নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৮ পিএম, ০৭ অগাস্ট, ২০২০
টানা তিন মেয়াদে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর তৃতীয় মেয়াদে এসে ঘরে-বাইরে নানারকম সঙ্কট মোকাবেলা করতে হচ্ছে। একদিকে করোনা পরিস্থিতি, বন্যা, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনা। এছাড়া দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন সবকিছু মিলিয়ে এক ধরনের চাপের মুখে আছে তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ঘরের ভেতরেও কিছু দুশ্চিন্তার কারণ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে রিজেন্টের সাহেদের ঘটনা আওয়ামী লীগকে বিব্রত করেছে বা কুয়েতে আটক সাংসদ পাপলুর ঘটনাতেও আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা বলছেন যে, এই সমস্ত অনুপ্রবেশকারীদের দলে ঢোকার দরজা বন্ধ করে দিতে হবে। এই বাস্তবতায় এই সমস্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন কিছু প্রভাবশালী নেতারা। শেখ হাসিনার অ্যাকশনের কারণে এসব নেতাদের প্রভাব এবং প্রতিপত্তি দলের ভেতরে এবং সরকারে খর্ব হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। যাদের কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, যে সমস্ত প্রভাবশালী নেতাদের প্রভাব খর্ব করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন-
ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন
সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনার নির্দেশে ফরিদপুরে যে অপারেশন হচ্ছে, সেই অপারেশনে চাপের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের এই সাবেক মন্ত্রী। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বিগত দুই মেয়াদেই মন্ত্রীত্ব পালন করেছেন। প্রথমে তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও শ্রমশক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন, পরবর্তীতে তিনি স্থানীয় সরকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। তৃতীয় মেয়াদে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে মন্ত্রণালয় থেকে বাদ দেওয়া হয়। এখন ফরিদপুরে চলমান অভিযানে যাদের আটক করা হচ্ছে তাঁদের সকলেই ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ঘনিষ্ঠ বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। এর ফলে দলের ভেতরে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বিশেষ করে ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের পরীক্ষিত কর্মী যারা তাঁরা এখন সাবেক এই মন্ত্রীর সমালোচনায় মুখর হচ্ছেন। ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন নিজেও এলাকায় যাচ্ছেন না এবং এই ব্যাপারে তিনি কোন কথাও কোথাও বলছেন না। স্পষ্টতই ফরিদপুরে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের যে প্রভাব, তা সংকুচিত হয়ে পড়েছে অপারেশন ফরিদপুরের মাধ্যমে।
মাহবুব উল আলম হানিফ
আওয়ামী লীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা মাহবুব উল আলম হানিফ। ২০০৮ সালে তিনি নির্বাচন না করলেও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর পদটি পেয়ে পুরস্কৃত হন। এই সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবেই পরিচিতি পান। আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এখনো তিনি দায়িত্ব পালন করছেন, কিন্তু বিগত কাউন্সিলের পর থেকেই তিনি নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যখন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তখন তাঁকে কিছুটা সরব দেখা গিয়েছিল। তবে এবার করোনা সঙ্কটের সময় কানাডাতে পাড়ি দিয়ে তিনি আলোচনা-বিতর্কের কেন্দ্রে আসেন। এই সময়ে কিভাবে তিনি কানাডায় গেলেন তা নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে অনেক প্রশ্ন উঠেছে এবং তাঁর রহস্যময় কানাডা যাত্রা দলে তাঁর কর্তৃত্ব এবং প্রভাব চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
এইচ টি ইমাম
আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে সরকারে ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে দলের প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এইচ টি ইমাম। তিনি সেসময়ে জনপ্রশাসন উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০১৪ থেকে তার প্রভাব কিছুটা কমতে থাকে। এ সময় আওয়ামী লীগের হেভিওয়েটরা মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন এবং এইচ টি ইমামেরও উপদেষ্টার ধরন পাল্টে যায়। তিনি জনপ্রশাসন উপদেষ্টা থেকে রাজনৈতিক উপদেষ্টা হয়ে যান। রাজনৈতিক উপদেষ্টা হলেও আওয়ামী লীগের ভেতরে বাইরে তার প্রভাব ছিল অত্যন্ত বেশি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কুয়েতে স্বতন্ত্র এমপি পাপুলের গ্রেপ্তারের ঘটনার পর দলের ভেতর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন এইচ টি ইমাম। তার বরাতেই পাপুলকে সমর্থন দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল বলেও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন। এই বাস্তবতায় দলের ভেতর এইচ টি ইমামের ক্ষয়িষ্ণু প্রভাব আরও সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে এবং তার কর্তৃত্বও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন
ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন আওয়ামী লীগের কোনো প্রভাবশালী নেতা না হলেও তিনি একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী। তিনি যেন সোনার চামচ মুখে দিয়েই আওয়ামী লীগে এসেছিলেন। একজন মাঝারি মানের আমলা এবং রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছাড়াই তিনি এবার সিলেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসন থেকে নির্বাচন করেন এবং নির্বাচনের পর পররাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রাণালয়ের দ্বায়িত্ব পান। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি নানা রকম বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন, তবে সর্বশেষ যেটি নিয়ে তিনি বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এসেছেন, তা হলো একটি বই। ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শিরোনামে তিনি ১৯৮ পৃষ্ঠার যে বইটি লিখেছেন, সেই বইয়ের মধ্যে তথ্য বিকৃতি, ইতিহাস বিকৃতি এবং মিথ্যাচারের অভিযোগ উঠেছে প্রকাশ্যে। আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা এই বইটি বাজেয়াপ্ত এবং বাতিল করার দাবি উত্থাপন করেছেন।
আ জ ম নাছির উদ্দীন
চট্টগ্রামের রাজনীতিতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর একচ্ছত্র প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। কিন্তু তিনি মেয়র পদে মনোনয়ন না পাওয়ায় এবং এখন দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ায় তার প্রভাব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, চট্টগ্রামের রাজনীতিতে তার একক কর্তৃত্ব থাকতে পারে না।
এ সমস্ত নেতাদের প্রভাব ক্ষুন্ন হওয়ার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে এবং চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করছেন যে, যে কেউই খারাপ কাজ করুক না কেন, শেখ হাসিনা দলের স্বার্থে তাকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় না। এটা আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে টনিকের মতো কাজ করছে।
মন্তব্য করুন
খন্দকার মোশাররফ হোসেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জন বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে পিছু
হটল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির যেসব নেতা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ছিলেন, এরই
মধ্যে তাদের প্রার্থী না হতে বারণ করা হয়েছে। জামায়াতের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয়
নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে আলোচনার পর উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার এ সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রের
এ সিদ্ধান্ত স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতারা তৃণমূলে জানিয়ে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে যারা মনোনয়নপত্র
জমা দিয়েছেন, তাদের প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে জামায়াত কোনো আনুষ্ঠানিক
ঘোষণা দেয়নি। দলীয় সিদ্ধান্ত না থাকলেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় জামায়াতের অনেক নেতা স্বতন্ত্র
প্রার্থী হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সম্ভাব্য
প্রার্থীরা স্থানীয়ভাবে নানারকম প্রচার ও গণসংযোগও করছিলেন। বিশেষ করে রোজার মধ্যে
এবং ঈদুল ফিতরে তারা ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন।
দলটির নেতারা বলছেন, মূলত বেশকিছু কারণে
বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাচ্ছে না জামায়াত। তার মধ্যে মোটাদাগে চারটি কারণের
কথা বলছেন নেতারা।
কারণগুলো হচ্ছে…
১। মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগে ক্ষমতাসীনদের
‘হস্তক্ষেপ’
২। বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থা ও পরিবেশের
প্রতি জনগণের ‘আস্থার সংকট’
৩। গণতন্ত্র না থাকা এবং
৪। উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ‘অবৈধ
সরকার’কে বৈধতা না দেওয়া
এদিকে, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখের (সোমবার) আগেই সিদ্ধান্ত বদল করায় জামায়াতের তৃণমূলে
অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মাঠপর্যায়ে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, যশোর, সাতক্ষীরা,
চুয়াডাঙ্গাসহ বেশকিছু উপজেলায় জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সম্ভাব্য প্রার্থী
হিসেবে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি উপজেলার
সম্ভাব্য প্রার্থীরা বলেন, নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত এমন সময় এলো, যখন তারা ব্যাপকভাবে
গণসংযোগ করছিলেন। এতে তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে নেতিবাচক বার্তা যায়।
নির্বাচনে গেলে কী লাভ আর কী ক্ষতি—এটা ভেবে অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন দলের
নীতিনির্ধারকরা। তবে সার্বিক পরিস্থিতিতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা যে সিদ্ধান্ত
নিয়েছেন, সেটাকেও সম্মান জানাতে চান তারা।
গতকাল মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) জামায়াতে
ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি
বিবেচনায় উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। এরই মধ্যে সারা দেশে দলীয়
সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ মনোনয়ন জমা দিলে তা প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।
দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি-জামায়াতসহ
প্রায় ৬৩টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন
বর্জন করেছে। বিএনপিও এ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ইসলামী দলগুলোর অন্যতম চরমোনাই
পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে না যাওয়ার
সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সবমিলিয়ে জামায়াতকেও শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত
নিতে হলো।
এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের
বিষয়ে শুরুর দিকে কিছুটা নমনীয় ছিল জামায়াত। জয়ের সম্ভাবনা আছে এবং স্থানীয়ভাবে প্রভাব
আছে—এমন উপজেলাগুলোতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত
নিয়েছিল দলটি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এবং প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট
উপজেলা ও জেলা কমিটির দায়িত্বশীল নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সে মোতাবেক সম্ভাব্য
প্রার্থীরা প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের চলামান রাজনৈতিক
ও সার্বিক পরিস্থিতিতে ঈদের আগে দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের
বৈঠক ডাকে জামায়াতে ইসলামী। সেখানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা
হয়। একপর্যায়ে উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ঈদুল ফিতরের পরপরই গত
শনিবার উপজেলা নির্বাচন না করার বিষয়ে জেলা ও উপজেলার দায়িত্বশীল নেতাদের মাধ্যমে তৃণমূলে
মৌখিকভাবে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ব্যাপারে জামায়াতের
নেতারা বলছেন, তারা পর্যালোচনা করে দেখেছেন যে, দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো
পরিবেশ নেই। জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে ভূমিকা
রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। যার সর্বশেষ প্রমাণ গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন।
দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অসংখ্য
রাজনৈতিক দল এ সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জন করেছে। এ অবস্থায় জামায়াতে ইসলামী উপজেলা
নির্বাচনে অংশ নিয়ে ‘অবৈধ সরকার’কে বৈধতা দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। তা ছাড়া নির্বাচনের
আগেই বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের হুমকি দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। এসব
বিষয়কে বিবেচনা করে উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত।
গতকাল জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি
জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী শুধু নয়, বাংলাদেশের কোনো গণতান্ত্রিক
দল উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। কারণ, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশের
জনগণ ভোট দিতে যায়নি। তারা একতরফা নির্বাচন বর্জন করেছে। সেই জনরোষ এখনো আছে। সুতরাং
যেসব কারণে আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছি, সেসব কারণেই উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছি
না। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী জনগণের জন্য রাজনীতি করে। জনগণের প্রতি জামায়াতের দায়বদ্ধতা
আছে। দায়িত্বশীল দল হিসেবে জামায়াত জনমতকে উপেক্ষা করে নির্বাচনে যেতে পারে না’।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০১৪ সালের জাতীয়
সংসদ নির্বাচনের পরপর অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামায়াতের শতাধিক প্রার্থী
উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলাসহ) হন। ২০০৯ সালের নির্বাচনে ২৪টি উপজেলায়
চেয়ারম্যানসহ ৩৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলাসহ) নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে দলীয়
প্রতীকে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে জামায়াত। দলের নিবন্ধন না থাকলেও স্বতন্ত্র
প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছিল জামায়াত নেতাদের। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তে সেবার কেউ নির্বাচনে
অংশ নেননি।
উপজেলা নির্বাচন জামায়াত বিএনপি
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-কে বিজয়কে সুসংহত করার পথে
প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে সন্ত্রাসী এ অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আজ বুধবার (১৭ এপ্রিল) ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডি
৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কাদের বলেন, বিজয়কে সুসংহত করার পথে প্রতিবন্ধকতা হলো বিএনপির
মতো সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী অশুভ শক্তি। এ শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। আজকের এ দিনে
বিএনপিসহ স্বাধীনতাবিরোধী সন্ত্রাসী শক্তি সব অপশক্তিকে, যারা আমাদের বিজয়কে সংহত
করার প্রতিবন্ধক, এদের আমরা পরাজিত করব, পরাভূত করব, প্রতিহত করব। আমাদের লড়াইকে আমরা
এগিয়ে নিয়ে যাব।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি তো কোনো দাবিকে বিচ্ছিন্নভাবে
কিছু বলতে পারি না। মন্ত্রিসভা আছে, প্রধানমন্ত্রী আছেন। তারা এত বছর পর দাবিটা তুলছেন,
কেন তুলছেন এটাও জানার দরকার আছে।
তিনি আরও বলেন, আজকের এই দিনে আমরা শপথ নেব মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ধারাবাহিক
লড়াইয়ে আমরা এগিয়ে যাব। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বয়ে নিয়ে
যাব, এটাই হোক আমাদের শপথ।
এর আগে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার স্থপতি
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর
প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বিএনপি মুজিবনগর দিবস ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে যে, মন্ত্রী এবং এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে কোন প্রার্থীকে সমর্থন করতে পারবে না। তাদেরকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই রকম বার্তা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে লিখিত নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত নির্দেশনা উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করাতে মাঠে নেমেছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নির্বাচনী এলাকাতেই এমপিরা প্রার্থীর নাম ঘোষণা করছেন।
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে পিছু হটল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির যেসব নেতা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ছিলেন, এরই মধ্যে তাদের প্রার্থী না হতে বারণ করা হয়েছে। জামায়াতের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে আলোচনার পর উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার এ সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্ত স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতারা তৃণমূলে জানিয়ে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদের প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।