নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ০৩ জুলাই, ২০২০
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে টানা সাড়ে ১১ বছর। এই টানা সাড়ে ১১ বছরের মধ্যে বিগত চার মাস আওয়ামী লীগ সরকার সবথেকে বড় সঙ্কটের মধ্যে আছে। জনগণের মধ্যে এক ধরণের অস্বস্তি এবং উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা অজানা আতঙ্ক এবং আশঙ্কা ভর করছে। অনেকের মধ্যেই হতাশা ভর করেছে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মনে করছেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ্য নেতৃত্বে করোনা মোকাবেলার চেষ্টা করছেন এবং করোনা মোকাবেলায় তিনি যেভাবে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা এবং কর্মপন্থা দিয়েছেন তা অন্য কোন রাষ্ট্রের সরকারপ্রধানরা দেননি। বিশেষ করে করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে তিনি যেমন একদিকে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন, প্রত্যেকটি বিষয়ের তিনি নির্দেশনা দিচ্ছেন, অন্যদিকে তিনি অর্থনীতিকে সচল রাখারও প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের ব্যর্থতার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে উদ্যোগ, কর্মপরিকল্পনা এবং যে পরিশ্রম, তা বাস্তবায়ন হচ্ছেনা অনেক ক্ষেত্রেই। জনগণের কাছেও সরকারের ব্যাপারে অনাস্থা তৈরি হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলছেন যে, হাতেগোনা ৪-৫ জন লোকের কারণে সরকারকে সমালোচিত হতে হচ্ছে, এই ব্যর্থতার দায় কেন আওয়ামী লীগ নিচ্ছে এটাই এখন জনমনে সবথেকে বড় প্রশ্ন। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, করোনা পরিস্থিতিকে যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখা যাবে যে করোনা সঙ্কটের গত ৪ মাসে আওয়ামী লীগ সরকার অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষের দায়িত্বহীনতা, দূর্নীতি এবং অযোগ্যতার কারণে সরকারকে সমালোচনা মুখে পড়তে হচ্ছে। তিনি বলেন যে, এই ব্যর্থদের চিহ্নিত করে দরকার তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আর এক মুহুর্তও এই ব্যর্থরা যদি দায়িত্বে থাকে তাহলে সেটাই সরকারের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
করোনা মোকাবেলার শুরু থেকেই সবথেকে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শুধু ব্যর্থই নয়, একের পর এক লাগামহীন দূর্নীতির উৎসব করেছে। সেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বের যোগ্যতা এবং দায়িত্বহীনতা নিয়ে প্রকাশ্য সমালোচনা হচ্ছে আওয়ামী লীগের ভেতরে বাইরে। সেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক চুক্তিতে থাকা একজন কর্মকর্তা, যিনি করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে কোন দায়িত্বই সঠিকভাবে পালন করতে পারেননি। বরং ইচ্ছাকৃতভাবে সরকারকে বিব্রত করতে যা দরকার তাঁর সবকিছুই করছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। অথচ এখন পর্যন্ত বহাল তবিয়তে আছেন এই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। মাঝে মাঝে গুঞ্জন শোনা যায় যে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেন যে, ‘আমার খুঁটির জোর অনেক শক্ত, আমাকে কেউ সরাতে পারবে না’। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের খুঁটির জোর কোথায় সেটা যেমন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রশ্ন, তেমনি প্রশ্ন যে, এই রকম একটি অযোগ্য, ব্যর্থ মানুষের দায় কেন আওয়ামী লীগ নিচ্ছে?
স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নিয়ে জাতীয় সংসদে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেবল অযোগ্যতার পরিচয় দেননি, পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ হয়েছেন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীরা। অথচ স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বহাল তবিয়তে আছেন। প্রায়ই বক্তৃতা-বিবৃতিতে তিনি কি কি করেছেন তাঁর একটি ফিরিস্তি দেন। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন যে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী এখন পর্যন্ত কোন হাসপাতালে যাননি এবং তিনি নিয়মিত অফিস করেন না জানার পরেও তাঁকে রাখা হয়েছে বহাল তবিয়তে।
করোনা সঙ্কটের সময় বেশি আলোচনা হয়েছিল গার্মেন্টস খুলে দেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছিলেন যে, তাঁর দলের এমপি সালাম মুর্শেদী, বিজেএমইএ-এর সভাপতি রুবানা হক এই অপকর্মটির জন্যে দায়ী। অথচ এই সমস্ত অপকর্ম যারা করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মতো বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সীও পেঁয়াজ কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে নানারকম ব্যর্থতায় জর্জরিত সমালোচিত। অথচ তিনিও আছেন বহাল তবিয়তে। আমরা দেখলাম যে, ত্রাণ দেওয়ার যে মহৎ উদ্যোগ নেওয়া হলো, ঈদে প্রতিটি দুঃস্থ পরিবারের জন্যে আড়াই হাজার টাকা করে বরাদ্দ, সেটা নিয়েও ভয়াবহ কেলেঙ্কারি ঘটলো। অনেকে ভুয়া পরিচয় এবং নাম্বার ব্যবহার করলো, এটা নিয়ে গণমাধ্যমে সমালোচনা হলো অথচ তারপরেও এটা নিয়ে দূর্যোগ এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কারো বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হলোনা। বরং সেই মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন পদে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই ধরণের ব্যর্থ এবং অযোগ্যদের দায় কেন সরকার নিচ্ছে সেই প্রশ্ন উঠেছে জনগণের মধ্যে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মী করোনা সঙ্কটের সময় কোন দূর্নীতি করেনি, কোন অনিয়ম করেনি। পিপিই কিংবা মাস্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গেও জড়িত হননি। যারা জড়িত হয়েছে তাঁরা সবাই জামাত-বিএনপিপন্থি ব্যবসায়ী। তাঁদের দ্বারা কেন সরকার সমালোচিত হবে সেটা যেমন এক প্রশ্ন, তেমনি ব্যর্থদের ভার কতদিন প্রধানমন্ত্রী বহন করবেন সেই প্রশ্নও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।