল বিভাগের বৈঠকের
দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ হয়নি।
দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব
বড়ুয়া জানিয়েছেন, ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয়
কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হওয়ার কথা। এ জন্য ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক
স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার রাজশাহী এবং ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক হওয়ার
কথা ছিল। ঢাকা বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল দুই দিনে। প্রথম দিন ২৭ এপ্রিল এবং শেষ দিন
৪ মে।
এদিকে গতকালের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ
নেওয়া তিন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন থেকে
আত্মীয়স্বজনকে সরিয়ে নিতে মন্ত্রী ও দলের এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর
নির্দেশের কথা তাদের জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। এর পর থেকে তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী
ও এমপির সঙ্গে কথা বলছেন। যেসব উপজেলায় মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে
দেওয়া হবে।
আগামী ৮ মে অনুষ্ঠেয় প্রথম পর্বের ১৫০
উপজেলা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মন্ত্রী ও দলীয় এমপির আত্মীয়স্বজন চেয়ারম্যান পদে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে নতুন করে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে।
নাটোরের সিংড়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে
প্রথমে মারধর ও পরে অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় সন্দেহ করা হচ্ছে ডাক, টেলিযোগাযোগ
ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল
হাবীব রুবেলকে।
এদিকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা
জানিয়েছেন, এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনায় খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের
নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, আগামী ২ মে সংসদের অধিবেশন
শুরু হবে। ওই অধিবেশন চলাকালে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক থেকে উপজেলা নির্বাচন
নিয়ে এমপিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, নির্বাচনী এলাকায় প্রভাব
বাড়াতে কয়েকজন মন্ত্রী ও দলের এমপি নিকটাত্মীয় ছাড়াও নিজস্ব লোক তৈরির জন্য পছন্দের
প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। তাই শুধু সন্তান, পরিবার কিংবা আত্মীয়স্বজন
নয়; মন্ত্রী এবং দলের এমপিদের প্রকাশ্যে বা গোপনে উপজেলা নির্বাচনে সম্পৃক্ত না হওয়ার
কড়া নির্দেশনা দেওয়া হবে।
তবে দলীয়ভাবে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও
মন্ত্রী ও দলীয় এমপির অনেকে তা মানবেন না বলে আভাস মিলেছে। এরই মধ্যে অনেক উপজেলায়
মন্ত্রী ও দলের এমপির নিকটাত্মীয়রা প্রার্থী হয়েছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে লড়ছেন
মাজহারুল ইসলাম সুজন এমপির দুই চাচা মোহাম্মদ আলী ও সফিকুল ইসলাম
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন সাহাদারা মান্নান এমপির ছেলে শাখাওয়াত হোসেন সজল। একই জেলায় সোনাতলায় এমপির ভাই
মিনহাদুজ্জামান লিটন
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় নির্বাচন করছেন
আলী আজগার টগর এমপির ভাই আলী মুনসুর
নরসিংদীর পলাশে লড়ছেন ডা. আনোয়ারুল
আশরাফ খান দিলীপ এমপির শ্যালক শরীফুল হক
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রার্থী হয়েছেন
শাহাব উদ্দিন এমপির ভাগনে সোয়েব আহমদ
নোয়াখালীর হাতিয়ায় লড়ছেন মোহাম্মদ আলী
এমপির স্ত্রী ও দুইবারের সাবেক এমপি আয়েশা ফেরদাউস ও ছেলে আশিক আলী।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ড. আব্দুর রাজ্জাক
এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ
মাদারীপুর সদর উপজেলায় শাজাহান খান
এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান প্রার্থী হয়েছেন
এ ছাড়া ধাপে ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে অনেক মন্ত্রী-এমপির নিকটাত্মীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল ঢাকাস্থ ব্রিটিশ দূতাবাসে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল ব্রিটিশ দূতাবাসে। সেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক এক ঘণ্টার বেশি সময় তাদের সাথে বৈঠক করেন। এসময় ব্রিটিশ দূতাবাসে অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক স্থগিত হয়ে গেছে।