নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১০ জুলাই, ২০২০
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে রাজনীতি করতে হয়েছে এবং তাঁর এই রাজনৈতিক পথচলায় ঘরে বাইরে সংগ্রাম করতে হয়েছে। এই দীর্ঘ সময় তিনি খুব কম মানুষই পেয়েছেন যারা স্বার্থহীন, বিশ্বস্ত এবং কোনরকম প্রশ্ন ছাড়াই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। ১৯৮১ সালে যখন তিনি দেশে ফেরেন তখন জোহরা তাজউদ্দীন, সাজেদা চৌধুরীর মতো মানুষকে শেখ হাসিনা পাশে পেয়েছিলেন এবং তাঁরাই শেখ হাসিনার পাশে অতন্দ্র প্রহরীর মতো থেকে দলের ভেতরে যে জঞ্জাল এবং আবর্জনা ছিল সেই আবর্জনা পরিষ্কারে সহায়তা করেছিলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে জোহরা তাজউদ্দিনের দুঃসময়ে পাশে থাকার কথা স্মরণ করেছেন। সেই জোহরা তাজউদ্দিন চলে গেছেন বহু আগে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দীর্ঘ সময়ে সবসময়ে কাছে পেতেন সাজেদা চৌধুরীকে, কিন্তু সাজেদা চৌধুরী এখনো বেঁচে থাকলেও তাঁর শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানোর মতো পরিস্থিতি নেই বললেই চলে। তবুও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে যথাযথ সম্মানের সাথেই রেখেছেন।
দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করতে হয় এবং ৯০ সালে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটে। ৯০ সালে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিস্ময়করভাবে পরাজিত হয় এবং এই পরাজয়ের পর দলের ভেতর নানারকম ষড়যন্ত্র শুরু হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি তখন এই সমস্ত ষড়যন্ত্রে তিক্তবিরক্ত হয়ে দলের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এই সময়ে শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র প্রত্যাখান করা এবং তৃণমূলের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছিলেন প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম। সেসময় তিনি ৩২ নম্বরের সামনে আমরণ অবস্থান কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলেন যতক্ষণ পর্যন্ত না শেখ হাসিনা তাঁর পদত্যাগ পত্র প্রত্যাহার না করেন। সেই মোহাম্মদ নাসিমও সম্প্রতি মারা গেলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনে একদিকে যেমন তাঁকে জাতীয় রাজনীতির দিকে গুরুত্ব দিতে হয়েছে, ঠিক তেমনি অবহেলিত গোপালগঞ্জের দিকেও খেয়াল রাখতে হয়েছে। দুটো কাজ সামলাতে তাঁর এমন একজন ব্যক্তির দরকার ছিল যিনি গোপালগঞ্জের মানুষের সুখদুঃখ দেখভাল করবেন সার্বক্ষণিকভাবে এবং তা শেখ হাসিনাকে জানাবেন, শেখ হাসিনা সেইভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সেই গোপালগঞ্জের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত প্রতিনিধি শেখ আবদুল্লাহও করোনা যুদ্ধে পরাজিত হয়ে চলে গেছেন।
২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার সময় শেখ হাসিনা শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তার কৃপায় বেঁচে গেছেন এবং সেই সময়ে বুক পেতে যিনি শেখ হাসিনাকে আগলে ধরে রেখেছিলেন সেই মোহাম্মদ হানিফ, ঢাকার প্রথম মেয়র তিনিও এখন নেই। মোহাম্মদ হানিফ সেসময় নিজের জীবনকে বাজি রেখে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন। ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেন আসলে শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার এক নোংরা ষড়যন্ত্র শুরু হয় আওয়ামী লীগের দলের ভেতর এবং দলের বাইরে। সেসময় শেখ হাসিনার পাশে বিশ্বস্ততার প্রতীক হয়ে দাড়িয়ছিলেন প্রয়াত জিল্লুর রহমান, প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং প্রয়াত এডভোকেট সাহারা খাতুনের মতো নেতারা। এই ৩ নেতাই এখন আর নেই। জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি শেখ হাসিনার মাইনাসের বিরুদ্ধে কেবল সোচ্চারই ছিলেন না, দলের ভেতর ঐক্য বজায় রাখায় সচেষ্ট হয়েছিলেন। আর সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তখন সংস্কারপন্থিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে দলকে আগলে রেখেছিলেন। এদের কারণেই ২০০৮ এর নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিপুল বিজয় লাভ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আর সেসময় এডভোকেট সাহারা খাতুনের ভূমিকা নতুন করে বলার কিছু নেই। সাহারা খাতুনও গতকাল চলে গেছেন। এভাবে শেখ হাসিনার দুঃসময়ে যারা পাশে দাঁড়াতেন তাঁরা একে একে চলে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানোর মানুষের সংখ্যাও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। সামনে দিনগুলোতে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানোর মানুষ কে সেই প্রশ্ন করে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কর্মীরাই এখন শঙ্কিত হয়ে ওঠেন।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।