নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৯ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০
রাস্তার আন্দোলনে তাকে দেখা যায় না, মিছিল-মিটিংয়ে তিনি খুব একটা আগ্রহী নন। বরং তাঁর বাড়ির ড্রয়িং রুম সবসময় ঝলমলে থাকতো, সন্ধ্যা হলেই বিভিন্ন রাষ্ট্রদূত, দূতাবাস, উন্নয়ন সংস্থার বড় বড় কর্মকর্তার পদচারণায় মুখরিত হয়। এই করোনা সঙ্কটের আগ পর্যন্ত তাঁর ড্রয়িং রুম ছিল বিদেশী রাষ্ট্রদূত বা দেশি-বিদেশি গণ্যমান্য ব্যক্তিদের আড্ডায় জায়গা এবং এখানেই রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা, রাজনীতির গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ, ককটেল বা নৈশ ভোজের সঙ্গে। আর বিএনপিতে ড্রয়িং রুম রাজনীতিতে এখন শীর্ষ ব্যক্তি তিনি। তাঁর নাম ড. আব্দুল মঈন খান।
রাজপথের আন্দোলন না করলেও শুধুমাত্র ড্রয়িং রুম রাজনীতির কারণে তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। ড. আব্দুল মঈন খানের সঙ্গে বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তিনি তাঁদের মাঝেমাঝেই দাওয়াত দিয়ে খাওয়ান। তাছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, দেশের বিভিন্ন সুশীল এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও তাঁর ড্রয়িং রুমের সন্ধ্যার ককটেল আর চিয়ার্স পার্টির অতিথি হন। আর সেখানেই দেশের রাজনীতি, রাজনীতির গতিপ্রকৃতি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেন। আর ড্রয়িং রুম পলিটিক্সের জন্যেই বিএনপিতে তিনি অপরিহার্য। ড. মঈন খান রাজনীতিতে এসেছেন একজন বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ধারা থেকেই। তিনি একসময় বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। যদিও পৈতৃক সূত্রে তাঁর রাজনৈতিক গতিধারা স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেই প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়। বিএনপির রাজনীতিতে এসে তিনি নির্ভর করেছিলেন ড্রয়িং রুম রাজনীতির উপরে এবং আস্তে আস্তে ক্রমশ বিদেশি দূতাবাসগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন। তাঁর নির্বাচনী এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা থাকুক বা না থাকুক, আওয়ামী বিরোধী অবস্থান থাকার কারণে বিএনপির প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়াটা তাঁর জন্যে কঠিন বিষয় ছিলনা।
নির্বাচনে বিজয়ের পর ২০০১ সালে তিনি পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা পান। এই সময়ে তিনি মন্ত্রী হিসেবে যতটা না সফল ছিলেন তাঁর চেয়ে বেশি পারঙ্গম ছিলেন বিভিন্ন দূতাবাস এবং উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে গোপন সম্পর্কের কারণে। আর ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেন সরকার আসলে তাঁর ভূমিকা ছিল রহস্যময়। তিনি না ছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে, না ছিলেন সংস্কারপন্থিদের পক্ষে। বরং এই সময়ে তাঁর উপরে অনেক কূটনৈতিকরাই আস্থাশীল ছিলেন, বিএনপি কি করবে না করবে ইত্যাদি খবরাখবর রাখার জন্যে। একজন কূটনীতিকের যেমন চরিত্র, মাঝামাঝি অবস্থানে থাকা, কোন পক্ষে না যাওয়া। সেরকম একটি অবস্থানে ওয়ান ইলেভেনের সময় দেখা গিয়েছিল ড. মঈন খানকে। তিনি যেমন একদিকে সংস্কারপন্থিদের ডাকে সাড়া দেননি, তেমনি অন্যদিকে খন্দকার দেলোয়ার হোসেন কিংবা রুহুল কবির রিজভিদের মতো নেতাদের পাশে গিয়েও দাঁড়াননি। তাঁর এই রহস্যময় অবস্থানের কারণেই ২০০৮ এর নির্বাচনের পর তিনি না ছিলেন সংস্কারপন্থি, না ছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে। কিন্তু এই সময় বিএনপিতে আন্তর্জাতিক বিষয় দেখভাল করার জন্যে ব্যক্তির সঙ্কট দেখা দেয়। বিশেষ করে মোর্শেদ খান নানারকম দুর্নীতির মামলায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। রিয়াজ রহমানের বিশেষ দু-একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার জন্যে এগোতে পারেননি, তখন ড. মঈন খান চলে আসেন পাদপ্রদীপে। এসময় মঈন খান একাধারে অর্থনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে যেমন কথাবার্তা বলা শুরু করেন, তেমনি বিদেশি দূতাবাসগুলোর কাছেও পছন্দের ব্যক্তিতে পরিণত হন। এভাবেই তিনি বিএনপির নীতিনির্ধারক হয়ে ওঠেন এবং এখান থেকেই তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। তাঁর মূল কাজ হলো বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে যোগাযোগ করা, তাঁদেরকে তথ্য সরবারহ করা। কিন্তু তিনি রাষ্ট্রদূতদের এজেন্ট নাকি বিএনপির পক্ষে কূটনীতিকদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন সে প্রশ্ন রয়েই গেছে। তবে বাংলাদেশে ড্রয়িং রুম রাজনীতিতে যারা আলোচিত, মাঠের রাজনীতি না করেও যারা নেতা হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ড. মঈন খান অবশ্যই অন্যতম।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।