নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ১২ জুলাই, ২০২০
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দুই বছর আগেই দলে যারা অনুপ্রবেশকারী তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং তাঁদের চিহ্নিত করে দল থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। শুধু নির্দেশনা দেননি, নির্দিষ্টভাবে তালিকা প্রণয়ন করেছিলেন। কিন্তু দুই বছর পরেও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দেওয়া তালিকা অনুযায়ী এইসব অনুপ্রবেশকারীদের দল থেকে বিতাড়িত করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানা গেছে যে, দুই বছর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিভিন্ন গোয়ান্দা সংস্থাকে দিয়ে প্রত্যেকটি উপজেলা পর্যায় থেকে শুরু করে কারা কারা অনুপ্রবেশকারী এবং কিভাবে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করেছে এই সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্যবিবরনী চেয়েছিলেন। যার মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা গোয়ান্দা সংস্থাগুলো আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে দিয়েছিল। সেখানে অনুপ্রবেশকারীদের পরিচয় বিস্তারিত দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগে বিভিন্নভাবে অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং এর মূল কারণ ছিল স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব এবং প্রভাব বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা।
দেখা গেছে যে, বিভিন্ন মামলার আসামি যারা বাঁচার জন্যে আওয়ামী লীগে ঢুকেছে। অনেকেই হয়তো বিভিন্ন ব্যবসা বানিজ্য করতো তাঁরা এখন নিজেদের ব্যবসাকে আরো পাকাপোক্ত করার জন্যে আওয়ামী লীগে ঢুকেছে, অনেকেই আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বশীভূত করে আওয়ামী লীগে ঢুকেছে। এই তালিকা পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি তা যাচাইবাছাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নেতৃত্বে সেই তালিকা বাছাই করতে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য যে, তালিকা বাছাই করতে যে কমিটি দিয়েছিলেন সেই কমিটির সকল সদস্য ছিলেন নারী । ডা. দীপু মনির নেতৃত্বে এই কমিটি তালিকা যাচাইবাছাই করে দেখে যে, তালিকার দুই-তৃতীয়াংশ নাম সঠিক। বাকি এক-তৃতীয়াংশ যে নাম তা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে দেওয়া হয়েছে। ধরা যাক, একটি এলাকার একজন নেতাকে কেউ পছন্দ করেন না এবং গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তাঁর কাছে জানতে চেয়েছে যে অনুপ্রবেশকারী কে। তখন ব্যক্তিগত ক্ষোভ থাকার কারণে কারো নাম বলেছে এবং তাঁকে জামাত-বিএনপি ঘরানার বা তাঁর সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির যোগসাজশ রয়েছে বা তিনি বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত এমন তথ্য প্রদান করেছে।
ডা. দীপু মনির নেতৃত্বে এই কমিটি যাচাইবাছাই করে প্রায় ৩৮০০ জনের নামের একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন। এই তালিকায় যারা ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ ছিল সেই অভিযোগের একটি সারসংক্ষেপ ঐ তালিকায় ছিল। আওয়ামী লীগ সভাপতি এই তালিকা পুনরায় আবার বিচার-বিশ্লেষণ করেন এবং তারপর তিনি দলের দপ্তর সম্পাদককে এই তালিকাটি ৮ টি বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদককে প্রদান করতে বলেন এবং এই তালিকার আলোকে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন। এই নির্দেশনা প্রদানের ২ বছর পরেও তালিকায় যারা ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এটাকে আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারাই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, সেইসময় সাংগঠনিক সম্পাদকরা তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গেলেই স্থানীয় পর্যায় থেকে ব্যাপক চাপ আসে। কারণ স্থানীয় নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং তাঁদের আগ্রহের কারণে অনুপ্রবেশকারীরা দলে ঢুকতে পেরেছে এবং তাঁদের সঙ্গে এই সমস্ত অনুপ্রবেশকারীদের নানারকম সম্পর্ক রয়েছে। এই অবস্থায় অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় নেতারা কোন ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্যে, বিশেষ করে সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বিভিন্ন দেনদরবার-তদবির করেন। এর মধ্যেই নতুন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং এই সম্মেলনের পরে আওয়ামী লীগের নতুন সাংগঠনিক সম্পাদকরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তারপরেই দেশের করোনা পরিস্থিতি এবং অন্যান্য বাস্তবতায় ঐ তালিকা নিয়ে কাজ আর এগোচ্ছে না।
তবে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী যেভাবে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করেছিলেন, সেভাবে যদি দ্রুত অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো তাহলে এখন সাহেদের মতো দুর্বৃত্তদের নিয়ে প্রশ্ন উঠতো না এবং আওয়ামী লীগের লোকেরা অপকর্ম করে এই ধরনের কথা উঠতো না। এই জন্যেই আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি যে তালিকা দিয়েছেন তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটে আগামী ৮ মে। গতকাল সোমবার (২২ এপ্রিল) ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এদিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সরে দাঁড়ানোয় তিন উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ কয়েকজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
জানা গেছে, নোয়াখালীর হাতিয়া ও ফেনীর পরশুরাম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বান্দরবানে উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে রোয়াংছড়ি উপজেলায় আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী চহ্লামং মারমা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হচ্ছেন। সোমবার ( ২২ এপ্রিল ) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সরে দাঁড়ানোয় তিন উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ বেশ কয়েকজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
হাতিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিনজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তাঁরা হলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশিক আলী, স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস ও জাতীয় পার্টির নেতা মুশফিকুর রহমান। গতকাল আশিক আলী ছাড়া বাকি দুজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। হাতিয়া উপজেলা পরিষদের বাকি দুটি পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।
জানতে চাইলে মুশফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর রাজনীতির হাতেখড়ি সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর হাতে। তিনি ওই পরিবারের একজন সদস্যের মতো। মাঝখানে কিছু ভুল–বোঝাবুঝির কারণে দূরত্ব থাকলেও তা ঘুচে গেছে। আশিক আলীর সমর্থনে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জোড় করাতে তাঁর ছেলে প্রার্থী হয়েছেন। দলের অন্য কেউ আগ্রহ দেখাননি। ছেলের প্রতিদ্বন্দ্বীরা নিজ থেকেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।
ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থীর মধ্যে দুজন গতকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। এতে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন কেবল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফিরোজ আহমেদ মজুমদার। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন উপজেলা পরিষদের তিনবারের চেয়ারম্যান ও পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন মজুমদার ও উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হাসেম চৌধুরী।
ভাইস চেয়ারম্যান পদের চারজনের মধ্যে তিনজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। বর্তমানে একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নুর মোহাম্মদ শফিকুল হোসেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন ইকরামুল করিম মজুমদার, নজরুল ইসলাম ও আবদুল রসুল মজুমদার।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেত্রী শামসুন নাহার পাপিয়া। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন নিলুফা ইয়াসমিন।
এদিকে বান্দরবানে উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে রোয়াংছড়ি উপজেলায় আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী চহ্লামং মারমা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল চারজন প্রার্থীর মধ্যে তিনজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় চহ্লামং মারমা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বলে রিটার্নিং এস এম কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন।
তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুরোধ ও প্রচ্ছন্ন চাপে তাঁরা প্রার্থিতা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছেন। রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের তিনজন ও জনসংহতি সমিতির সাবেক এক নেতা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। চারজনের মনোনয়নই রিটার্নিং কর্মকর্তা বৈধ ঘোষণা করেছিলেন। প্রার্থীরা নিজেদের মতো করে প্রস্তুতিও নিয়েছেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর প্রার্থীরা জানিয়েছেন, গতকাল প্রত্যাহারের শেষ দিনে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের নেতারা তৎপর হয়ে ওঠেন। প্রার্থিতা তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করে এবং প্রচ্ছন্নভাবে চাপ দিতে থাকেন।
মন্তব্য করুন
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জুনাইদ আহমেদ পলক নাটোর তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জুনাইদ আহমেদ পলক টানা তিনবারের প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু রাজনীতিতে তার পদ পদবী তেমন নেই। রাজনীতিতে এখনও তিনি তরুণ এবং পিছনের সারির নেতা হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্ব এবং প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তিনি বিভিন্ন সময়ে সুনাম কুড়িয়েছেন। কখনও বিতর্কিত হয়েছেন। তবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তার পরীক্ষা হলো এবার এবং সেই পরীক্ষায় তিনি শুধু কৃতকার্যই হননি, এ প্লাস পেয়েছেন বলেও অনেকে মনে করছেন।
দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস পর রাজপথের কর্মসূচি ঘোষণা তা আবার প্রত্যাহার করতে হলো ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে। এবার প্রকৃতিও যেন বিএনপি সঙ্গে বৈরি আচরণ করলো। আগামী শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের কারাবন্দী নেতা কর্মীদের মুক্তির দাবিতে সমাবেশের ঘোষণা করেছিল দলটি। আর এই সমাবেশের ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে আবার রাজপথে আন্দোলনের কর্মসূচি পুনরায় শুরু করতে যাচ্ছিল ক্ষমতার বাইরে থাকা এই রাজনৈতিক দলটি।