নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৭ পিএম, ০৬ জুলাই, ২০২০
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে অভিনয়ে নামার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁর দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। নির্বাচন নিয়ে নাটক, সরকারের সমালোচনা আবার সেই সরকারের কাছ থেকে টাকা নিয়েই চিকিৎসা- এরকম দ্বৈত ভূমিকার কারণে বেগম খালেদা জিয়া মির্জা ফখরুলের ওপরে চরমভাবে অসন্তুষ্ট এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রাজনীতি ছেড়ে অভিনয়ে নামার পরামর্শ দিলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বেগম খালেদা জিয়া এই সমস্ত ‘নাটক-সিনেমা’ বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বেগম খালেদা জিয়া এখন মুক্ত এবং তিনি দলের চেয়ারপারসন। এরকম বাস্তবতায় দলের কোন নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত দলের চেয়ারপারসনের অনুমতি ছাড়া কিভাবে নেওয়া হয় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বেগম খালেদা জিয়া। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, ঘটনার সূত্রপাত হয় যশোর এবং বগুড়ার উপনির্বাচন নিয়ে। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রক্ষার জন্য এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। গত রাতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান যে, করোনা পরিস্থিতির কারণে তাঁরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়ার কোন মতামত বা পরামর্শ নেওয়া হয়নি।
বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, লন্ডন থেকে তারেক জিয়ার নির্দেশনায় এই স্টান্টবাজি করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া টেলিভিশনের মাধ্যমে এই খবর জানতে পারেন এবং জানার পরেই বেগম জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে টেলিফোনে জিজ্ঞেস করেন যে, কিভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন যে, করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবে না এবং এই ভোট অর্থহীন হবে। কাজেই বিএনপি মনে করছে যে, যেহেতু মানুষ করোনা নিয়ে উদ্বিগ্ন তাই এই নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করা ঠিক হবেনা। বেগম খালেদা জিয়া তাঁর কাছে জানতে চান যে এই ধরণের সিদ্ধান্ত দলের চেয়ারপারসনকে ছাড়া নেওয়া যায় কিনা, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁকে জানান যে, তারেক জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই কথা শুনে বেগম জিয়া বলেন যে, এই নির্বাচনে যদি মানুষ অংশগ্রহণ না করে তাহলে ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিল কেন? ৩০ ডিসেম্বরের পর যে উপনির্বাচনগুলোতে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছে সেই নির্বাচনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কত ছিল? ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেই বা বিএনপি তাহলে অংশগ্রহণ করলো কেন? এরকম প্রশ্নের উত্তরগুলো দিতে না পেরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবেগতাড়িত হয়ে পরেন এবং তিনি কান্নায় ভেঙে পরে বলেন যে, বিএনপিকে রক্ষার জন্যেই আমি সবকিছু করেছি। তখন বেগম জিয়া তাঁকে তিরষ্কার করেন এবং তাঁকে এই সমস্ত নাটক বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেন। তিনি বলেন যে, কে কি করেছে, কার কোনটা আসল, কোনটা নকল সব আমি জানি। সরকারের নির্দেশেই নির্বাচনে যাওয়া হয়, আবার সরকারের নির্দেশেই নির্বাচনে যাওয়া বন্ধ করা হয়।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, বেগম খালেদা জিয়া মনে করছেন যে, করোনার সময়ে এই নির্বাচন একটি ম্যান্ডেট হতে পারতো। সরকার যেভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করছে তাতে জনগণ সন্তুষ্ট না অসন্তুষ্ট সে ব্যাপারে একটি গণভোট হতে পারতো। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সরকারকে সুযোগ করে দেওয়া হলো। অথচ জনগণের প্রকৃত মনোভাব কি সেটা যাচাই করার সুযোগ দেওয়া হলোনা। আবার যখন সরকারকে বৈধতা দেওয়ার জন্য নির্বাচন দরকার সেই নির্বাচনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, ইতিমধ্যে ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ, চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছ থেকে আর্থিক অনুদান গ্রহণ এবং সরকারের সঙ্গে তাঁর বিভিন্ন লেনদেনের তথ্য বেগম জিয়ার কাছে এসেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, বেগম জিয়া এটাও জানতে পেরেছেন যে, তাঁকে মুক্ত না করার পেছনে যে ষড়যন্ত্র ছিল সেই ষড়যন্ত্রে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও জড়িত ছিলেন। আর এই কারণে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপর ক্ষুদ্ধ্ব বেগম জিয়া তাঁকে একজন রাজনীতিবিদ নয়, অভিনেতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অবশ্য তীব্র তিরস্কৃত হওয়ার পরেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিছু মনে করেননি। তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠদের বলেছেন যে, ‘ম্যাডামের মেজাজ খারাপ, এজন্যেই হয়তো আমাকে বকেছেন’।
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।