নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৮ পিএম, ১১ অগাস্ট, ২০২০
সাবের হোসেন চৌধুরী। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে রাজনীতিতে তাঁর নামটিও কেউ জানতো না। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার জন্য যতগুলো চমক দেখিয়েছিল তাঁর মধ্যে অন্যতম চমক ছিল সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো তরুন-আনকোরাকে মনোনয়ন দেওয়া। তাও আবার মতিঝিলের মতো নির্বাচনী এলাকা থেকে, যেখানে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মির্জা আব্বাস। এই সময়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন মোজাফফর হোসেন পল্টু, কিন্তু শেখ হাসিনা মোজাফফর হোসেন পল্টুকে না দিয়ে তরুণ ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিতে একেবারে আনকোরা সাবের হোসেন চৌধুরীকে মনোনয়ন দেন। এই মনোনয়ন দেওয়ার পর সাবের হোসেন চৌধুরী বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে প্রথম ব্যতিক্রমী নির্বাচনী প্রচার অভিযানের সূচনা করেন। যে নির্বাচনী প্রচার এখনো বিরল ব্যতিক্রমধর্মী। এর সঙ্গে তুলনা করা যায় শুধুমাত্র প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের মেয়র নির্বাচনের প্রচারণার সঙ্গে।
সাবের হোসেন চৌধুরী নির্বাচনী প্রচারণায় রাজনীতির বাইরের বিশেষ করে ক্রীড়াবিদ, শিল্প-সংস্কৃতির বিভিন্ন মানুষকেও যুক্ত করেন। নিজে বিনয়ী চেহারায় নিষ্পাপ ভাব এবং সুন্দর বাচনভঙ্গির কারণে ঐ নির্বাচনে তিনি বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মির্জা আব্বাসকে পরাজিত করেন এবং রাজনীতিতে অভিষিক্ত হন। তাঁর রাজনীতির অভিষেকটা যেন ছিল এলাম-দেখলাম-জয় করলামের মতো। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরপরই তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির পদে নিয়োগ পান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই ক্রীড়া সংগঠক সাবের হোসেন চৌধুরী বাংলাদেশের ক্রিকেটের দন্ডমুন্ডের কর্তা হন। তাঁর হাত ধরেই দেশের ক্রিকেট অনেকগুলো সাফল্য অর্জন করে, যার মধ্যে টেস্ট ক্রিকেট মর্যাদা প্রাপ্তি অন্যতম। এই সময়ে উপমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী। রাজনীতিতে অভিষিক্ত হয়ে একবারে এতকিছু আওয়ামী লীগের হয়ে অন্য কেউ পেয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
অনেকে মনে করতেন সাবের হোসেন চৌধুরী আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতাদের অন্যতম এবং আওয়ামী লীগে তিনি অনেক দূরে যাবেন। বিশেষ করে যখন শেখ হাসিনার স্নেহ এবং ভালোবাসা তাঁর জন্যে ছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পরে সাবের হোসেন চৌধুরী দল ছেঁড়ে যাননি, বরং দলের মধ্যে তাঁর অবস্থান আরো শক্তিশালী এবং সুদৃঢ় করেছেন। এই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আরো নৈকট্য হয়েছে। সাবের হোসেন চৌধুরীকে শেখ হাসিনা তাঁর রাজনীতিক সচিব হিসেবে নিয়োগ দেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ দেন। এই সময় আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারক হয়ে ওঠেন সাবের হোসেন চৌধুরী। এই কারণেই রাজনীতিতে অতিথি সাবের হোসেন চৌধুরী অনেক নির্যাতনও ভোগ করেছেন। তাঁকে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। যে মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সেই মামলা এখনো বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম প্রহসন। তিনি তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সফরে যাচ্ছিলেন এই সময়ে ফেরি থেকে কাঁটা চামচ এবং প্লেট চুরির মামলায় সাবের হোসেন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিএনপি-জামাত বাংলাদেশের রাজনীতিতে যত প্রহসন এবং অপকর্ম করেছে তাঁর একটি বড় উদাহরণ সম্ভবত এটা।
সাবের হোসেন চৌধুরী আওয়ামী লীগকে ২০০১ পরবর্তী সময়ে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে নানামুখী তৎপরতা করেছিলেন। আওয়ামী লীগকে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করায় তিনি বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছিলেন। কিন্তু এরপরেই শুরু হয় ওয়ান ইলেভেন ঝড় এবং ওয়ান ইলেভেনের পর হঠাৎ করেই সাবের হোসেন চৌধুরী বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন। এখনো স্পষ্ট নয় সাবের হোসেন চৌধুরীর কি হয়েছিল, তিনি কি সংস্কারপন্থি হয়েছিলেন? তিনি কি শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন? নাকি তাঁর অন্যকোন চিন্তা ছিল? বিষয়টা যেমন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও স্পষ্ট করেননি, তেমনি সাবের হোসেন চৌধুরীও এই নিয়ে কখনো কথা বলেননি। তবে সাবের হোসেন চৌধুরী একাধিকবার বলেছেন যে, তিনি কখনো সংস্কারপন্থি ছিলেন না। তবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে দেখা যায় যে, সাবের হোসেন চৌধুরী ভারতের সোনিয়া গান্ধী মডেল বাংলাদেশে চালু করার জন্য কারো কারো সঙ্গে দেনদরবার করেছিলেন বলে জানা যায়। বিশেষ করে তৎকালীন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর সঙ্গে সাবের হোসেন চৌধুরীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল সেই সময়ে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গেও। এই বাস্তবতায় সাবের হোসেন চৌধুরী আসলে শেখ হাসিনার মুক্তি বিলম্বিত করতে চেয়েছিলেন নাকি শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন তা এক বড় প্রশ্ন।
কিন্তু সাবের হোসেন চৌধুরী তারপরেও ভাগ্যবান। ২০০৮ সালে যারা সংস্কারপন্থী ছিলেন তাঁদের অনেকেই মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন পাননি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, খ ম জাহাঙ্গীরের মতো অনেকেই। কিন্তু সাবের হোসেন চৌধুরী তারপরেও মনোনয়ন পেয়েছিলেন এবং এখনো আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবে আছেন। এর মধ্যে সাবের হোসেন চৌধুরীকে ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্ট কমিটির সহ সভাপতি পদেও মনোনয়ন দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা এবং সেখানে তিনি বিজয়ীও হয়েছিলেন।
কাজেই সাবের হোসেন চৌধুরীর রাজনৈতিক অবস্থান রহস্যাবৃত। শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর দুরত্ব আছে, কিন্তু তারপরেও তিনি আওয়ামী লীগে আছেন। তিনি যেন আওয়ামী লীগে ধূমকেতুর মতো। হঠাৎ আলো ছড়িয়েছিলেন, এখনো তাঁর আলোর ছটার রেখা দৃশ্যমান। তিনি রাজনীতিতে টিকবেন কিনা তা ভিন্ন প্রশ্ন, তবে রাজনীতিতে তাঁর আগ্রহ আছে কিনা সেই প্রশ্ন কেউ করতেই পারে।
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া
হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত
নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান
প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে
আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক
স্থগিত হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন,
‘স্বজন’ প্রশ্নে দলের সিদ্ধান্ত না মানলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও দলীয় এমপির বিরুদ্ধে
সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কেড়ে নেওয়া হতে পারে তাদের দলীয় পদ-পদবি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের মনোনয়নও অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। সব মিলিয়ে
এ ইস্যুতে দলীয়ভাবে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে স্বজনকে
প্রার্থী করা নিয়ে দলের মন্ত্রী ও এমপিদের এরই মধ্যে কড়া ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক
অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো নিকটাত্মীয়
অংশ নিতে পারবেন না। এ বিষয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয়
নির্দেশনা দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে
আনার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদেরও তাগিদ দেন।
এরপর সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠক থেকেই নিকটাত্মীয়দের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ও শাজাহান
খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ টাঙ্গাইলের
ধনবাড়ীতে এবং শাজাহান খান এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান মাদারীপুর সদর উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন।
এ ছাড়া নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরীর সঙ্গেও কথা বলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার
ইশরাক সাবাব চৌধুরী সুবর্ণচরে প্রার্থী হয়েছেন।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরী বলেন, উপজেলা নির্বাচন থেকে তার ছেলেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দলের সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কথা বলেছেন। তিনি তাকে ঢাকায় ডেকেছেন।
তবে তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
নৌকা প্রতীক পাওয়ার পরও প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করেছিলেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের
সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম। এ বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হলেও তিনি সুবিচার
পাননি। এ জন্যই তার ছেলে প্রার্থী হয়েছেন।
গতকাল দলের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে চার
বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, এস এম কামাল হোসেন এমপি,
মির্জা আজম এমপি, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এবং দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া
উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকজন মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে প্রার্থী
করানোর বিষয় নিয়ে অল্পবিস্তর আলোচনা হয়। সেই সঙ্গে দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে নিকটাত্মীয়দের
প্রার্থী করানোর বিষয় নিয়ে নেতারা বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিভিন্ন উপজেলায় সাংগঠনিকভাবে
অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেন নেতারা।
বৈঠকে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রংপুর,
চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের তৃণমূল নেতাদের বৈঠকে সাংগঠনিক বিরোধ নিষ্পত্তির তাগিদ দেওয়া
হলেও কার্যত তা হয়নি। উল্টো উপজেলা নির্বাচন নিয়ে গৃহদাহ পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়েছে।
তৃণমূল নেতাকর্মী দ্বন্দ্ব-বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। এ জন্য কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেন কেন্দ্রীয়
নেতারা। ওই সময়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের
পূর্বনির্ধারিত সাংগঠনিক বৈঠক স্থগিত করার তথ্য জানান। সিলেট ও বরিশাল বিভাগের বৈঠকের
দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ হয়নি।
দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব
বড়ুয়া জানিয়েছেন, ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয়
কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হওয়ার কথা। এ জন্য ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক
স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার রাজশাহী এবং ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক হওয়ার
কথা ছিল। ঢাকা বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল দুই দিনে। প্রথম দিন ২৭ এপ্রিল এবং শেষ দিন
৪ মে।
এদিকে গতকালের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ
নেওয়া তিন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন থেকে
আত্মীয়স্বজনকে সরিয়ে নিতে মন্ত্রী ও দলের এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর
নির্দেশের কথা তাদের জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। এর পর থেকে তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী
ও এমপির সঙ্গে কথা বলছেন। যেসব উপজেলায় মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে
দেওয়া হবে।
আগামী ৮ মে অনুষ্ঠেয় প্রথম পর্বের ১৫০
উপজেলা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মন্ত্রী ও দলীয় এমপির আত্মীয়স্বজন চেয়ারম্যান পদে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে নতুন করে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে।
নাটোরের সিংড়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে
প্রথমে মারধর ও পরে অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় সন্দেহ করা হচ্ছে ডাক, টেলিযোগাযোগ
ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল
হাবীব রুবেলকে।
এদিকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা
জানিয়েছেন, এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনায় খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের
নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, আগামী ২ মে সংসদের অধিবেশন
শুরু হবে। ওই অধিবেশন চলাকালে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক থেকে উপজেলা নির্বাচন
নিয়ে এমপিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, নির্বাচনী এলাকায় প্রভাব
বাড়াতে কয়েকজন মন্ত্রী ও দলের এমপি নিকটাত্মীয় ছাড়াও নিজস্ব লোক তৈরির জন্য পছন্দের
প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। তাই শুধু সন্তান, পরিবার কিংবা আত্মীয়স্বজন
নয়; মন্ত্রী এবং দলের এমপিদের প্রকাশ্যে বা গোপনে উপজেলা নির্বাচনে সম্পৃক্ত না হওয়ার
কড়া নির্দেশনা দেওয়া হবে।
তবে দলীয়ভাবে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও
মন্ত্রী ও দলীয় এমপির অনেকে তা মানবেন না বলে আভাস মিলেছে। এরই মধ্যে অনেক উপজেলায়
মন্ত্রী ও দলের এমপির নিকটাত্মীয়রা প্রার্থী হয়েছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে লড়ছেন
মাজহারুল ইসলাম সুজন এমপির দুই চাচা মোহাম্মদ আলী ও সফিকুল ইসলাম
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন সাহাদারা মান্নান এমপির ছেলে শাখাওয়াত হোসেন সজল। একই জেলায় সোনাতলায় এমপির ভাই
মিনহাদুজ্জামান লিটন
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় নির্বাচন করছেন
আলী আজগার টগর এমপির ভাই আলী মুনসুর
নরসিংদীর পলাশে লড়ছেন ডা. আনোয়ারুল
আশরাফ খান দিলীপ এমপির শ্যালক শরীফুল হক
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রার্থী হয়েছেন
শাহাব উদ্দিন এমপির ভাগনে সোয়েব আহমদ
নোয়াখালীর হাতিয়ায় লড়ছেন মোহাম্মদ আলী
এমপির স্ত্রী ও দুইবারের সাবেক এমপি আয়েশা ফেরদাউস ও ছেলে আশিক আলী।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ড. আব্দুর রাজ্জাক
এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ
মাদারীপুর সদর উপজেলায় শাজাহান খান
এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান প্রার্থী হয়েছেন
এ ছাড়া ধাপে ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে অনেক মন্ত্রী-এমপির নিকটাত্মীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক
লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আগামীকাল আজ শুক্রবার।
১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল আজকের এদিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কৃষক লীগের ৫২ বছর পূর্তি
উপলক্ষে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধু কৃষক নেতা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতকে
কৃষক লীগের কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেন। বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনায় ব্যারিস্টার বাদল রশিদকে
সভাপতি ও আব্দুর রউফকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠিত হয়।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কৃষক
লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলে কৃষিবিদ সমীর চন্দকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম
স্মৃতিকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
কৃষক লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের সভাপতি কৃষিবিদ
সমীর চন্দ দলের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান।
এসময় তিনি বলেছেন, দেশের কৃষির উন্নয়ন এবং কৃষকের স্বার্থ রক্ষার
জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ কৃষক
লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে কৃষক লীগ কৃষকদের সংগঠিত করা, তাদের দাবি আদায়
এবং দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে আসছে।
আজ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৬টায় সংগঠনটির ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
উপলক্ষে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা এবং দলীয়
পতাকা উত্তোলন। এছাড়াও সকাল ৭টায় মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে ধানমন্ডির ৩২ পর্যন্ত শোভাযাত্রা।
সকাল সাড়ে ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ
হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর কর্মসূচি রয়েছে।
এদিন বিকাল ৩টায় কৃষি ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্রের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী। আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করবেন কৃষক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু।
কৃষক লীগ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ব্রিটিশ হাইকমিশনার বিএনপি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শামা ওবায়েদ সারাহ কুক
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন মন্ত্রী-এমপি আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক স্থগিত হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। আজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনাটি জারি করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্য স্বজনরা প্রার্থী হতে পারবেন না। এটি আওয়ামী লীগ সভাপতির একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল পর্যন্ত যে পরিবারতন্ত্র ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল এবং বিভিন্ন জায়গায় যে জমিদারি প্রথা তৈরির শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল সেটা প্রতিরোধের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতির এই উদ্যোগ তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।