নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ০৯ জুলাই, ২০২০
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক মনে করেন যে, ‘রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মোহাম্মদ সাহেদকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িয়ে যে কথা হচ্ছে তা রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের জন্য খুবই দুঃখজনক এবং দুর্ভাগ্যজনক। এই সাহেদদেরকে যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে তাঁদের চিহ্নিত করা উচিত এবং অতি দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’ বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এমন মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র এই নেতা।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘সাহেদরা কিভাবে দলের ভিতর কোন দরজা দিয়ে ঢোকে? সেই দরজা অবশ্যই বন্ধ করে দিতে হবে। আজকেও আমরা পার্টি কার্যালয়ে কিছু নেতৃবৃন্দ বসেছিলাম। আমরা এ নিয়ে কথা বলেছি। এ নিয়ে আমাদের অবস্থান কঠোর। সফল রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন জীবন-জীবিকার সংগ্রামে, তখন এই সমস্ত ব্যক্তিদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা এবং নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার ছাড়া আর কোন লক্ষ্য নেই। তাই এদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এদের যারা আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ বছর আগে দলের অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদেরকে বের করতে হবে এমন নির্দেশনা দিলেও তা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। এটা আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বারবার নেত্রী এ কথা বলেছেন এটা সত্য। অনুপ্রবেশ বন্ধ করার জন্য দলকে বারবার তিনি দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তারপরও তার নির্দেশনা যেহেতু বাস্তবায়ন হয়নি বা প্রতিফলন হয়নি বা কার্যকর হয়নি, সেই দায় আমরা কোনভাবেই এড়াতে পারি না।’
গত ১১ বছরে হাইব্রিড বা যাদেরকে অনুপ্রবেশকারী বলা হয় তারাই বিভিন্ন দুর্নীতি করছে, যারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছে সেই তালিকাতেও অনুপ্রবেশকারীরা ত্রাণের টাকা চুরি করছে, সাহেদের মতো ঘটনা ঘটছে-এটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ বলে যেমন তিনি মনে করেন, ‘তেমনি দলের সিনিয়র এই নেতার ভাষ্য,‘ সবকিছুর ভিতরে আমি ষড়যন্ত্র দেখি না। এখানে আমাদের দুর্বলতা রয়েছে এ কথা অস্বীকার করলে চলবে না। হ্যা এটাও ঠিক পরিকল্পিতভাবে দলে ঢুকে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। কিন্তু এ ব্যাপারে যে সতর্কতা অবলম্বন করার কথা ছিলো মাননীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য। তার কার্যকর ভূমিকা পালনে আমরা অবশ্যই ব্যর্থ হয়েছি।’
জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতিটি সিড়ি দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে উঠেছেন। ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন, যুবলীগের নেতা ছিলেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। আওয়ামী লীগে প্রবেশের জন্য একজন মানুষের কি যোগ্যতা দেখা হয়, কেউ আসলেই তাকে নিয়ে নেওয়া হয়?- তিনি বলেন, ‘আমরা যারা পুরনো মানুষ আছি, বলতে কোন দ্বিধা নেই আমরা বুক চাপরাচ্ছি। এরা কিভাবে ঢুকে পরে এই ফটকটাই আমরা বুঝতে পারছি না। সে কারণে বারবার বলছি এই ফটকটাই বন্ধ করতে হবে। যে ফটক দিয়ে ঢোকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আওয়ামী লীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদের ছবি আছে। দীর্ঘদিন যাবত নিজেকে আওয়ামী লীগার হিসেবে পরিচয় দিয়ে টেলিভিশন টক শোতে উপস্থিত হলেও এতদিন কেন নজড়ে আসেনি - প্রতিবেদকের করা এমন প্রশ্নের উত্তরে নানক জানান, আওয়ামী লীগ একটি বিশাল সংগঠন। দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন। এই সংগঠনের কোথায় গিয়ে বা কোন অংশে সাহেদ আশ্রয় নিয়েছে বা প্রশ্রয় পেয়েছে, সে সম্পর্কে আমরা অবগত ছিলাম না। আমি এটা জেনে হতবাক হয়েছি যে, হাওয়া ভবনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার কারণে যে সাহেদ ২ বছর জেল খেটেছে, সেই সাহেদ কিভাবে আওয়ামী লীগে আশ্রয় নিল, প্রশ্রয় পেল! এই হসপিতালটিকে সে একটা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। ছবিগুলো দেখে আমি হতবাক হইনি। আমার পাশে একজন দাড়াতে পারে। কিন্তু এরা গেটপাস কিভাবে পায় সেটি হলো বিষয়।’
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে আওয়ামী লীগের আদর্শিক মান কমে গেছে- এমন কথার সঙ্গে একমত নন আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম কমিটির সদস্য। তিনি বলেন যে, আমাদের আদর্শ স্থিরই রয়েছে। আওয়ামী লীগের আদর্শিক লক্ষ্য বাস্তবায়নে নেত্রী যে গতিতে চলছেন, যে নির্দেশনা দিচ্ছেন সেগুলো বাস্তবায়ন করা যাচ্ছেনা বলেই সাহেদের মতো এই অনুপ্রবেশকারীরা দলে প্রবেশ করে শুধু দলের ভাবমূর্তিই নষ্ট করছে না, দলের আদর্শকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কাজেই দলের আদর্শ যখন প্রশ্নবিদ্ধ হয় তখন আমাদের মতো কর্মী যারা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি, কঠিন দু:সময় পাড় করেছি তাদের মনোকষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কোন গতি নেই।’
শুধুমাত্র আওয়ামী লীগে নয়, প্রশাসনেও স্বাধীনতা বিরোধী, রাজাকার পুত্র বা আত্মীয়দের পদোন্নতি পাওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে রাখাকে আওয়ামী লীগের জন্য এক অশনি সংকেত হিসেবে মনে করেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন যে, এরা সুদূরপ্রসারী একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। এ ব্যাপারে আমি কঠিনভাবে বলতে পারি, সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকা উচিত। আমরা এই বিষয়গুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে খুব স্পষ্টই বলবো।
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।