নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১২ জুলাই, ২০২০
বেগম খালেদা জিয়া গত ২৫ মার্চ ৬ মাসের বিশেষ বিবেচনায় জামিন পেয়েছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন খালেদা জিয়া। স্বাস্থ্যগত কারণ এবং প্রধানমন্ত্রীর করুণার কারণে তিনি ৬ মাসের জন্য জামিন পেয়েছেন। বিভিন্ন শর্তে জামিন পাওয়ার পর জামিনের ৩ মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত তিনি কোন শর্ত ভঙ্গ করেননি। বরং তিনি তাঁর ঘরেই আছেন, কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছেন না এবং বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা কঠোরভাবে যেন জামিনের শর্ত প্রতিপালিত হয় সে ব্যাপারে নজরদারি করছেন। তাঁদের সঙ্গে দলের দুরত্বের খবর নতুন নয়, প্রকাশ্যেই এই খবর চাউর হচ্ছে।
এরকম পরিস্থিতিতে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বিএনপি নেতৃবৃন্দ একেক দিন একেক কথা বলছেন। কিছুদিন আগেই বলা হয়েছিল যে, বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার প্রশ্নই আসেনা, তিনি এখানেই থাকবেন। আবার বেগম খালেদা জিয়ার আত্মীয়দের ধমক খেয়ে তাঁরা সুর পাল্টেছেন। গতকাল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিদেশেই করতে হবে, দেশে নয়। বিভিন্ন সূত্র থেকে বলা হচ্ছিল যে,শর্তের জালে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা থেমে আছে। কিন্তু বাংলা ইনসাইডার এর অনুসন্ধানে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, কোন শর্তের জালে নয়, বরং বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক জিয়ার অনাগ্রহের কারণেই ঝুলে আছে বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা।
বেগম খালেদা জিয়া যখন দণ্ডিত হয়েছিলেন এবং ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কারাগার যান তখন থেকেই মা ছেলের সম্পর্কের টানাপড়েনের খবর শোনা যাচ্ছিল। তারেক জিয়াই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন যেন না হয় এবং বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রাখতে যা যা করা দরকার সে ব্যাপারে সবই করছিলেন।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে যে, তারেক জিয়ার কৌশল হলো বেগম খালেদা জিয়া জেলে থাকলে বিএনপির জনপ্রিয়তা বাড়বে এবং সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন বেগবান করা সহজ হবে। কিন্তু বিএনপির খালেদাপন্থিরা বলছেন উল্টো কথা। তাঁরা বলছেন যে, তারেক জিয়ার উদ্দেশ্য দুরভিসন্ধি বিএনপিকে কুক্ষিগত করা, বিএনপিকে যারা টাকাপয়সা দেয় সেই টাকার সিংহভাগ লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় থেকে তারেক খালেদার মুক্তি চাননি। বেগম খালেদা জিয়া যখন কারান্তরীণ ছিলেন তখন তারেক জিয়া ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং এই নির্বাচনে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন- যা এখন বিএনপিতে ওপেন সিক্রেট। এই নির্বাচনের পর প্রথমে বিএনপি সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরবর্তীতে তারেক জিয়ার চাপে বিএনপি সংসদে যায় এবং সেখানেও তারেক জিয়া মনোনয়ন বানিজ্য করেন। যখন বিএনপির এমপিরা সংসদে যান তখন বিএনপির পক্ষ থেকে হারুন অর রশীদ বিএনপি নেতাদের মধ্যে প্রথম শেখ হাসিনার সঙ্গে সংসদে দেখা করেন এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য অনুরোধ করেন। তখন শেখ হাসিনা জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে লন্ডনে পলাতক বিএনপির নেতা খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় কিনা। এই প্রশ্নের উত্তরে হারুন অর রশীদ কোন কথা বলতে পারেননি। তারেকের তীব্র অনাগ্রহের কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে দীর্ঘ ২৫ মার্চ কারাগারে থাকতে হয় এবং কারাগারে থাকাবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির সকল কর্তৃত্ব এবং নেতৃত্ব হারান। এরপর তাঁর পরিবার উদ্যোগ নেয় এবং পরিবারের সদস্যরা গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তাঁরা শেখ হাসিনার কাছে অনুনয়-বিনয় করে। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের ৬ মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা উন্নত চিকিৎসার জন্যে তাঁকে বিদেশে পাঠাতে চান। কিন্তু তারেক জিয়া তাঁকে লন্ডনে নিতে আগ্রহী নন বলেই জানা গেছে।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে তারেক জিয়া লন্ডনে আলাদা একটি জগৎ তৈরী করেছেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশ থেকে যেমন বিভিন্ন রকম টাকা পয়সার লেনদেন করছেন, তাকে অনেকে টাকা পাঠাচ্ছেন এবং সেখানে তিনি নানা রকম অপরাধ গোষ্ঠীর সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি চাননা যে তার মা সেখানে গিয়ে তার অবৈধ সম্পদের ওপর ভাগ বসান। কারণ বেগম জিয়া লন্ডনে গেলে তার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে হবে তার ছেলেকেই। এই দায়িত্ব তারেক জিয়া নিতে চাননা। আর এ কারণেই তারেক জিয়া তার মাকে লন্ডনে নিতে আগ্রহী নন। তারেক জিয়ার এই অনাগ্রহের কারণেই ঝুলে আছে বেগম জিয়ার লন্ডন যাত্রা।
বিএনপির পক্ষ থেকে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, সরকার হয়তো কিছু শর্ত দিতে চাচ্ছে। কিন্তু সরকারের একাধিক সূত্র বলছে, খালেদা জিয়া যদি লন্ডন যেতে চান তাহলে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি আবেদন করবেন। আবেদন করলে তাকে লন্ডন যেতে দেওয়ার অনুমতির বিষয়টি চিন্তাভাবনা করা হবে। কিন্তু খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন আবেদন করা হয়নি। কারণ খালেদা জিয়ার লন্ডনে যাওয়ার ক্ষেত্রে তারেকের সবুজ সংকেত এখনো পাননি।
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।