নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৮ পিএম, ১১ অগাস্ট, ২০২০
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। জাতির পিতাকে হত্যার পেছনে যেমন দেশি চক্রান্ত ছিল, তেমন ছিল আন্তর্জাতিক চক্রান্ত। এখন প্রাপ্ত বিভিন্ন দলিল এবং নথিপত্র দেখে স্পষ্ট হওয়া যায় যে, এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানতো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু মহল এই ব্যাপারে মদদও ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ভারতের ভূমিকা কি ছিল? ভারতের অবস্থান কি ছিল? তারা কি জানতো?
আমরা যদি লক্ষ্য করি যে, ১৫ আগস্ট দিনটি এমনভাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল, যেটা আত্মস্বীকৃত খুনীরা একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছে যে, এটা ভারতের স্বাধীনতা দিবস এবং পুরো ভারত সেটা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। এরকম একটি সময় বেছে নেওয়া থেকেই বোঝা যায় যে, ভারত একটি বড় মাথাব্যথা ছিল এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। খুনীরা বিভিন্ন স্থানে বলেছে যে, তারা আশঙ্কা করে ২৫ বছরের চুক্তি অনুযায়ী ভারত যদি বাংলাদেশে সেনাবাহিনী পাঠায় এবং সম্ভবত এই কারণেই তারা ১৫ আগস্ট বেছে নিয়েছিল।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, ভারত যে পুরো বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারে ছিল এমন নয়। বরং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের যে সকল কর্মকর্তারা ছিলেন তাঁদের অন্তত দুটি সাক্ষাৎকার থেকে পাওয়া যায় যে, তাঁরা বিষয়টি জানতেন এবং তাঁরা বিষয়টি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহলকে অবহিতও করেছিলেন। তা বঙ্গবন্ধুর কান পর্যন্তও গিয়েছিল, যা বঙ্গবন্ধু পাত্তা দেননি। কিন্তু বিতর্ক এখানেই শেষ হয়না। কারণ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হবে বিষয়টি যদি তারা জেনে থাকেন সেটি তারা দিল্লীতে অবহিত করেছিলেন কিনা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেছিলেন কিনা? এই উত্তরে দুই রকমের তথ্য পাওয়া যায়। এই দুই রকম তথ্যের মধ্যে একটি তথ্য হলো, দিল্লী দূতাবাসকে তারা অবহিত করেননি। দ্বিতীয় তথ্য হলো, তারা অবহিত করেছিলেন। কিন্তু বিষয়টিকে যতটা গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে অবহিত করার দরকার ছিলো তত গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে তারা অবহিত করেননি। বিষয়টিকে আসলে তারা আমলে না নেওয়ার মতোই একটি তথ্য হিসেবে অবহিত করেছিলেন। এটি কি ইচ্ছাকৃত ছিলো? নাকি এটি একটি গোয়েন্দা ভুল ছিলো সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর একটি গোপন প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ঘটনাকে একটি গোয়েন্দা বিপর্যয় বলে উল্লেখ করেছে। তারা মনে করছেন যে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সঠিক এবং বস্তুনিষ্ট তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারেনি। আবার কেউ কেউ মনে করে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার একটি অংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং খুনীদের সঙ্গে তথ্য আদান প্রদান করেছিল। সাম্প্রতিক সময় এ ধরণের কিছুর তথ্য পাওয়া যায়। তবে বিচ্ছন্নভাবে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা বা রাজনৈতিক মহলের কেউ কেউ এই হত্যকাণ্ড বা বঙ্গবন্ধুকে হটানোর ক্ষেত্রে কিছু গৌণ ভূমিকা পালন করলেও পুরো ভারতের জনগণ এবং সরকার এই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে অন্ধকারে ছিলো। তারা এই হত্যকাণ্ডকে সমর্থন করেনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিশ্লেষণ করলেই দেখা যায় যে, ভারত পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডকে কখনোই মেনে নেয়নি।
পঁচাত্তরের বিয়োগান্তক ঘটনার পর নানা রকম ক্ষমতার পালাবদলের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন এক নায়ক জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান দু’দফা ভারতে গিয়েছিলেন। প্রথমবার তিনি গিয়েছিলেন ১৯৭৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর। সেই সময় একদিনের সফরে তিনি প্রায় অনাহুতর মতো কাটিয়েছিলেন। তার মূল লক্ষ্য ছিলো ভারতের আস্থা অর্জন করা। কিন্তু সেটিতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।
দ্বিতীয় দফায় তিনি সফর করেছিলেন ১৯৮০ সালের ২১ জানুয়ারি, ইউনোডোর সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে। এই সফরটি ছিলো দুই দিনের। ওই সফরেও তিনি ভারতের সঙ্গে তেমন কোন সখ্যতা গড়ে তুলতে পারেননি। এই সময় ভারতের রাজনীতিতে একটা টালমাতাল অবস্থা ছিলো। ১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধীর পতন হয়। এরপর মোরারজি দেসাই এবং চরণ সিং পর্যায়ক্রমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন। অস্থির রাজনীতির সুযোগের কারণে ভারত বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের রাজনীতিতে নজর দিতে পারেনি বলে অনেকে মনে করে। তবে একটা কথা অনস্বীকার্য, এই হত্যাকাণ্ডে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়েছিল ভারতের সাধারণ জনগন এবং সরকার। যাদের অত্যন্ত প্রিয় ছিলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। আর সে কারণেই পঁচাত্তরের এই ঘটনা ভারতের জনগন কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি। আর সে কারণেই ভারতের রাজনৈতিক মহলের ওপর একটা চাপ ছিলো যে, বঙ্গবন্ধুর হত্যকারীদের সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিকদলগুলো প্রকাশ্যে সু-সম্পর্ক গড়ার সাহস পায়নি। তবে এই সময় জাতির পিতার কন্যাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিলো। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকিসহ বহু আওয়ামী লীগের নেতা সে সময় ভারতে আশ্রয় পেয়েছিলো। তাই পঁচাত্তরে ভারতের ভূমিকা নিয়ে যে বিতর্ক, সেই বিতর্ক সমাধানের জন্য প্রয়োজন আরো বেশি বস্তুনিষ্ট গবেষণা এবং ওই সময়কার তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ।
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া তারেক জিয়া বিএনপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
মন্তব্য করুন
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
তীব্র গরম মির্জা আব্বাস বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
ড. আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন শাজাহান খান
মন্তব্য করুন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনই দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি পরামর্শ দিয়ে আসছেন এমন গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কখনও মুখ খুলেননি বিএনপির কেউই। তবে এবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি জানিয়েছেন বিএনপি থেকে বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়াকে বাদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে দল ভাবছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে দলের এমন ভাবনার কথা জানান বিএনপির এই নেতা।
উপজেলা নির্বাচন থেকে কঠোর অবস্থান থেকে ইউটার্ন নিলো বিএনপি। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আপাতত যারা উপজেলা নির্বাচন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে সব কিছু নির্ভর করবে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। যারা পরাজিত হবে তাদের ওপর নেমে আসবে শাস্তির খড়গ। আর যারা বিজয়ী হবেন তাদের বিষয়টি উপেক্ষা করা হবে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে ফেঁসে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। তবে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেও নীতিমালার কারণে বেঁচে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।