নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ০২ অগাস্ট, ২০২০
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। শুধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নন, তিনি সর্বকালের সেরা বাঙালি রাজনীতিবিদও বটে। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং জনবান্ধব রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার আদর্শেই অনুপ্রাণিত একটি দল। বঙ্গবন্ধু তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে যেমন নির্যাতিত হয়েছেন, কারাবরণ করেছেন, পশ্চিমা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আপোসহীন সংগ্রাম করেছেন, তেমনি তিনি সংগঠনকে শক্তিশালী করেছিলেন, সংগঠনকে তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিলেন। জাতির পিতা স্পষ্টই অনুধাবন করেছিলেন যে, সবকিছুর উর্ধ্বে একটি ভালো সংগঠন, একটি আদর্শবান সংগঠন লাগবে। জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা পাঠ করলে বোঝা যায় যে, তিনি সংগঠনের ব্যাপারে কতটা মনযোগী ছিলেন। তিনি নিজের হাতে অনেক রাজনীতিবিদ তৈরি করতেন, বিভিন্ন পেশার অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তিকে তিনি রাজনীতিতে যুক্ত করেছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনও বহু নেতা আছে যারা জাতির পিতার স্নেহধন্য, জাতির পিতা যাঁদের রাজনীতিতে এনেছিলেন এবং জাতির পিতার সঙ্গে যারা ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এদের অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন, কেউ কেউ এখনো আওয়ামী লীগে আছেন, আর কেউ কেউ এখন আওয়ামী লীগে নেই। প্রশ্ন ওঠে যে, বঙ্গবন্ধুর যারা ঘনিষ্ঠ, যারা এখনো বঙ্গবন্ধুর ভক্ত, বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে যাঁদের মনে কোন প্রশ্ন নেই, বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে যাঁদের আবেগ-ভালোবাসার কমতি না থাকার পরেও তাঁরা আওয়ামী লীগে নেই কেন? এরকম কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়েই আমাদের এই প্রতিবেদন।
ড. কামাল হোসেন
ড. কামাল হোসেনকে বঙ্গবন্ধু হাতে ধরে রাজনীতিতে এনেছিলেন। উত্তাল গণআন্দোলনের পরপরই বঙ্গবন্ধু ড. কামাল হোসেনকে আওয়ামী লীগে নিয়ে এসেছিলেন। ড. কামাল হোসেন সেই সময় সদ্য আইন পেশায় যোগ দিয়েছিলেন এবং যুক্তরাজ্য থেকে ফিরেছেন। ড. কামাল হোসেন তাঁর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু যখন তাঁকে রাজনীতিতে আসার আমন্ত্রণ জানালো তখন তাঁর দৃঢ়তা এমন ছিল যে, সেই আমন্ত্রণ তিনি প্রত্যাখ্যান করতে পারেননি। ত্রিশোর্ধ্ব বয়সেই বঙ্গবন্ধু তাঁকে আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু ডা. কামাল হোসেন এখন আওয়ামী লীগে নেই। ১৯৭৫ এর পরবর্তী সময়ে যেমন তাঁর ভূমিকা ছিল রহস্যময়, তেমনি ১৯৯১ সালে তিনি আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে গণফোরাম গঠন করেন। এখন এই গণফোরাম টিকে না থাকার মতোই একটি নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল হিসেবে আছে। ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগে নেই কেন তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তবে এর মূল কারণ হলো ড. কামাল হোসেন হয়তো বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে আর এগিয়ে নিতে চাননি বা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় তিনি একজন ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করেন।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী কেবল বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠই ছিলেন না, তিনি ৭৫ এর ১৫ই আগস্টের পর যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তিনি ভারতে আশ্রয় নেন, আওয়ামী লীগের সকলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও এখন কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগে নেই। জানা যায় যে, বঙ্গবন্ধুর প্রতি কাদের সিদ্দিকীর শ্রদ্ধা-আনুগত্যতা নিয়ে সন্দেহ নেই, এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিও তাঁর ভালোবাসার কমতি নেই। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলে যে নিয়মনীতি মেনে চলতে হয় সেরকম বিধিনিষেধ মানার লোক কাদের সিদ্দিকী নন। তিনি তাঁর নিজের কথা স্পষ্টভাবেই বলেন এবং রাজনৈতিক শৃঙ্খলা, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা পালনের ক্ষেত্রে তাঁর কিছু সমস্যা থাকার কারণেই তাঁকে আওয়ামী লীগ ছেঁড়ে চলে যেতে হয় এবং এখনো তিনি দলের বাইরে আছেন।
শেখ শহিদুল ইসলাম
জাতীয় পার্টির একাংশের নেতা শেখ শহিদুল ইসলাম জাতির পিতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। মেধাবী ছাত্রনেতা-যুবনেতা হিসেবে শেখ শহিদুলকে বঙ্গবন্ধু নিজের হাতে গড়ে তুলেছিলেন। ৭৫ পরবর্তী সময়ে শেখ শহিদুল ইসলাম এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। জাতীয় পার্টিতে নানা টানাপোড়েন এবং ভাঙ্গন প্রক্রিয়ার তিনি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টিতে রয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ব্যাপারে তিনি যেমন আপোসহীন, ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে যারা শিক্ষিত এবং রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় এগিয়ে তাঁদের মধ্যে শেখ শহিদুল ইসলাম অন্যতম। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য হয়েও তিনি কেন আওয়ামী লীগে নেই সেই এক বড় প্রশ্ন।
কাজী ফিরোজ রশীদ
কাজী ফিরোজ রশীদ বঙ্গবন্ধুর প্রিয়ভাজন এক ছাত্রনেতা এবং যুবনেতা ছিলেন। ৭৫ এর ১৫ই আগস্টের আগের রাতেও কাজী ফিরোজ রশীদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাত হয়েছিল। তারপর কাজী ফিরোজ রশীদ রাজনীতির নানা চড়াই-উতরাইয়ে আওয়ামী লীগে টিকে থাকতে পারেননি, যেকোন কারণেই হোক তিনি আদর্শচ্যুত হয়েছেন এবং এখন তিনি জাতীয় পার্টির অন্যতম নেতা।
অধ্যাপক আবু সাইয়িদ
অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ছিলেন তরুণ শিক্ষক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজশাহী সফরে গেলে বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টি পড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তরুণ শিক্ষকের ওপর। তাঁকে তিনি রাজনীতিতে যোগদানের অনুরোধ জানান। অধ্যাপক আবু সাইয়িদ রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৭৫ এর পরেও অধ্যাপক আবু সাইয়িদ একজন গবেষক হিসেবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে যে ষড়যন্ত্র, অকথিত অধ্যায় ইত্যাদি নিয়ে প্রচুর গবেষণা এবং লেখালিখি করেছেন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন এবং গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর অকথিত বিষয়গুলোকে উপস্থাপন করা, বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ ভাষণগুলোকে খুঁজে বের করে আবার প্রকাশ করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু এখন তিনি আওয়ামী লীগে নেই। ২০০৭ সালে সংস্কারপন্থি হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁর টানাপোড়েন তৈরি হয় এবং এখন এই টানাপোড়েনের ধারায় তিনি এখন কেবল আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গন থেকেই বিতাড়িত প্রায়।
এরকম আরো কিছু ব্যক্তি আছেন যারা জাতির পিতার ঘনিষ্ঠ ছিলেন, কিন্তু নানা কারণে তাঁরা পথভ্রষ্ট হয়েছেন কিংবা নানা বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁরা নেই।
মন্তব্য করুন
খন্দকার মোশাররফ হোসেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জন বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে পিছু
হটল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির যেসব নেতা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ছিলেন, এরই
মধ্যে তাদের প্রার্থী না হতে বারণ করা হয়েছে। জামায়াতের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয়
নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে আলোচনার পর উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার এ সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রের
এ সিদ্ধান্ত স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতারা তৃণমূলে জানিয়ে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে যারা মনোনয়নপত্র
জমা দিয়েছেন, তাদের প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে জামায়াত কোনো আনুষ্ঠানিক
ঘোষণা দেয়নি। দলীয় সিদ্ধান্ত না থাকলেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় জামায়াতের অনেক নেতা স্বতন্ত্র
প্রার্থী হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সম্ভাব্য
প্রার্থীরা স্থানীয়ভাবে নানারকম প্রচার ও গণসংযোগও করছিলেন। বিশেষ করে রোজার মধ্যে
এবং ঈদুল ফিতরে তারা ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন।
দলটির নেতারা বলছেন, মূলত বেশকিছু কারণে
বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাচ্ছে না জামায়াত। তার মধ্যে মোটাদাগে চারটি কারণের
কথা বলছেন নেতারা।
কারণগুলো হচ্ছে…
১। মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগে ক্ষমতাসীনদের
‘হস্তক্ষেপ’
২। বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থা ও পরিবেশের
প্রতি জনগণের ‘আস্থার সংকট’
৩। গণতন্ত্র না থাকা এবং
৪। উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ‘অবৈধ
সরকার’কে বৈধতা না দেওয়া
এদিকে, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখের (সোমবার) আগেই সিদ্ধান্ত বদল করায় জামায়াতের তৃণমূলে
অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মাঠপর্যায়ে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, যশোর, সাতক্ষীরা,
চুয়াডাঙ্গাসহ বেশকিছু উপজেলায় জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সম্ভাব্য প্রার্থী
হিসেবে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি উপজেলার
সম্ভাব্য প্রার্থীরা বলেন, নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত এমন সময় এলো, যখন তারা ব্যাপকভাবে
গণসংযোগ করছিলেন। এতে তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে নেতিবাচক বার্তা যায়।
নির্বাচনে গেলে কী লাভ আর কী ক্ষতি—এটা ভেবে অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন দলের
নীতিনির্ধারকরা। তবে সার্বিক পরিস্থিতিতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা যে সিদ্ধান্ত
নিয়েছেন, সেটাকেও সম্মান জানাতে চান তারা।
গতকাল মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) জামায়াতে
ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি
বিবেচনায় উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। এরই মধ্যে সারা দেশে দলীয়
সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ মনোনয়ন জমা দিলে তা প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।
দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি-জামায়াতসহ
প্রায় ৬৩টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন
বর্জন করেছে। বিএনপিও এ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ইসলামী দলগুলোর অন্যতম চরমোনাই
পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে না যাওয়ার
সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সবমিলিয়ে জামায়াতকেও শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত
নিতে হলো।
এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের
বিষয়ে শুরুর দিকে কিছুটা নমনীয় ছিল জামায়াত। জয়ের সম্ভাবনা আছে এবং স্থানীয়ভাবে প্রভাব
আছে—এমন উপজেলাগুলোতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত
নিয়েছিল দলটি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এবং প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট
উপজেলা ও জেলা কমিটির দায়িত্বশীল নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সে মোতাবেক সম্ভাব্য
প্রার্থীরা প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের চলামান রাজনৈতিক
ও সার্বিক পরিস্থিতিতে ঈদের আগে দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের
বৈঠক ডাকে জামায়াতে ইসলামী। সেখানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা
হয়। একপর্যায়ে উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ঈদুল ফিতরের পরপরই গত
শনিবার উপজেলা নির্বাচন না করার বিষয়ে জেলা ও উপজেলার দায়িত্বশীল নেতাদের মাধ্যমে তৃণমূলে
মৌখিকভাবে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ব্যাপারে জামায়াতের
নেতারা বলছেন, তারা পর্যালোচনা করে দেখেছেন যে, দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো
পরিবেশ নেই। জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে ভূমিকা
রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। যার সর্বশেষ প্রমাণ গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন।
দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অসংখ্য
রাজনৈতিক দল এ সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জন করেছে। এ অবস্থায় জামায়াতে ইসলামী উপজেলা
নির্বাচনে অংশ নিয়ে ‘অবৈধ সরকার’কে বৈধতা দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। তা ছাড়া নির্বাচনের
আগেই বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের হুমকি দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। এসব
বিষয়কে বিবেচনা করে উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত।
গতকাল জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি
জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী শুধু নয়, বাংলাদেশের কোনো গণতান্ত্রিক
দল উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। কারণ, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশের
জনগণ ভোট দিতে যায়নি। তারা একতরফা নির্বাচন বর্জন করেছে। সেই জনরোষ এখনো আছে। সুতরাং
যেসব কারণে আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছি, সেসব কারণেই উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছি
না। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী জনগণের জন্য রাজনীতি করে। জনগণের প্রতি জামায়াতের দায়বদ্ধতা
আছে। দায়িত্বশীল দল হিসেবে জামায়াত জনমতকে উপেক্ষা করে নির্বাচনে যেতে পারে না’।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০১৪ সালের জাতীয়
সংসদ নির্বাচনের পরপর অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামায়াতের শতাধিক প্রার্থী
উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলাসহ) হন। ২০০৯ সালের নির্বাচনে ২৪টি উপজেলায়
চেয়ারম্যানসহ ৩৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলাসহ) নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে দলীয়
প্রতীকে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে জামায়াত। দলের নিবন্ধন না থাকলেও স্বতন্ত্র
প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছিল জামায়াত নেতাদের। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তে সেবার কেউ নির্বাচনে
অংশ নেননি।
উপজেলা নির্বাচন জামায়াত বিএনপি
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-কে বিজয়কে সুসংহত করার পথে
প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে সন্ত্রাসী এ অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আজ বুধবার (১৭ এপ্রিল) ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডি
৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কাদের বলেন, বিজয়কে সুসংহত করার পথে প্রতিবন্ধকতা হলো বিএনপির
মতো সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী অশুভ শক্তি। এ শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। আজকের এ দিনে
বিএনপিসহ স্বাধীনতাবিরোধী সন্ত্রাসী শক্তি সব অপশক্তিকে, যারা আমাদের বিজয়কে সংহত
করার প্রতিবন্ধক, এদের আমরা পরাজিত করব, পরাভূত করব, প্রতিহত করব। আমাদের লড়াইকে আমরা
এগিয়ে নিয়ে যাব।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি তো কোনো দাবিকে বিচ্ছিন্নভাবে
কিছু বলতে পারি না। মন্ত্রিসভা আছে, প্রধানমন্ত্রী আছেন। তারা এত বছর পর দাবিটা তুলছেন,
কেন তুলছেন এটাও জানার দরকার আছে।
তিনি আরও বলেন, আজকের এই দিনে আমরা শপথ নেব মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ধারাবাহিক
লড়াইয়ে আমরা এগিয়ে যাব। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বয়ে নিয়ে
যাব, এটাই হোক আমাদের শপথ।
এর আগে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার স্থপতি
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর
প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বিএনপি মুজিবনগর দিবস ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে যে, মন্ত্রী এবং এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে কোন প্রার্থীকে সমর্থন করতে পারবে না। তাদেরকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই রকম বার্তা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে লিখিত নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত নির্দেশনা উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করাতে মাঠে নেমেছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নির্বাচনী এলাকাতেই এমপিরা প্রার্থীর নাম ঘোষণা করছেন।
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে পিছু হটল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির যেসব নেতা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ছিলেন, এরই মধ্যে তাদের প্রার্থী না হতে বারণ করা হয়েছে। জামায়াতের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে আলোচনার পর উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার এ সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্ত স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতারা তৃণমূলে জানিয়ে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদের প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।