নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ০৫ অগাস্ট, ২০২০
ফরিদপুর নিয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন শেখ হাসিনা। সেখানে একের পর এক শহর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবশালী নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এই অভিযান শুরু হয়েছিল ফরিদপুরের প্রভাবশালী দুই নেতা বরকত এবং রুবেলের গ্রেপ্তারের মধ্যে দিয়ে এবং এর পর থেকে সেখানে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে ধরপাকড় অব্যহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার ওরফে লেবি, শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান ওরফে ফারহান, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধক্ষ্য বিলাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রে বলা হয়েছে যে, বরকত এবং রুবেলের সূত্র ধরে যারাই এখানে আইন পরিপন্থি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদেরকেই আইনের আওতায় আনা হবে এবং কাউকেই ছাড় দেওয়া হবেনা। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রে এটাও বলা হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ফরিদপুরে এই অপারেশন পরিচালিত হচ্ছে। অপরাধী যেই হোক না কেন তাঁকে কোন প্রকার ছাড় না দেওয়ার জন্যে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা প্রদান করেছেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে।
প্রশ্ন উঠেছে যে, ফরিদপুর নিয়ে কেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এত কঠোর অবস্থানে গেলেন? আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, এই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ রয়েছে।
সীমাহীন দুর্নীতি
দীর্ঘদিন ধরে ফরিদপুরে কিছু দুর্বৃত্তদের অপকর্মের কথা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছিল। তাঁরা এটাও বলছিল যে, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এই দুর্বৃত্তরা টেন্ডারবাণিজ্য, চাঁদাবাজি এবং নানারকম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছে। ফলে একজন সরকারপ্রধান হিসেবে, যিনি সবসময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করে আসছেন, এরকম পরিস্থিতিতে তিনি নির্মোহভাবে যারা অপরাধী তাদেরকে আইনের আওতায় আনবেন এটাই স্বাভাবিক।
দলের পরীক্ষিত-ত্যাগীদের কোণঠাসা হয়ে পড়া
গত কিছুদিন ধরেই ফরিদপুরের রাজনীতিতে একটা মেরুকরণ হচ্ছিল এবং দেখা যাচ্ছিল যে, যারা দলে অনুপ্রবেশকারী এবং সুবিধাবাদী তাঁরা ফরিদপুর শহরে প্রভাব বেশি বিস্তার করছিল। অন্যদিকে যারা দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিল, যারা ত্যাগী-পরীক্ষিত তাঁরা দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। এবং সর্বশেষ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির বাসায় হামলার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন এবং এরপর এই অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন।
সারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে সতর্কবার্তা
ফরিদপুরটি যেকোনভাবেই একটি স্পর্শকাতর এলাকা এবং এই এলাকায় কয়েকজন প্রভাবশালী এমপি এবং আওয়ামী লীগের নেতা রয়েছেন। কাজেই ফরিদপুরে যদি এই ধরণের দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধিঅভিযান পরিচালিত হয় তাহলে সারাদেশে একটি বার্তা যাবে এবং এই বার্তার মাধ্যমে যারা আওয়ামী লীগে ঢুকে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে অপকর্ম করছে তারা সতর্ক হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহজ হবে। এই কারণে ফরিদপুরে এই শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে যার মাধ্যমে সারা দেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে সুনির্দিষ্ট বার্তা দেওয়া হলো, সেই বার্তাটি হচ্ছে, আওয়ামী লীগে যারা অনুপ্রবেশ করেছে এবং অনুপ্রবেশ করে লুটপাট করছে তাদেরকে কোন ছাড় দেওয়া হবেনা।
দলের প্রভাবশালীদের জন্য বার্তা
শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা গঠন করেন এবং তিনি তখন থেকেই বলে আসছিলেন যে, দুর্নীতিকে কোন আশ্রয়-প্রশয় দেওয়া হবেনা। এই আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেওয়ার জন্যে তিনি বারবার সতর্ক বার্তা দিচ্ছিলেন এবং বিভিন্ন নেতাদেরকে তিনি এইরকম আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেওয়ার জন্যে নির্দেশনাও দিয়েছিলেন, তবে সেই নির্দেশনা প্রতিপালিত হয়নি। আর একারণেই তিনি সরাসরি অভিযান করছেন। কারণ এই শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে একটি জিনিস স্পষ্ট হয়েছে যে, যারা এইরকম দুর্বৃত্ত তাঁরা বড় নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে লালিত। আর এই কারণে তিনি ফরিদপুরের ঘটনার মাধ্যমে অন্যদেরকেও একটি বার্তা দিলেন যে, যারাই এই ধরণের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে, একই প্রক্রিয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।