নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০
আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছে এবং তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার আমলাতন্ত্রের সঙ্গে একটি সখ্যতা তৈরি করেছে। বিশেষ করে আমলাদের পদোন্নতি দেওয়া, নিয়মিতভাবে বিসিএস পরীক্ষা করা এবং বেতন বৃদ্ধির কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আওয়ামী লীগ সরকারের উপর অত্যন্ত সন্তুষ্ট। একসময় যারা বিএনপিপন্থী আমলা হিসেবে পরিচিত তারাও এখন আওয়ামী লীগ বন্দনায় ব্যস্ত। গত কিছুদিন ধরে নানা কারণে প্রশাসনের মধ্যে অস্থিরতা দানা বেঁধে উঠেছে এবং বিএনপি-জামাতপন্থী যে সমস্ত প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা কর্মকর্তারা রয়েছে তারা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রশাসনে অসন্তোষ তৈরি করার চেষ্টা করছেন বলে একাধিক সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে। পাঁচ কারণে প্রশাসনে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এই কারণগুলো হলো-
ওয়াহিদার উপর হামলা নিয়ে বিভ্রান্তি
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের উপর হামলা করা হয়। তাঁর বাসভবনে গিয়ে দুর্বৃত্তরা তাকে মারার চেষ্টা করে। গুরুতরভাবে আহত হন তিনি এবং তাঁর পিতা। এই ঘটনার পরপরই এটাকে চুরির ঘটনা বলার চেষ্টা করা হয়েছিল আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে। এটা নিয়ে প্রশাসনের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তীতে পুলিশের পক্ষ থেকে আবার বলা হয়েছে যে, একজন কর্মচারীর ব্যক্তিগত রাগ এবং ক্ষোভের কারণেই এই হত্যাচেষ্টা সংগঠিত করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তার কাছে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়, তারা মনে করছেন যে, এটার পেছনে আরও বড় কারণ রয়েছে। কারণ শুধুমাত্র টাকা চুরির দায়ে একজন কর্মচারীকে স্বাভাবিকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে তিনি রেগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপর হামলা করবেন তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ প্রশাসনে এই ধরণের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হরহামেশাই ঘটে, এটা একজন নিম্ন পর্যায়ের কর্মচারীর কাছে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা একটা বিরাট পদ। কাজেই তিনি এই ধরণের ঘটনা ঘটানোর সাহস পাবে তা মানতে নারাজ প্রশাসনের অনেকেই। তারা মনে করছেন, এর পেছনে আরও বড় ধরণের কারণ আছে। যেখানে অনেক ক্ষমতাবানদের হাত থাকতে পারে। এটি পুর্নাঙ্গ তদন্ত হওয়া দরকার। পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আগে এ ধরণের মন্তব্য করা সমীচীন নয় বলে তারা মনে করছেন। এটি নিয়ে প্রশাসনের মধ্যে এক ধরণের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।
পদোন্নতি নিয়ে অসন্তোষ
বর্তমান সরকার তিন মেয়াদে যেভাবে প্রশাসনে পদোন্নতি দিয়েছেন তা নজিরবিহীন ও বিরল। এখন বাংলাদেশে অতিরিক্ত সচিবের সংখ্যা সর্বাধিক। নিয়মিতভাবেই পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই পদোন্নতি নিয়ে আমলাদের একটি বড় অংশ সন্তুষ্ট থাকলেও, ইদানীং এই নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। এই অসন্তোষ তৈরির প্রধান কারণ হল সচিব পর্যায়ে যাদেরকে দেওয়া হচ্ছে, তাদের মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে দেওয়া হচ্ছে না বলে কেউ কেউ অভিযোগ করছেন। রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া হচ্ছে বলে সচিবালয়ে এখন বড় ধরণের আলোচনা হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য পদোন্নতিগুলোর ক্ষেত্রেও মেধা যোগ্যতা যাচাই করা হচ্ছে না এ রকম কথা হরহামেশাই বলা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইকনোমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরণের অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। আর এই সব নিয়ে প্রশাসনে নতুন করে অসন্তোষ এবং অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
মাঠ প্রশাসনের নিরাপত্তা
দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিশেষ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইত্যাদি কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছিলো। ওয়াহিদা খানমের আক্রান্ত হওয়ার পর এটি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এটি নিয়েও এক ধরণের অস্বস্তি তৈরি হয়েছে প্রশাসনে।
রাজনৈতিক চাপ
রাজনৈতিক চাপ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনের সঙ্গে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের একটা ঠাণ্ডা লড়াই ছিল। এখন ওয়াহিদা খানমের ঘটনার পর তা নতুন করে সামনে এসেছে। প্রশাসনের মধ্য থেকে রাজনৈতিক চাপ মুক্তভাবে প্রশাসন পরিচালনার দাবিটি সামনে চলে এসেছে।
পুলিশের উপর নিয়ন্ত্রণ
ওয়াহিদা খানমের ঘটনার পর সবচেয়ে বড় এবং বেশি করে যে বিষয়টি আলোচিত হয়েছে, সেটি হচ্ছে পুলিশ কার? একটা সময় ছিল যখন পুলিশ জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কর্তৃত্বে পরিচালিত হত। কিন্তু এখন পুলিশ আলাদা, স্বাতন্ত্র্যভাবে কাজ করে। এটির অবসান চান প্রশাসন কর্মকর্তারা। তারা মনে করে পুলিশ বাহিনীকে প্রশাসনের অধীনে আনা উচিত এবং এই নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা কথাবার্তাও বলছেন।
আর এইসব কারণেই প্রশাসনে নতুন করে এক ধরণের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। যেটির উপর অবিলম্বেই নজর দেওয়া দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।