নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৯ পিএম, ০৬ অগাস্ট, ২০২০
দীর্ঘদিন ধরেই কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী নেই বিএনপির। বিএনপির কর্মসূচী বলতে বক্তৃতা-বিবৃতি এবং টক শোতে এসে সরকারের সমালোচনা করা। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যে ২৫ মাস জেলে ছিলেন সেই সময়ে দলটির রাজনীতি ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তিকেন্দ্রিক। এখন সেই রাজনীতিও নেই, বেগম খালেদা জিয়া চার মাসের বেশি সময় ধরে ফিরোজাতে অবস্থান করছেন।
অনেকেই যেটা মনে করেছিল যে, বেগম খালেদা জিয়া জেল থেকে বের হলে বিএনপির রাজনীতিতে চাঞ্চল্যতা ফিরবে, কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। বিএনপির রাজনীতিতে চাঞ্চল্য তো দূরের কথা, বিএনপি আরো রাজনীতিহীন হয়ে পড়েছে এই সময়ে। বিশেষ করে করোনা সঙ্কটের সময়ে বিএনপিকে পাওয়া যায়নি জনগণের পাশে, বন্যার সময় বিএনপি নেতাদের কোন ত্রাণ তৎপরতা চোখে পড়েনি, এমনকি আম্ফানের সময়েও বিএনপির নেত্রীবৃন্দকে জনগণের পাশে দেখা যায়নি। এরকম পরিস্থিতিতে বিএনপি কোন পথে এগোচ্ছে, লক্ষ্য কি বিএনপির? বিএনপি কি তাঁদের রাজনৈতিক দল হিসেবে গুটিয়ে ফেলেছে নাকি বিএনপি এখন জিয়ার কবর জিয়ারত ছাড়া অন্য কোন কর্মসূচী পালনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে?
এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় যে, বিএনপির রাজনৈতিক লক্ষ্য পরিবর্তিত হয়েছে। বিএনপির রাজনৈতিক প্রধান লক্ষ্য এখন ভারতের আস্থা অর্জন করা। বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, বিএনপি মনে করছে যে, ভারতের আস্থা অর্জন করতে না পারলে বাংলাদেশে কোন রাজনীতি করাই সম্ভব নয়। আর এই কারণেই বিএনপি ভারতের কাছে এক রকমের আত্মসমর্পন করেছে এবং ভারতের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ক্রীতদাস হয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পূণর্বাসিত হতে চাইছে।
বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, বিএনপির ভেতরে বেশকিছু অনুশাসন জারি করা হয়েছে এবং এই অনুশাসনের মোদ্দা কথা হলো ভারত বিরাগভজন হয় এরকম কোন বক্তব্য, মন্তব্য, বিবৃতি যেন না দেওয়া হয়। গত ২৫ মার্চের পর থেকে এই পর্যন্ত বিএনপির কোন নেতা একটাও ভারতবিরোধী কোন মন্তব্য বা বিবৃতি প্রদান করেনি। প্রকাশ্যে বিএনপি ভারতের ব্যাপারে খুব নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করছে, এমনকি যে বিষয়গুলো বিএনপির গঠনতন্ত্রে উল্লেখিত রয়েছে, যেমন কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে বিএনপির গঠনতন্ত্রে সুনির্দিষ্ট ভারতবিরোধী অবস্থান রয়েছে, সেই ব্যাপারেও বিএনপির পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য রাখা হয়নি।
১ বছর আগেও অযোধ্যার রাম মন্দির নিয়ে বিএনপি নেতারা অনেক গরম বক্তৃতা দিয়েছিলেন, এবার যখন রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হলো তখন বিএনপি নেতারা মুখে কুলূপ এঁটে বসেছিলেন। তাঁরা এই নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি। তাহলে কি বিএনপি ভারত বিরোধী রজনীতি থেকে সরে আসছে? বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে ইতিবাচক উত্তর পাওয়া গেছে।
বিএনপির নেতৃবৃন্দের মধ্যে যারা ভারতপন্থী হিসাবে পরিচিত তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বিনির্মাণের জন্য। ভারত যেন বিএনপিকে বিশ্বাস করে সেটি পুন:প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এই দায়িত্ব পালনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খানসহ আরো কয়েকজন।
উল্লেখ্য যে, ২০০১ সালে ভারতের আশ্রয় নিয়েই ভারতের সঙ্গে দেনদরবার করে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল। এ সময় বিএনপি ভারতের সঙ্গে গ্যাস বিক্রীসহ বেশকিছু বিষয়ে মুচলেকা দিয়েছিল। কিন্তু ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থেকে বিএনপি ভারতের সঙ্গে একরকম চুক্তি ভঙ্গই করেছে বলে মনে করে ভারতীয় কূটনৈতিক মহল। বিশেষ করে উলফাসহ ভারতের বিভিন্ন বিচ্ছন্নতাবাদীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়াসহ বাংলাদেশের ভূখন্ডে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো কাজগুলো করে বিএনপি- জামাত জোট সরকার। এইসবের নেপথ্যে তারেক জিয়া ছিলেন বলেও মনে করে ভারতীয় কূটনৈতিকরা। আর এ কারণেই ভারতের সঙ্গে এক অবিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরী হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের। বিশেষ করে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা যে সরাসরি তারেকের তত্বাবধানে হয়েছে এ ব্যাপারে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা মোটামুটি নিশ্চিত।
২০০৭ সালের পটপরিবর্তনের আগে থেকেই ভারত বিএনপি থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। এরপর বেশকিছু ঘটনায় ভারতের সঙ্গে বিএনপির আরো দূরত্ব তৈরী হয়। বিশেষ করে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফর করলে খালেদা জিয়া তার সঙ্গে সাক্ষাত বাতিল করে, এরফলে ভারত- বিএনপি সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে। বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন, ভারত যতক্ষণ না পর্যন্ত বিএনপিকে আশ্রয় না দেবে, ভারত যতক্ষণ পর্যন্ত বিএনপিকে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসাবে স্বীকৃতি না দেবে, ততক্ষণ বাংলাদেশে বিএনপির কোন সম্ভাবনা নেই। আর এ কারণেই এখন বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ্য হলো আগে ভারতকে বশীভূত করা, ভারতের আস্থা অর্জন করা। ভারতের আস্থা অর্জন না করে বাংলাদেশে যা কিছুই করা হোক না কেন তাতে কিছু ফল হবে না এমনটি মনে করেন বিএনপির অধিকাংশ শীর্ষ নেতারা।
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।